|
|
|
|
|
|
|
শতবর্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান |
দাদামণি |
দু’দিন দু’রাত্রি ঘুম নেই, শোওয়া নেই, বিছানায় বসে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছেন অশোককুমার। কঠিন হাঁপানি রোগ। ‘হাটে বাজারে’ ছবির আউটডোর শুটিংয়ে এসে এই বিপত্তি। ভুটানের পাহাড় ঘেরা একটা ছোট্ট বসতি, শাম্চি, তাঁকে আর বৈজয়ন্তীমালাকে নিয়ে এসেছেন তপন সিংহ। কাজ শুরুর আগেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন অশোককুমার। অত কষ্টেও কৌতুকপ্রিয়তায় খামতি নেই, বলছেন ‘ডাক্তার ডাকো, আর ডাক্তার যদি না পাওয়া যায়, তা হলে একটা উকিল ডাকো, সে-ই এসে ইঞ্জেকশন দিক।’ তপনবাবু তখনকার মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে খবর পাঠালেন, তিনি পাঠিয়ে দিলেন ডা. মণি ছেত্রীকে। ওষুধে হাঁপানি কমিয়ে তাঁকে টানা দু’-তিন দিন বিশ্রাম নিতে বললেন ডা. ছেত্রী। পরের দিন ভোরবেলায় অন্য শিল্পীদের নিয়ে শুটিংয়ের তোড়জোড় করছেন তপনবাবু, দেখেন যে অশোককুমার সেজেগুজে তৈরি, বলছেন ‘সাফ সাফ বলছি, হয় আমাকে কাজ করতে দাও না হলে বম্বে পাঠিয়ে দাও।’ |
|
তপনবাবু তাঁর আত্মস্মৃতিতে লিখছেন ‘বিস্ময়ে লক্ষ করেছি, ক্যামেরা চলার আগে পর্যন্ত হাঁপানির টানে হাপরের মতো বুক ওঠানামা করছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যেই ক্যামেরা চালু হল... নিপুণভাবে অভিনয় করে গেলেন।’ (চলচ্চিত্র আজীবন, দে’জ)। ‘হাটে বাজারে’ দেখানো হচ্ছে নন্দন-এ, সঙ্গে ‘পরিণীতা’, ‘হাওড়া ব্রিজ’, ‘ছোটি সি বাত’, ‘অনুরাগ’, ‘আশীর্বাদ’, ২৭-২৯ মার্চ। যেহেতু বলিউডের এই প্রিয় ‘দাদামণি’র জন্ম ১৯১১-র ১৩ অক্টোবর, তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করবে এ-ক’দিন তপন সিংহ ফাউন্ডেশন, সঙ্গে নন্দন-ও। ২৭-৩১ মার্চ একটি প্রদর্শনীও চলবে নন্দন-এ, তাঁর অভিনীত ছবির স্টিল, পোস্টার, পাবলিসিটি ব্রোশিয়োর, গানের বুকলেট, রেকর্ড, স্ক্রিপ্ট, কসটিউমস/প্রপস ইত্যাদি নিয়ে। আসবেন বাসু চট্টোপাধ্যায় অমল পালেকর মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। পরিবারেও জড়ানো ছিলেন নিবিড় ভাবে, আসছেন মেয়ে ভারতী জাফরি, নাতনি অনুরাধা পটেল প্রমুখ। বাঁ দিকে ভাই কিশোরকুমারের সঙ্গে এক দুর্লভ মুহূর্তের ছবি, ডান দিকে ‘সমর’ ছবির স্থিরচিত্র (শৌনক চক্রবর্তীর সৌজন্যে)।
|
হাতের লেখায় |
রবীন্দ্রনাথের লেখার হাত নিয়ে গবেষণার শেষ নেই, কিন্তু হাতের লেখা? নানা স্মৃতিকথায় এ নিয়ে ছড়ানো মন্তব্য থাকলেও গ্রাফোলজি-র প্রেক্ষিতে রবীন্দ্র-হস্তলিপির পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ হল এই প্রথম। করলেন কলকাতা ইনস্টিটিউট অব গ্রাফোলজির ডিরেক্টর মোহন বোস (রবীন্দ্রনাথ: হস্তলিপির বিচার ও বিশ্লেষণ, আনন্দ, ১০০.০০) গ্রাফোলজির বিচারে, ‘কবির হাতের লেখার মাঝারি সাইজ আরও যে চারিত্রিক বৈশিষ্টের চিহ্ন বহন করে তা হল কবি জীবনকে ভালবেসেছিলেন এবং জীবনের পথে চলমান ছিলেন।’ কিংবা, ‘যাদের নামসই সহজে পড়া যায় তাদের জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতের পর্ব অনেকদিন থাকার পর সফলতাগুলি আসতে শুরু করে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কবি ও তাঁর সৃষ্টিগুলি শুধু যে দীর্ঘস্থায়ী তা নয়, যুগযুগান্ত ধরে তার মর্যাদা একই ভাবে অক্ষুণ্ণ রয়েছে।’ শহরের পথে পথে সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে রবীন্দ্রহস্তাক্ষর এখন সুলভদর্শন, এই গবেষণা সেখানে চিন্তার খোরাক জোগাবে।
|
|
অতিথি |
গাছের ছবি তুলতে খুব ভালবাসত... বলতে বলতে ল্যাপটপ খুলে দেখাচ্ছিলেন ক্যাথরিন। বসন্তে ফুলপাতায় রঙ-ধরা গাছ, আবার শীতের বিবর্ণ নিষ্পত্র গাছ কত রকমের গাছের ছবি তারেক মাসুদের ক্যামেরায়! ‘আমরা মজা করে বলতাম তারেকের ট্রিলজি’, অকালপ্রয়াত সঙ্গীর স্মৃতিতে ফিরে যেতে যেতে যেন-বা একটু সজীবই হয়ে উঠছিল ক্যাথরিনের মুখ। বাংলাদেশে সে দুর্ঘটনার সাত মাস পর ক্যাথরিন আবার কলকাতায়। ইতিমধ্যে তারেকের লেখালেখি নিয়ে চলচ্চিত্রযাত্রা (প্রথমা, ঢাকা) বের করেছেন একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলায়, প্রচ্ছদে তারেকের তোলা সেই গাছের ছবি। পরের বইগুলোতে থাকবে তারেকের লেখা গান, চিত্রনাট্য আর সাক্ষাৎকার। ‘রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কলকাতাকে মনে হয় নিজের দেশ। দুই বাংলাকে একটাই দেশ ভাবি আমি।’ চমৎকার বাংলা বলেন জন্মসূত্রে আমেরিকান ক্যাথরিন। তাঁর উপস্থিতিতেই ১৪ মার্চ রূপকলা কেন্দ্র-র উৎসব শুরু হল তারেকের ছবি দিয়ে।
|
সুরের সাগরে |
সুরসাগরে তরী ভাসিয়েছিলেন শিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষ। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন সহধর্মিণী দীপালি ঘোষকে। গুণমুগ্ধরা ভুলে যাননি এ দু’জনকে, অতএব ফি বছর আয়োজন করেন এ দু’জনের স্মরণে সংগীতানুষ্ঠান ‘সারাটি জীবন কী যে পেলাম’ শীর্ষকে। এ দু’জনের ছাত্রছাত্রী এবং আমন্ত্রিত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন এই অনুষ্ঠানে। অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত এ বারের অনুষ্ঠান আগামিকাল সন্ধে ৬ টায় হাজরার আশুতোষ মেমোরিয়াল হলে।
|
নবজন্ম |
চল্লিশ চাঁদের আয়ু দিয়ে কবিতাযাত্রা শুরু করেছিলেন মল্লিকা সেনগুপ্ত। আর তাঁর মৃত্যুর পরের প্রথম জন্মদিনে সেই বইই নতুন করে জন্ম নেবে। বাংলা আকাদেমিতে ২৫ মার্চ সপ্তর্ষির বইটি প্রকাশ করবেন এই সময়ের ছ’জন তরুণ কবি। ২৬ তারিখ শিশির মঞ্চে আনন্দ থেকে প্রকাশিত হবে মল্লিকার কবিতাসমগ্র, প্রকাশ করবেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। মল্লিকা এখনও কী রকম ভাবে বেঁচে আছেন প্রবীণ-নবীন কবিদের কবিতাযাপনে, সেটাই এই রবি-সোমবারে আরও এক বার জানবে এই শহর। এই শহরই তো জানে তাঁর রাগ-দুঃখ-অভিমান, আগুনঝরা কবিতাগুলি। সেগুলির কিছু কিছু শোনা যাবে প্রবীণ-নবীন কবিদের কণ্ঠে, থাকবে এক কোলাজ, ‘আমি সিন্ধুর মেয়ে’। আয়োজনে ‘সপ্তর্ষি’ আর ‘ব্যঞ্জনা’-র সঙ্গে ‘ভাষানগর’।
|
মেলবন্ধন |
দিনের আলো নিভছে। জোড়াসাঁকোয় ঠাকুরদালানের অস্থায়ী মঞ্চটি কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল। উঠে এলেন কালো পোশাকের চল্লিশ জন নারী-পুরুষ। ওঁরা জার্মানির বিখ্যাত কয়্যার ‘গেওয়ান্ডহাউসকর’-এর সদস্য। এসেছেন বিশ্বকবির সার্ধশতবার্ষিকীতে খোদ তাঁর বাড়িতেই গান শোনাতে। মিশে গেল জার্মানির লোকগান ও রবীন্দ্রসঙ্গীত। জার্মান ভাষায় ছড়িয়ে পড়ল রবীন্দ্রসঙ্গীতের মূর্ছনা। আকাশ আমায় ভরল আলোয়, মহারাজ এ কী সাজ। এক সময় সবাই নেমে এলেন উঠোনে। ধ্বনিত হল জার্মান সুর ও বাংলা উচ্চারণে আমার শেষ পারানির কড়ি কণ্ঠে নিলেম। শেষে কোরাসে জনগণমনঅধিনায়ক জয় হে। বিদেশি গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের এই মেলবন্ধনের কারিগর বার্লিনের অ্যাকাডেমি অব আর্টসের প্রাক্তনী বের্নড ফ্রাঙ্কে। জার্মানিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ স্থাপন এবং এই প্রজন্মের যোগাযোগ স্থাপন এর ওপর ভিত্তি করে ‘বিচিত্রা’-য় একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে। উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রভারতী-র উপাচার্য চিন্ময় গুহ এবং লেখক-শিল্পী জেনার জিমারমান। চলবে ২৩ পর্যন্ত। আয়োজনে গ্যেটে ইনস্টিটিউট/ ম্যাক্সমুলার ভবন।
|
বোঝা গেল না |
‘দেওয়ালে একটা কার্পেটের ছবি বাঁধানো, মনে হচ্ছে ‘হাতি’ কিন্তু নীচে লেখা রয়েছে ‘তাজমহল’।’ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছাত্র চরিতামৃত’ গল্পের এই লাইনটিই ধাঁ করে মনে পড়ে গেল। সলিল বসু ও জয়দেব ভট্টাচার্যের ছবি দেখে। ছবি মানে আলোকচিত্র। গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়, ‘প্রকৃতি: এক মৌন শিল্পী’ প্রদর্শনীতে। দুই আলোকচিত্রীর উদ্দেশ্য মহৎ। তাঁরা সভ্যতার খাতিরে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্টের বিরোধী। গাছপালা পাথর পশুপাখি কীটপতঙ্গ কেমন করে আশ্চর্য সব শিল্পবস্তু তৈরি করে, সেই সব মুহূর্ত ও শিল্প তাঁরা ক্যামেরাবন্দি করতে চেয়েছেন। কিন্তু একটু গোলমাল হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে যে অবয়বটি দেখা যাচ্ছে মনে করে তাঁরা ছবি তুলেছেন, ছবিতে সেই অবয়ব দর্শকরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই প্রতিটি ছবির সামনে সমঝদাররা ভুরু কুঁচকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছেন। যেমন একটি ছবিতে ফোকলা হাসি কোটরসহ বুড়ো গাছের গুঁড়ি, অথচ নীচে লেখা ‘নারীমূর্তি’!
|
শতবর্ষ পূর্তি |
রবীন্দ্রনাথকে চাক্ষুষ করেননি, কিন্তু তাঁর ‘সাহিত্য’ ও ‘শান্তিনিকেতন’ মুখস্থ বলতেন। বই দুটি ছিল তাঁর পথ চলার প্রেরণা মনে করতেন বিমল মিত্র (সঙ্গের ছবি)। এই কথাসাহিত্যিক পূর্ণ করলেন জন্মশতবর্ষ। জন্ম চেতলায় ১৯১২-এর ১৮ মার্চ। বাবা সতীশচন্দ্র মা সুরঞ্জনা দেবী। আশুতোষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে রেলে চাকরির অবসরে লিখতেন। ১৯৪৬-এ প্রথম উপন্যাস ছাই। পঞ্চাশের গোড়ায় বন্ধু সাগরময় ঘোষের আগ্রহে ধারাবাহিক ‘সাহেব বিবি গোলাম’ লিখে আলোড়ন তুলেছিলেন। চাকরি ছেড়ে লেখালেখিকেই পেশা করেন। কড়ি দিয়ে কিনলাম, বেগম মেরী বিশ্বাস, একক দশক শতক তাঁর কালজয়ী উপন্যাস। ১৯৯১-এ তিনি প্রয়াত হন। তাঁর চেতলার বাড়িতেই এখন একটি সংগ্রহশালা ও আর্ট গ্যালারি গড়ে উঠেছে। ২১ মার্চ সন্ধ্যায় তপন থিয়েটারে জন্মশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে ‘বিমল মিত্র সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হবে। প্রকাশিত হবে বিমল মিত্র রচনাবলি-র ষষ্ঠ খণ্ড।
|
পরম্পরা |
এক দিন মধ্যাহ্নে খুব মেঘ করিয়াছে। সেই মেঘলা দিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরে এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটা স্লেট লইয়া লিখিলাম, ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে।’
ষোল বছরের কিশোর ‘ভানুসিংহ’ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বসে যে পদাবলি লিখেছিলেন, তা প্রকাশিত হয় ‘ভারতী’ পত্রিকায়। কিন্তু এটি অভিনীত হয়নি তাঁর জীবদ্দশায়। ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ আর জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’, এই দুই অনন্য সাহিত্যকীর্তি আশ্রিত নৃত্য-আলেখ্য ‘জয় জয় ভানু জয় জয়দেব’ ঠাকুরবাড়ির ঠাকুরদালানে দেখা যাবে ২২ মার্চ সন্ধ্যা ছ’টায়। বাংলায় মণিপুরি নৃত্যচর্চার সূচনা করেন রবীন্দ্রনাথ, মনে করিয়ে দিলেন মণিপুরি নৃত্যশিল্পী শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা-মণিপুরের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নতুন সূচনাই শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রভারতী-র অধ্যাপক শ্রুতি দেবীর (সঙ্গের ছবি) পরিকল্পিত এই আলেখ্য সেই ঐতিহ্য-পরম্পরাকেও সম্মান জানাবে। থাকবেন মণিপুরের নাট্যব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম।
|
ইতালির ছবি |
‘হলিউড এতকাল ধরে তিলে তিলে যে সমস্ত অবাস্তব রীতির প্রতিষ্ঠা করেছে, একমাত্র ইতালি পেরেছে সেই আজগুবি রীতিকে ফুঁ দিয়ে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিতে।’ লিখেছিলেন সত্যজিৎ, পঞ্চাশের দশকের শুরুতে, তখনও ‘পথের পাঁচালী’ করেননি, বাস্তবতার খোঁজে দেখে চলেছেন ইতালীয় পরিচালকদের ছবি। ছ’দশক পর ইতালীয় ছবির হাল-হকিকত কেমন, তার আন্দাজ দিতেই ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর ইতালীয় কাহিনিচিত্রের উৎসব, নন্দন-এ ২০-২২ মার্চ। ঠিক তার পরেই তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির উৎসব, নন্দন-এ ২৩-২৫ মার্চ, নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ।
|
আন্তর্জাতিক |
এই শীতে, বছরের শেষটায় চলে গেলেন, অথচ এখনও তাঁর মায়াময় উপস্থিতি ভারতীদেবীর সহাস্য ছবির সঙ্গে সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণলেখ। নন্দন-এর বুলেটিন, বেরল সদ্য। মুদ্রণ পারিপাট্যে শোভন, তার চেয়েও বেশি এক প্রসারিত বাঙালিয়ানার ছাপ। ‘কলকাতাকে রেখেই আন্তর্জাতিকতার আঁচ এনে ফেলার চেষ্টা’, মন্তব্য সম্পাদক সন্দীপ রায়ের। দু’পাতা জুড়ে তাই মধু বসুর ‘আলিবাবা’র ৭৫-পূর্তির নস্টালজিয়ার সঙ্গে অশোক বিশ্বনাথন লিখেছেন নিজের প্রিয় ‘ইটারনিটি অ্যান্ড আ ডে’ নিয়ে। এ-ছবির পরিচালকই গ্রিসের থিয়ো অ্যাঞ্জেলোপউলস, হঠাৎ মারা গেলেন দুর্ঘটনায়। আবার সদ্য প্রকাশিত সত্যজিতের ডিপ ফোকাস নিয়ে শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের ‘বুক রিভিউ’। সব মিলিয়ে এক ‘বড়’ বাঙালির মনের ছবি।
|
রতন |
বাবা চেয়েছিলেন, মেয়ে কর্পোরেট জগতের সঙ্গে যুক্ত হোক। পড়াশোনা ম্যানেজমেন্ট নিয়ে, ব্যাঙ্কিং বা তেমন কোনও পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হতেই পারতেন। হলেন না। এলেন গানে। এলেন অভিনয়ে। গানে তালিম নিয়েছেন, অভিনয়ে স্ব-শিক্ষিত। গত কলকাতা ফিল্মোৎসবে শিরোপা পেয়েছিল তাঁরই অভিনয়দীপ্ত ছবি, ‘গেরিলা’। অরিন্দম শীল-এর নির্মীয়মাণ ছবি ‘আবর্ত’-র সূত্রে তিনি স্বয়ং কলকাতায়। জয়া আহসান। চেহারায় বঙ্গনারীর ধ্রুপদী লাবণ্য, কথাবার্তায় ঝকঝকে সমকালীনতা। রবীন্দ্রনাথের গান করেন, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বা ‘অযান্ত্রিক’ খুবই প্রিয় ছবি, আবার বিনোদনের জন্য ‘বান্টি অওর বাবলি’ দেখতেও আপত্তি নেই। ‘আমি নিজে কখনওই খুব জনপ্রিয় হওয়ার রাস্তায় হাঁটিনি। আমি অভিনয় করতে চাই এমন কিছু চরিত্রে, যা মানুষ মনে রাখবেন।’ সহাস্যে বললেন মেরিল স্ট্রিপ এবং অঁদ্রে তঁতুই-এর ভক্ত জয়া। ‘ডুবসাঁতার’-এর মতো ছবি বা ‘তারপরেও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালবাসে’-র মতো টেলি-ছবি করেছেন সেই জন্যেই। এমন কোনও চরিত্র আছে কি, যেটি পেলে খুব ভাল লাগত? ‘আছে, কিন্তু সেই রোলটাতো পাওয়া সম্ভবই নয়।’ কোন চরিত্র? ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র ‘নীতা’ বুঝি? জয়া হাসলেন, নীতা হতেই পারে, কিন্তু এটা একেবারে অসম্ভব। রতন। ‘পোস্টমাস্টার’-এর রতন’। |
|
|
|
চিরযুবা |
ছোট থেকেই শরীর চর্চায় ঝোঁক। বাতাবিলেবু দিয়ে ফুটবল, গাছের ডাল দিয়ে ডন বৈঠক চলত। বাবার বকুনিতেও টলেনি ছেলে। বরং কালাজ্বরের পর শরীর চর্চা বেড়ে যায়। শুরু করেন সিনিয়র পি সি সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে ঢাকায় শো দেখানো ‘ফিজিক অ্যান্ড ম্যাজিক’। অভিনব সব কসরত। দাঁত দিয়ে লোহা বাঁকানো, গলা দিয়ে বর্শা বাঁকানো, পেটের ওপর তরোয়াল রেখে শরীর ঝুলিয়ে দিতেন মনোহর আইচ। চল্লিশের দশকে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্স-এ কাজের সময় বডি বিল্ডারদের সান্নিধ্যে আসা। ১৯৫০-এ ইউরোপে পাড়ি। ১৯৫১-য় বিশ্বশ্রী প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়, পরের বছর শর্ট গ্রুপ-এ চ্যাম্পিয়ন। তখন বয়স ৩৯। সে বছরই স্কটল্যান্ডে স্প্রিং পুলিং-এ চ্যাম্পিয়ন। ছ’শো পাউন্ড ওজনের চাকা নিয়ে ঘোরেন চার ফুট সাড়ে এগারো ইঞ্চির মানুষটি। এক টানা দিতেন হাজার ডন-বৈঠক। যুক্ত ছিলেন গ্রেট ওরিয়েন্টাল সার্কাসের সঙ্গে। ভালবাসতেন খোল বাজাতে। সম্প্রতি একশো পেরোলেন। জানালেন, সীমিত হালকা খাবার এবং শরীর চর্চা তাঁর দীর্ঘ সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। তবে দু’বেলা খাবারে দুধ থাকে। পছন্দ পান্তাভাত। বছর কয়েক আগেও চলত শরীরচর্চা। স্ত্রী-র মৃত্যুর পর বন্ধ। একাকীত্ব গ্রাস করেছে। জন্মদিনে কেমন লাগছে? স্ত্রীর ছবি হাতে জল চিকচিক চোখে বললেন, ‘অন্য সব দিনের মতোই’। |
|
|
|
|
|
|
|