বেশ কিছু বছর টালবাহানার পরে অবশেষে ডানকুনি উড়ালপুলের কাজ গতি পেয়েছে। নির্মানকারী সংস্থার দাবি, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই এই উড়ালপুল ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।
হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায় অহল্যাবাঈ রোডের উপরে গুরুত্বপূর্ণ এই লেভেল ক্রসিংয়ের উপর উড়ালপুল না থাকায় বছরের পর বছর ধরে যানজটে হাঁসফাঁস দশা এই শিল্পশহরের। বিভিন্ন তরফের দীর্ঘদিনের দাবিকে মান্যতা দিয়ে ২০০৫ সালে শুরু হয় ৬০০ মিটার লম্বা এবং ৮ মিটার চওড়া এই উড়ালপুল নির্মাণের কাজ। ঢাকঢোল পিটিয়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিল। রেল এবং রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে কাজটি সে সময়ে শুরু হয়। কিন্তু তারপর থেকে বিভিন্ন কারণে বারে বারেই হোঁচট খেয়েছে এই প্রকল্প। |
কাজের শুরুতেই এক শ্রেণির দোকানদারদের সঙ্গে বিতর্ক-বিবাদের জেরে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই প্রকল্প। সেই ঝামেলা মেটাতে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে যায়। উড়ালপুল তৈরির জন্য ওই প্রকল্পের পাশে যে সব দোকান সরিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী ভাবে দোকানঘর করে দেয় ডানকুনি পুরসভা। সেই সমস্যার সমাধান হতে না হতেই প্রকল্প এলাকার মধ্যেই কংগ্রেসের একটি পার্টি অফিস সরানোর ব্যাপারে ওই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব অনঢ় মনোভাব নেওয়ায় ফের গোল বাধে। কার্যত বন্ধ হয়ে যায় কাজ। শেষমেশ, কংগ্রেসও চাপে পড়ে পার্টি অফিস নিজেরাই সরিয়ে নেয়। ফলে, ওই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে যাবতীয় জট খুলে যায়। এর পরেই গত কয়েক মাস ধরেই কাজে রীতিমতো গতি আসে।
নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রের খবর, উড়ালপুলটি তৈরিতে খরচ পড়ছে ১১ কোটি টাকা। কাজের সুবিধার্থে ওই জায়গায় অহল্যাবাঈ রোড একমুখী করে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, উড়ালপুল নির্মাণের জন্য মাটি কাটার ফলে কেএমডব্লিউএস-র পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি জায়গায়। ফলে, এলাকায় জলের সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশের নর্দমাও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এতে নিকাশি সমস্যা হচ্ছে। এ সব কারণে এলাকার বাসিন্দাদের কিছুটা অসুবিধা হলেও নির্মাণকারী সংস্থার কর্তারা আশ্বস্ত করছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে। কেন না, তত দিনে চালু হয়ে যাবে উড়ালপুলটি। যানজট সামাল দেওয়ার কাজে পুরসভা ১৩০ জন যুবককে পথে নামিয়েছেন। ওই যুবকেরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। তাতে, কিছুটা হলেও রেহাই মিলেছে।
নির্মাণকারী সংস্থার এক কর্তার দাবি, “ইতিমধ্যেই ৭০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে বাকি কাজ করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। অন্য কোনও বাধা না এলে চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই সাধারণের ব্যবহারের জন্য এই উড়ালপুল খুলে দেওয়া যাবে।”
নির্মাণকারী সংস্থার ওই আশ্বাসের সঙ্গে বাস্তব কতটা মেলে, এখন সেটাই দেখার। স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব চালু হোক বহু প্রতিক্ষিত এই উড়ালপুল। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে যানজট সমস্যা কলকাতার উপকন্ঠের এই শিল্পশহরের গতি রুদ্ধ করে রেখেছিল। এই উড়ালপুল ব্যবহার শুরু হলে সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। |