নেই চিকিৎসক-নার্স, ‘মুখরক্ষা’র আইটিইউ চলছে এসএসকেএমে
ডাক্তার নেই। নার্স নেই। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও এখনও পৌঁছয়নি। তবু ঘটা করে ৩২ শয্যার আইটিইউ-এর উদ্বোধন হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। সাড়ে তিন মাস কাটল, আইটিইউ পড়ে আগের অবস্থাতেই। কিন্তু, উদ্বোধনের খবর যে হেতু পৌঁছেছিল অন্য হাসপাতালেও, তাই তাতে ভরসা রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসকেরা এসএসকেএমে রোগীদের ‘রেফার’ করছেন প্রতি দিন। আর মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে এসে ফিরে যাওয়ার ঘটনাও প্রতি দিনই বাড়ছে। পরিকাঠামো তৈরি না হওয়া সত্ত্বেও কেন ঘটা করে আইটিইউ উদ্বোধন হয়েছিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্যকতার্দের কাছে অবশ্য এ প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছ’জন এসেছিলেন আইটিইউ-তে ভর্তির জন্য। সকলকেই ফিরে যেতে হয়েছে। শুক্রবার ফিরেছেন সাত জন। শনিবার পাঁচ জন। এ ছাড়া এসএসকেএমের অন্য ওয়ার্ড থেকেও মুমূর্ষু রোগীদের আইটিইউ-তে রেফার করা হচ্ছে। রেফার করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রোগীর বাড়ির লোককে এ-ও বলে দিচ্ছেন, “আইটিইউ-তে জায়গা নেই। অন্যত্র চেষ্টা করুন।”
কিন্তু, কোথায় যাবেন তাঁরা? রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইটিইউ নেই। ন্যাশনাল মেডিক্যালে আট শয্যার আইটিইউ রয়েছে। নীলরতন সরকার হাসপাতালে কিছুই নেই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ শয্যার ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ) রয়েছে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে পাঁচ শয্যার ‘পোস্ট অ্যানাস্থেশিয়া কেয়ার ইউনিট’। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এগুলি কিছুই নয়। আর বেসরকারি হাসপাতালের বিপুল খরচ সামলানো অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখিয়েছিল এসএসকেএমের ৩২ শয্যার আইটিইউ-এর ঘোষণাটি। ২ অক্টোবর সেটি উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তখন তিনি এতই আপ্লুত ছিলেন যে, বলেছিলেন, “আমি ১০ বছর আমেরিকায় ছিলাম। কিন্তু এসএসকেএমের এই আইটিইউ আমেরিকার আইটিইউ-এর থেকেও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে।” পাশাপাশি তিনি জানান, চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী মিলিয়ে আইটিইউ-এর জন্য আরও যে ৫৫ জন কর্মী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী তা অনুমোদন করেছেন।
সাড়ে তিন মাস পরে কী অবস্থা? কর্তৃপক্ষ জানান, এক জনও বাড়তি চিকিৎসক বা নার্স তাঁরা পাননি। ফলে, বহু বছর ধরে আট শয্যার যে আইটিইউ চলছে, তার সঙ্গে আরও দু’টি শয্যা যোগ করে ১০ শয্যা করে রেখেছেন তাঁরা, স্রেফ ‘মুখরক্ষা’র তাগিদে! বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা হলাম আক্ষরিক অর্থেই ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। কোনও পরিকাঠামো নেই। কিন্তু বিভাগ খুলে বসে রয়েছি।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসক-নার্স চেয়ে অনবরত তাঁরা চিঠি পাঠাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনে। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।
এসএসকেএম তথা আইপিজিএমইআর-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “মূলত নার্সের অভাবেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আইটিইউ-তে যত জন ডাক্তার প্রয়োজন, সেটাও নেই। আর ডাক্তার, নার্স না থাকলে তো পরিষেবা চালু করে দেওয়া যাবে না। তাই অধিকাংশ যন্ত্রও এখনও কেনা হয়নি। তবে বরাদ্দ টাকা চলে এসেছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না-করে তড়িঘড়ি আইটিইউ খুলতে চাননি শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু, দেশের প্রথম ৩০ শয্যার আইটিইউ খোলার প্রচার এমন তুঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিল যে, না খুলে উপায় থাকেনি।” রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৫০০ নার্স নেওয়া হচ্ছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হয়তো নার্স দেওয়া হবে। তার পরে ধাপে ধাপে বাকি শয্যাগুলিও চালু হবে।” আর চিকিৎসক? সামান্য থেমে তাঁর জবাব, “চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থাও হচ্ছে।”
তা হলে ব্যবস্থা হওয়ার আগেই ‘উদ্বোধন’ কেন হল? সুশান্তবাবুর জবাব, “একবারে না হয়ে ধাপে ধাপে হচ্ছে। তাতেও তো পরিষেবা আগের তুলনায় বাড়ছে।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.