স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ফের ‘আমরা-ওরা’র লড়াই। কলকাতা পুরসভার মেটারনিটি হোমগুলিতে অপারেশন থিয়েটার চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিল আগের বোর্ড। সেই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে পুরসভা পরিচালিত শহরের চারটি মেটারনিটি হোমেই কিনে ফেলা হয়েছিল হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, বয়েল্স অ্যাপারেটাস, অপারেশন লাইট, ফোটো থেরাপি মেশিন-সহ কয়েক লক্ষ টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি। নতুন পুরবোর্ডও অপারেশন থিয়েটার চালু করতে আগ্রহী। কিন্তু ‘ওদের’ জিনিস দিয়ে নয়। তাই ফের একই ধরনের সরঞ্জাম নতুন করে কেনা হচ্ছে। অথচ, পরিকাঠামোর বাকি ঘাটতিগুলি মেটানোর দিকে তাদের নজরই নেই বলে অভিযোগ।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলছেন, “ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য কর্মী ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ওটি-সহ একটি মেটারনিটি হোম চালাতে বছরে প্রায় দেড় থেকে দু’কোটি টাকা খরচ পড়বে। এই দিকটি না-ভেবেই তৎকালীন বোর্ড যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে। টাকা না-থাকায় কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই গার্ডেনরিচের মেটারনিটি হোমে ওটি চালু করব।”
পুরনো সরঞ্জামের কী হবে? অতীনবাবুর জবাব, “ওই সব পুরনো যন্ত্র অকেজো হয়ে গিয়েছে। ওগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।”
এত দিন ধরে কেন অব্যবহৃত পড়ে রইল যন্ত্রপাতি? মেয়র পারিষদের জবাব, “ও সব আগের বোর্ডের সিদ্ধান্ত। পুর-খাতের টাকায় কিছুই কেনা হয়নি। ওই সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল বিভিন্ন এমপি এবং এমএলএ ল্যাডের টাকায়। ফলে, পুরসভার নথিতে কোনও হিসেব নেই। আমরা নতুন করে সব করব।” |
অভিযোগ, এই ‘নতুন’-এর অপেক্ষা চলছেই। অবস্থা এমনই যে, সিজারের যন্ত্রপাতি থাকলেও সেই পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এখনও নেই। স্বাভাবিক প্রসব ছাড়া শিশুর জন্ম হয় না গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, চম্পামণি কিংবা দর্জিপাড়ার মেটারনিটি হোমগুলিতে। তাই সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই চিকিৎসকেরা ঝুঁকি না নিয়ে ‘রেফার’ করে দেন অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে।
সমস্যা শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়। অভিযোগ রয়েছে মেটারনিটি হোমগুলির স্বাভাবিক প্রসবের পরিষেবা নিয়েও। গার্ডেনরিচ মেটারনিটি হোমে চিকিৎসকের অভাব একটা বড় সমস্যা। অন্য দিকে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতের অব্যবস্থার কারণে চম্পামণির পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ধাপার বাসিন্দারা। পরিস্থিতি এমন যে, ধাপা সংলগ্ন বাসিন্দাদের বেশির ভাগ জানেনই না চম্পামণির নাম। তাই তাঁদের গন্তব্য নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পুরসভার তরফেও বাসিন্দাদের মধ্যে চম্পামণির প্রচারে কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। সরু খাড়া সিঁড়ি এখানকার আর একটি বড় সমস্যা। প্রসূতিদের দোতলায় তুলতে এর জন্য যথেষ্ট বেগ পেতে হয় বলে মানছেন কর্মী ও চিকিৎসকেরাই।
প্রতিটি মেটারনিটি হোমের শয্যা-সংখ্যা ১৮ থেকে ২০-র মধ্যে। শিশু-রোগের চিকিৎসক নেই। নবজাতক পরিচর্যা ইউনিট নেই। কিন্তু রোগীর চাপ আছে। এই সমস্যাগুলির সমাধানের কথা না-ভেবেই নতুন করে অপারেশন থিয়েটার চালুর কথা ভাবা হচ্ছে কেন? অতীনবাবুর জবাব, “আগের আমলে সমস্যা ছিল। আমরা আসার পরে সব কিছুরই উন্নতি হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার চালু হয়ে গেলে পরিষেবার মান নিয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।”
গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, চম্পামণি, দর্জিপাড়ার বাসিন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন, তাঁদের হাল বরাবরই এক। ভবিষ্যতেও যে ছবিটা খুব বেশি বদলাবে, এখনও তেমন আশা করছেন না কেউই। |