প্রার্থী-তালিকায় সব সম্প্রদায়, বিরোধীরা চাপে
কমিশন দলিত-বিরোধী, আক্রমণ মায়াবতীর
নিজের জন্মদিনে লখনউয়ের তখ্ত পুনর্দখলের লড়াই শুরু করে দিলেন মায়াবতী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আজ তাঁর দলের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করেছেন লখনউয়ে। তালিকায় স্পষ্ট, গত বারের মতো এ বারও ‘সবর্জন হিতায়’-র নীতিতেই আস্থা রাখছেন দলিত নেত্রী। গত নির্বাচনে এই মন্ত্রই সাফল্য এনে দিয়েছিল তাঁকে। এক শিবিরে টেনে এনেছিল দলিত ও ব্রাহ্মণ ভোট। তবে এর সঙ্গে বরাবরের মতো ‘দলিত স্বাভিমানকেও’ সামনে রাখছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী। গোটা রাজ্যে তাঁর ও বসপা-র প্রতীক হাতির মূর্তিগুলি ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় মায়াবতী আজ ‘দলিত-বিরোধী’ তকমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। দলিত-আবেগকে উসকে দিতে কমিশনের ওই নির্দেশকে ‘কাঁসিরামের অপমান’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
এত দিন কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও কৌশলগত কারণে কংগ্রেসও আজ কার্যত মায়াবতীকেই সমর্থন জানিয়েছে। কারণ, দলিতদের মন জিততে তৎপর কংগ্রেসও। এবং নির্বাচন কমিশন উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী ও হাতির সব মূর্তি ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় আখেরে বসপা-রই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টিও মনে করছে, এতে দলিত মেরুকরণের ক্ষেত্রই তৈরি হচ্ছে। মায়াবতীও তার ফায়দা ভাল ভাবেই তুলতে শুরু করে দিয়েছেন আজ থেকে। কমিশনের মূর্তি ঢাকার এই অভিযানে তাঁর নিজের এবং দলীয় প্রতীকের বিনামূল্যে প্রচার হয়ে গিয়েছে বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
অন্য বারের মতো আড়ম্বর নয়। জন্মদিনে প্রসঙ্গ শুধুই ভোট।
নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো চিঠি দেখাচ্ছেন মায়াবতী। ছবি: পিটিআই
মূর্তি ঢাকা নিয়ে আজই প্রথম কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন মায়াবতী। দলিত সম্প্রদায়ের আবেগকে উসকে দিয়ে তাঁর মন্তব্য, “কাঁসিরামের ইচ্ছা অনুযায়ীই বহুজন প্রেরণা স্থল তৈরি করে সেখানে তাঁর ও আমার মূর্তি বসানো হয়েছিল। বিরোধীরা প্রয়াত কাঁসিরামের ইচ্ছাকে অপমান করেছেন।” হাতির মূর্তি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সাফাই, “বসপা-র প্রতীক বলে নয়, ভারতীয় সভ্যতার অঙ্গ বলেই হাতির মূর্তিগুলি তৈরি করানো হয়েছিল।”
উত্তরপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে প্রচারে গিয়ে দলিতদের বাড়িতে রাত কাটিয়ে অনেক দিন ধরেই মায়াবতীর নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো চেষ্টা করছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু এখন শেষবেলায় সেই ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত হতে দেখে তিনি নিজেই দলের নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চাপের মুখে আজ কংগ্রেসকেও নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় মুখ খুলতে হয়েছে। দলের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করি না। পাথরের হাতি তো ঢাকা হবে! যে সব জ্যান্ত হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলোকে কী ভাবে ঢাকা হবে?” দলের নেতারা মনে করছেন, নয়ডা, লখনউ বা গাজিয়াবাদে সরকারি অর্থে তৈরি বিরাট বিরাট কাঁসিরাম ও মায়াবতীর মূর্তি দেখলে শহুরে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হত। কিন্তু সে সব ঢেকে দেওয়ায় দলিত-আবেগ উসকে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন মায়াবতী।
পাশাপাশি, তাঁর প্রার্থী-তালিকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রেখে শুধুমাত্র কংগ্রেস নয়, সমাজবাদী পার্টি এবং বিজেপি-র পরিকল্পনাতেও জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মায়াবতী। এ দিন ৪০৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বসপা-সুপ্রিমো। এর মধ্যে ১১৭ জনই উচ্চ বর্ণের, যার মধ্যে ব্রাহ্মণ ৭৪ জন। ১১৩ জন ওবিসি সম্প্রদায়ের এবং ৮৮ জন তফসিলি উপজাতির নেতা। পাশাপাশি, মুসলমান-সহ সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে মায়াবতী ৮৫ জনকে টিকিট দিয়েছেন। কংগ্রেস যে দলিত ও মুসলমানদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন, তা খুব ভাল ভাবেই জানেন মায়াবতী। জাতপাতের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা বললেও উত্তরপ্রদেশে জাতপাতের সমীকরণ ও তার বদলের উপরেই ভরসা রাখছে কংগ্রেস। মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ যাদব, দু’জনেরই ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ঠিক আগে ওবিসি-কোটায় সাড়ে চার শতাংশ সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি যাতে পুরো সংখ্যালঘু ভোট না নিয়ে চলে যায়, তার জন্যই মায়াবতী বিপুল সংখ্যায় সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ বর্ণ, বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। ওবিসি ভোট জিততেই বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে টেনেছিল বিজেপি। কিন্তু ব্রাহ্মণ-দলিতকে এক ছাতার তলায় রাখতে মায়াবতী যেমন এক দিকে যেমন ব্রাহ্মণদের ঢালাও টিকিট দিয়েছেন, তেমনই জানিয়ে দিয়েছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের সময় স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়েছে। বাবুসিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিজেপি-র যখন সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা, তখন মায়াবতী বলছেন, “যাঁরা বহুজন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে এবং জিতে এলে উন্নয়নে জোর দেবেন, তাঁদেরই প্রার্থী করা হয়েছে।”
মূর্তি ঢেকে দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসের সমর্থন পেলেও কাউকেই রেয়াত করতে রাজি নন মায়াবতী। তাঁর দাবি, বসপা-র দলীয় প্রতীক হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়া হলে চণ্ডীগড়ে কংগ্রেস প্রতীক হাতের মূর্তিও ঢেকে দিতে হবে। তিনি বলেন, “কমিশন বলছে, সরকারি অর্থে আমার মূর্তি তৈরি হয়েছে বলে তা ভোটেরদের উপর প্রভাব তৈরি করবে। কারও ব্যক্তিগত খরচে আমার মূর্তি তৈরি হলে প্রভাব পড়ত না। আমার দলের ভিতরের বা বাইরের কেউই এই যুক্তি মানতে পারছে না। সরকারি বেসরকারি অর্থে তৈরি মন্দিরে তো কংগ্রেসের হাত, বিজেপি-র পদ্মের মূর্তি রয়েছে। গোটা রাজ্যে সরকারি সাহায্যে নলকূপ বসেছে। সে তো রাষ্ট্রীয় লোকদলের প্রতীক। কমিশনের উচিত, সে সবও ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া।”
নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করলেও আজ কিন্তু আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকি নেননি মায়াবতী। সাধারণত তাঁর জন্মদিনকে দলে ‘আর্থিক সহযোগ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। দলের নেতা ও সমর্থকদের চাঁদায় ফুলে ফেঁপে ওঠে বসপা-র কোষাগার। গত বছর এই দিনে রাজ্যের ৬০০টি প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল। এ বার নির্বাচনী আদর্শন আচরণবিধির জন্য সে সবের কিছুই না করে প্রার্থীতালিকা ও নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের সপ্তম খণ্ড প্রকাশ করেই জন্মদিনের অনুষ্ঠান সারেন মায়াবতী। তবে দলের নেতারা জেলায় জেলায় জনসংযোগের কাজে লাগিয়েছেন নেত্রীর জন্মদিনকে। মায়াবতীর নির্দেশেই তা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.