নীতীশের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন
জেল-ফেরত অপরাধীদের মূল স্রোতে ফেরার বাধা সরকারই
সাজা শেষ করে জেল থেকে বেরিয়েও সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারবেন না অপরাধী! তাকে ‘একঘরে’ করতে মাঠে নামছে খোদ সরকার! তাকে সমাজের সব রকম সুবিধা থেকেই বঞ্চিত করে রাখার ব্যবস্থা করবে সরকার! এমনই ফরমান জারি করেছেন দেশের অন্যতম ‘সফল’ মুখ্যমন্ত্রী, নীতীশ কুমার।
রবিবার এক অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নীতীশ বলেন, “এটা হলে মানুষ অপরাধ করার আগে ভাববে। আর সরকার তাই চায়।” বিহারে সাজাপ্রাপ্ত ১৪০০ অপরাধীর ছবি, নাম, ঠিকানা এবং কোন অপরাধে সে সাজাপ্রাপ্ত তার সব তথ্য দেওয়া থাকবে ওয়েবাসাইটে। যারা জেল খেটে বেরিয়ে গিয়েছে, থাকছে তাদের নাম-ধামও। উদ্দেশ্য, এদের মানুষ যেন সহজেই চিনতে পারে। কী কী সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হবে, তারও প্রাথমিক একটি তালিকা দিয়েছে সরকার।
বিহার সরকারের সিদ্ধান্ত, এই অপরাধীরা রেশন দোকানের লাইসেন্স, ব্যাঙ্ক ঋণ, বন্দুকের লাইসেন্স, সরকারি চাকরি, সরকারি ঠিকাদারির মতো কাজ করতে পারবে না। এমনকী রাজ্য সরকার চায়, তাদের যাতে বেসরকারি সংস্থাতেও কর্মসংস্থান না হয়! তা হলে জেলের মেয়াদ শেষ করে বাইরে আসাদের খাওয়া-পরার সংস্থান হবে কী করে? রাজ্য সরকারের বক্তব্য, সে দায় এই লোকেদেরই। সরকার এদের পাশে থাকবে না। কিন্তু তা বলে এমন ‘ভাতে মারা’র সিদ্ধান্ত? নীতীশের ব্যাখ্যা, সামাজিক বঞ্চনার বিষয়টি যে কোনও ব্যক্তিকে প্রথম অপরাধ করার আগেই ভাবাবে।
কিন্তু অপরাধ বিজ্ঞান যে অন্য কথা বলে। ন্যায়ালয়ের ভাবনাও তো ভিন্ন। কার্যত সেই কারণেই চিরকালীন ‘কারাগার’ দেশ জুড়ে এখন ‘সংশোধনাগার’।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা কিন্তু অন্য রকম। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বিহারের অপরাধ-প্রেক্ষিতই মুখ্যমন্ত্রীকে অন্য ভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। তাঁর নতুন ফরমানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে আজ নীতীশ বলেন, “এই কঠোর অনুশাসন তৈরির পিছনে সরকারের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। অপরাধ করার আগেই মানুষকে ভাবতে হবে। আইন আছে, তা সত্ত্বেও অপরাধ হয়। এটা মানুষের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।” কিন্তু অপরাধী নিজেকে সংশোধন করে মূল স্রোতে ফিরতে চাইলে তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত কি না, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সে যে অপরাধ করেছে, জেল থেকে বেরোনোর পরেও তাকে সেটা মনে রাখতে হবে। এটা অনেকেই ভুলে যায়। ফের অপরাধ করে। বুঝতে হবে, এক বার অপরাধ করলে, সারা জীবনই শাস্তি বয়ে বেড়াতে হবে। জেল থেকে বেরোলেই তার শাস্তি শেষ হয়ে যাবে না।”
পশ্চিমবঙ্গের কারগারগুলিকে ‘সংশোধনাগারে’ পরিণত করার ব্যাপারে যে পুলিশকর্তার উদ্যোগ সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে, সেই প্রাক্তন এডিজি (জেল) বংশীধর শর্মার কথায়, “নীতীশ কুমার নিশ্চয়ই সংগঠিত এবং কুখ্যাত অপরাধীদের ক্ষেত্রে এ কথা বলতে চেয়েছেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাগের মাথায় মানুষ অপরাধ করে ফেলে। তাদের কিন্তু সাজা শেষ হলে একটা সুযোগ অবশ্যই দেওয়া উচিত।”
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি (কারা) তনবীর কুমার অবশ্য প্রেক্ষিত না জেনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে মত দিতে নারাজ। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের আইনে চরম অপরাধের ক্ষেত্রে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড তো রয়েইছে। বিচারব্যবস্থা যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয় না, তাদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা সমাজকে করতেই হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু লোক ঝোঁকের মাথায় অপরাধ করে ফেলে। তাদের অনেকেরই পরে যে পরিবর্তন হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.