এক দিকে পার্কিংয়ের সমস্যা, অন্য দিকে যানজটে জেরবার সল্টলেকের শিল্পতালুক পাঁচ নম্বর সেক্টর। নতুন ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করেও নিত্যযাত্রীদের দাবিতে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার সমস্যা রোধে এ বার প্রশাসনের নতুন দাওয়াই ‘রিং-রোড’। পাঁচ নম্বর সেক্টরের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’র এক সাম্প্রতিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই সংস্থার চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রিং-রোড তৈরি নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বোর্ড-সদস্যেরা সকলেই এ বিষয়ে একমত। এখন জমির বিষয়টি দেখা হবে। জমি পেলেই পরিকল্পনা কার্যকর হবে। রিং-রোড হলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
পাঁচ নম্বর সেক্টরের পিছনে ভেড়ি এলাকার ধার দিয়ে তৈরি হতে চলেছে নতুন বক্সব্রিজ। ২১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের রাস্তায় গিয়ে মিশবে সেটি। প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর চারটি লেন হবে। সেতু সংযোগকারী রাস্তাও নতুন ভাবে মেরামত করা হবে। সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
নবদিগন্ত-কর্তৃপক্ষ জানান, এই বক্সব্রিজটি তৈরি হলে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়েকে কেন্দ্র করে রিং-রোড তৈরি হয়ে যাবে। পাশাপাশি, অফিসগুলিকে নিজের পার্কিং লটে গাড়ি রাখতে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, উন্নত পার্কোম্যাট তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন করে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। নবদিগন্ত সূত্রের খবর, রিং-রোডের কাজ শেষ হলে বাসগুলিকে পাঁচ নম্বর সেক্টরের ভিতরের রাস্তায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। রিং-রোড বরাবর গাড়ি চলাচল করবে।
|
তবে, এর ফলে রিং-রোড থেকে অফিস পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হবে কর্মচারীদের। সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি-কর্মীরা। নবদিগন্তের এগ্জিকিউটিভ অফিসার বদ্রিনারায়ণ কর বলেন, “বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ। শিল্পতালুকের ভিতরে বাস ও অন্যান্য বড় গাড়ির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে যানজট সমস্যা অনেকটাই মিটবে। তা ছাড়া, রিং-রোডে বাসস্ট্যান্ড যেখানে হবে, তার ২০০ মিটারের মধ্যেই অফিস। তাই আশা করি, খুব সমস্যা হবে না।”
৪৩২ একর আয়তনের পাঁচ নম্বর সেক্টরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে জন্মলগ্ন থেকেই। কারণ, শিল্পতালুকের আয়তন, কর্মী-সংখ্যা এবং দিনভর যাতায়াত করা গাড়ির সংখ্যার অনুপাতে রাস্তার পরিমাণ কম। মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার। যেখানে লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পতালুকে কাজ করেন। প্রতি দিন গড়ে ২০-২৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে এই রাস্তায়। উপরন্তু উপযুক্ত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় রাস্তার উপরেই ঘোষিত পার্কিং লটের পাশাপাশি অসংখ্য ‘বেআইনি’ পার্কিং লট গড়ে ওঠে। ফলে যানজট বাড়তে থাকে। গত কয়েক বছরে এই যানজট জটিল আকার ধারণ করেছে।
বেশ কয়েক বার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে শিল্পতালুকে। ভিতরের কয়েকটি রাস্তা ওয়ান-ওয়ে করেও কোনও লাভ হয়নি। উইপ্রো মোড়, কলেজ মোড়, ওয়েবেল-টেকনোপলিস্ মোড়, এসডিএফ মোড়-সহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজটে জেরবার হন শিল্পতালুকের কর্মীরা।
এর আগেও রাস্তা সম্প্রসারণ করে রিং-রোডের পরিকল্পনা করেছিলেন নবদিগন্তের কর্তারা। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি না-থাকায় সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়। শেষে নতুন বোর্ড দায়িত্ব হাতে নিয়ে সমীক্ষা চালায়। দেখা যায়, শিল্পতালুকের পিছন দিকে ভেড়ির পাশ দিয়ে একটি বক্সব্রিজ করলেই রিং-রোডের পরিকল্পনা কার্যকর করা যেতে পারে। যদিও সে ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি পাওয়ার উপরে নির্ভর করবে এই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ। তবে জমি পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন নবদিগন্ত-কর্তৃপক্ষ। |