আন্দোলন ভেঙে দিয়ে কাজ শুরু কুড়ানকুলামে |
নিজস্ব প্রতিবেদন • চেন্নাই |
সোমবার জয়ললিতা সরকারের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর আজ বিক্ষোভের মধ্যেই জোরকদমে কাজ শুরু হয়ে গেল কুড়ানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অবশ্য কাল থেকেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তা রাখা হয়েছিল কুড়ানকুলাম ও সংলগ্ন এলাকায়। রুশ-ভারত যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা আশাপ্রকাশ করেছেন খুব শীঘ্রই প্রথম চুল্লিটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
প্রকল্পের অন্যতম কর্ণধার এম কাশীনাথ বালাজি বলেন, “আমাদের এক হাজার কর্মী আজ থেকেই কাজ শুরু করেছেন। অনেকটা সময় মাঝে নষ্ট হয়েছে। সেই ক্ষতি দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য আমরা সব রকম চেষ্টা করব।” বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন বালাজি।
কুড়ানকুলাম ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের আন্দোলনে ২০১১-র সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। কাল জয়ললিতা সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজে যাতে কোনও রকম বাধা না আসে সে জন্য রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা নজরদারি চালাচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা অহেতুক এলাকার মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। বরং তাঁরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে এলাকাবাসী কত উপকৃত হবেন। আন্দোলনকারীদের যে আর রেয়াত করা হবে না সে ইঙ্গিত অবশ্য স্পষ্ট। গত কাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ পরমাণু কেন্দ্রের কাছেপিঠেও ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি আন্দোলনকারীদের।
কালই কুড়ানকুলামে উন্নয়নের খাতে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজও ঘোষণা করেন জয়ললিতা। তামিলনাড়ু মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির হয় বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে কুড়ানকুলাম ও সংলগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়ি বানানো হবে, নৌকা মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে, নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে এবং জেলেরা যাতে মাছ জমা রাখতে পারেন সে জন্য হিমঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।
রাতারাতি রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তনকে ‘নাটক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ডিএমকে প্রধান এম করুণানিধি। তিনি বলেন, “উনি (জয়ললিতা) আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। অথচ এখন প্রতারণা করলেন তাঁদের সঙ্গে। রাতারাতি ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন। সবই নাটক!” আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে তা এলাকার মানুষের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। এমনকী ঘটতে পারে প্রাণসংশয়ও। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গত মাসের ২৯ তারিখেই বিশেষ বৈঠক করেন জয়ললিতা। তখনও তাঁদের আশ্বাস দেন প্রকল্পের ক্ষতিকারক দিকগুলি বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত কালের সিদ্ধান্তে অবশ্য সেই আশ্বাসের কোনও প্রভাব মেলেনি। রাজ্য সরকারের অবস্থানের আমূল পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনের আহ্বায়ক এস পি উদয়কুমার। তিনি বলেন, “পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের থেকে ক্ষতি সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজনই বোধ করছে না রাজ্য সরকার। কোনও বিপদ ঘটলে তার দায় তাঁরা অস্বীকার করতে পারবেন না।” বণিক মহলে অবশ্য খুশি হাওয়া। জয়ললিতা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দক্ষিণ ভারত বণিকসভার (এসআইসিসিআই) সভাপতি জওহর ভাদিভেলু বলেন, “বিদ্যুতের ঘাটতি কাটাতে অত্যন্ত সহায়ক হবে এই প্রকল্প।” |