একটি লাইনের গেজ পরিবর্তন আর দু’টি ডবল লাইন। এ বারের রেল বাজেটে নদিয়ার প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। গত বছরের রেল বাজেটেও প্রতিশ্রুতি মিলেছিল বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের। তবে সেই সব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত নদিয়ার সাধারণ মানুষ। বিশেষত লালগোলা কৃষ্ণনগর শাখার পাগলাচণ্ডীতে পিপিপি মডেলে তিন হাজার বেডের পূর্ণাঙ্গ সুপার ফেসিলিটিজ হাসপাতাল, কৃষ্ণনগরে দ্বিজেন্দ্রলাল অডিটোরিয়াম, ডায়াগোনেস্টিক সেণ্টার ছাড়াও কৃষ্ণনগর স্টেশনে যাত্রী সুবিধার জন্য মাল্টি ফাংশানাল কমপ্লেক্স, রানাঘাটে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি এখনও বিশ বাঁও জলে।
বেঙ্গল রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পুণ্ডরীকাক্ষ কীর্তনিয়া বলেন, “নদিয়ার মানুষ আশাহত। আমরা নতুন কিছু তো পেলামই না বরং পুরোনো প্রতিশ্রুতিগুলোও আর বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।” পাগলাচণ্ডীর বাসিন্দা পুণ্ডরীকাক্ষবাবু আরও বলেন, “তিন হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী এ বার বাজেটের পরে তা বাস্তবায়িত হওয়ার কোনও আশা দেখছি না। একই ভাবে বাহাদুরপুর ও মুড়াগাছা স্টেশনকেও আদর্শ স্টেশন তৈরি করার আর কোনও আশা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।”
শুধু নিত্যযাত্রীরাই নয় হতাশ কৃষ্ণনগরের সাধারণ মানুষও। কৃষ্ণনগরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একাধিকবার মমতা বন্দোপাধ্যায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। শহরের মানুষও এই কবি ও নাট্যকারকে নিয়ে যথেষ্ট আবেগপ্রবণ। শহরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে একটি অডিটোরিয়াম তৈরিরও কথা হয়েছিল। কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “মানুষ বুঝে গিয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করার জন্য ওই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি যে এগুলি আর কোনও দিনই বাস্তবায়িত হবে না। মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।”
একই হতাশার ছবি রানাঘাটেও। রানাঘাটের বাসিন্দা প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য দুলাল পাত্র বলেন, “আগের রেলমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রানাঘাটে রেল হাসপাতালের আধুনিকীকরণের পাশাপাশি তাকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে। তৈরি হবে ডায়াগোনেস্টিক সেণ্টারও। কিন্তু এ বারেও কিছুই হল না। রানাঘাটের মানুষ আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।” সিপিএমের রানাঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক সনৎ সেনগুপ্ত বলেন, “কোনও প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হল না। মানুষ হতাশ। আমরা আন্দোলনে নামব।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও পলাশিপাড়ার বিধায়ক এসএম সাদি বলেন, “মুখোশ কিন্তু খসে পড়ছে। বিধানসভা ভোটের আগে যে ফাঁকা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।”
তবে জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ মানতে নারাজ। জেলা তৃণমূলের সভাপতি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার পাল্টা দাবি, “রেলের যে প্রকল্পগুলির কাজ চলছে সেগুলো বাস্তবায়িত হবেই, এমন কী আমাদের নেত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন তার সবক’টিই বাস্তবায়িত করা হবে। এ বারের বাজেটে রেলের ভাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। তাই যে কাজগুলি শুরু হয়নি নতুন রেলমন্ত্রী এসে সেগুলির উদ্যোগ করবেন।” তিনি আরও বলেন, “রেল বাজেট তো সবে ঘোষিত হয়েছে। এখনও অনেক সুযোগ আছে। ফলে হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।” |