|
|
|
|
|
|
|
‘একটি আনন্দ প্রকাশনা’ |
নবসাজে সিগনেট |
বারো বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট। সংস্কৃত কলেজের ফটক ছাড়িয়ে মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে কয়েক পা গেলেই বাঁদিকে পড়বে ঠিকানাটা, যে ঠিকানায় এক দিন জন্ম হয়েছিল অজস্র ফুলের গল্পের। ফুটপাথে ফুলের গল্প অথবা এক রাজকীয় সিলমোহরের কাহিনি, যার শিরোনাম সিগনেট বুক শপ। ১০/২ এলগিন রোডে সিগনেট প্রেসে যে ফুলগুলির জন্ম সেগুলিই আলো করে এসে পড়ত বইপাড়াতে, এই সিগনেট বুক শপে। এবং, কর্ণধার দিলীপকুমার গুপ্ত ওরফে ডিকে-র প্রযত্নে সে আলো ছড়িয়ে যেত বইপড়াতেও। প্রায় তিন দশক ধরে বইপাড়ায় এক স্নিগ্ধ রাজত্ব করবার পরে মোহরটি চলে গেল আড়ালে। ক্রমশ ধুলো জমতে লাগল ফুলগুলিতে, টিঁকে থাকলেও বেঁচে থাকাটা গেল হারিয়ে। কিন্তু চলে যাওয়া শনিবারটা কলকাতার বইপাড়া আর বইপড়ায় হয়ে উঠল আনন্দের দিন। সিগনেট প্রেস পুনর্জীবন পেল রাজকীয় ভাবে, হয়ে উঠল ‘একটি আনন্দ প্রকাশনা’। মলিন সাইনবোর্ডটুকুই ছিল যে গতপ্রায় আলোর একমাত্র চিহ্ন, সে আলো ছড়িয়ে গেল সবখানে। |
|
|
শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা
ছবিতে নবসাজে সিগনেট বুকশপ |
সেই চিরজীবী,
আম আঁটির ভেঁপু-র প্রচ্ছদ। |
|
সিগনেট বুক শপ সেজে উঠল সেই আদি চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখেই (ঠিকানাটা অবশ্য বদলেছে আলোকিত কালেই, ১২ হয়েছে ১২এ)। শেল্ফে পুনর্বার দেখা দিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আম আঁটির ভেঁপু, চাঁদের পাহাড়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভোঁদড় বাহাদুর আর নীরেন্দ্র চক্রবর্তীর নীল নির্জন— সেই একই আকার, একই প্রচ্ছদ, একই অলংকরণ, কেবল পেপারব্যাক হয়েছে বোর্ড-বাঁধাই। পাশাপাশি, ‘একটি আনন্দ প্রকাশনা’ সিগনেট থেকে প্রকাশিত হল তিনটি নতুন শঙ্খ ঘোষের হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বালুকণার মতন অ-সামান্য আর চিত্ররেখা গুপ্তের নিরুপমাদেবী: জীবনে ও সাহিত্যে। আনন্দ পাবলিশার্সের সুবীর মিত্র বলছেন, “বাংলা প্রকাশনায় উজ্জ্বল আলোর দিশারি সিগনেট প্রেসের নব রূপায়ণে খুবই ভাল লাগছে। সিগনেট বুকশপে আনন্দ-র বইপত্রও থাকবে। প্রযোজ্য হবে আনন্দ-র বই বিক্রির নিয়মকানুনই।”
|
তৃতীয় উদ্যোগ |
শতবর্ষ, একশো পঁচিশের পরে এ বার দেড়শো বছরে প্রকাশিত হতে চলেছে তৃতীয় সরকারি রবীন্দ্র রচনাবলি। ১৯৬১-তে রবীন্দ্রনাথের জন্মের শতবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে প্রথম প্রকাশিত হয় রবীন্দ্ররচনাবলি। ১২৫ বছরে একটি সংস্করণ হয়, আর এ বার ‘সার্ধশতজন্মবর্ষ সংস্করণ রবীন্দ্র-রচনাবলী’। ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে টাউন হলে সরকারি উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত রচনাবলির প্রথম খণ্ডটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রথম খণ্ডে থাকছে ১৩টি কাব্যগ্রন্থ। ভূমিকায় সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে শাঁওলি মিত্র জানিয়েছেন, ১৭ খণ্ডে পরিকল্পিত রচনাবলির মূল ভিত্তি রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থের তাঁর জীবনকালে প্রকাশিত শেষ সংস্করণ। এখানেও আগের মতোই সংরূপ অনুসারে খণ্ডগুলি বিন্যস্ত। প্রতি খণ্ডের শেষে থাকছে গ্রন্থপরিচয়, সবিস্তার গ্রন্থপরিচয় শেষ খণ্ডেও।
|
|
প্রেসিডেন্সি ঘরানা |
প্রেসিডেন্সির কৃতী ছাত্রের সংখ্যা এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে এঁদের স্বীকৃতিলাভ আজ ইতিহাস। শিক্ষাজগৎ এবং গবেষণা ক্ষেত্র ছাড়া জাতির প্রেরণায়, রাজনীতিতে, দেশ পরিচালনায়, আইনে, প্রশাসনে, চলচ্চিত্রে, নাটকে এবং সাহিত্যে তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। মার্গ সংগীতের আঙিনায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, সরোদবাদক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, কণ্ঠশিল্পী সুগত মারজিৎ এবং সেতারি পার্থ বসু-সহ অনেকেই প্রেসিডেন্সি পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে সুপরিচিত। প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী সংসদের হীরকজয়ন্তী বর্ষে তাদের আয়োজনে সেতার-তবলার জমজমাট আসর শিল্পী পার্থ বসু ও স্বপন চৌধুরী। ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় জি ডি বিড়লা সভাঘরে। উদ্যোক্তাদের আশা, সংস্কৃতি জগতের বিদগ্ধজন ও রসিক শ্রোতার উপস্থিতিতে সুর-লয়ের এই যুগলবন্দির মাধ্যমে মূর্ত হয়ে উঠবে সংগীতজগতে ‘প্রেসিডেন্সি ঘরানা’। |
মনোবিদের নাট্যচর্চা |
তাঁর প্রজন্মের আরও অনেক মনীষীর মতো ডাক্তার ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন বহুকর্মা। ১৯৬০-এর দশক থেকে পাভলভীয় পদ্ধতিতে মনোরোগ-চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত নাট্যচর্চাও করতেন। অনেকে সেটাকে সাইকোথেরাপি বলেছেন। তাঁর অনেক রোগী ও সহযোগী এতে যোগ দিতেন। পুরাণকথাকে আজকের মানুষের যন্ত্রণাবেদনার অনুষঙ্গে মূর্ত করায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। সে কালের লোকেরা এখনও ভুলতে পারেন না তাঁর ‘কল্মাষপাদ’ নাটক। তাই তাঁর জন্মশতবর্ষে পাভলভ ইনস্টিটিউট শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘ধীরেন্দ্রনাথের নাটকের সমাজ মনস্তত্ত্ব’, বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায়, বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। থাকছে ধীরেন্দ্রনাথ রচিত ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’-র শ্রুতিনাট্যরূপ (সন্দর্ভ)। |
অন্য মেলা |
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে এ বার অন্য রকম আয়োজন। ২৩-৩০ ডিসেম্বর মধুসূদন মঞ্চ ও দক্ষিণাপণ চত্বরে রবীন্দ্রবিষয়-ভিত্তিক এক মেলা হবে, আয়োজনে হেরিটেজ বেঙ্গল। সংস্থার সভাপতি সুখেন্দুশেখর রায় জানালেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী ও তাঁর সাহিত্যের নায়িকাদের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে অভিনব অনুষ্ঠানের। থাকবে বিশেষ ফ্যাশন-শো ‘তোমারে সাজাব যতনে’। এই অনুষ্ঠানে থাকবেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, শ্রীকান্ত আচার্য, নৃত্যশিল্পী গোষ্ঠী ‘সিঞ্জন’। থাকবে রবীন্দ্র-বিষয়ক বই, অডিয়ো, ভিডিয়ো, এবং তাঁর গান ও চলচ্চিত্রের রেকর্ড ও সিডি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা।’’ শোনা যাবে রবীন্দ্র-কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, নজরুলের কণ্ঠে ‘রবিহারা’ কবিতাটি। আর বাঙালি খাবারের পসরা নিয়ে আসবে পদ্মাপাড়ের ‘রান্নাঘর’। এ দিকে তরুণ এক পরিচালকের তথ্যচিত্রে আবারও রবীন্দ্রনাথ। মুজিবর রহমানের কাজটি নামে ডকুমেন্টারি হলেও এ ঠিক তথ্যচিত্র নয়। তথ্য আছে ঠিকই, কিন্তু তাকে চিত্র করে তুলতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা থেকে সমসময়ের কলকাতা ধরা পড়েছে এ চিত্রে, জানাচ্ছেন পরিচালক। মঙ্গলবার নন্দন দুইয়ে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ‘রবীন্দ্রনাথ’-এর প্রিমিয়ার শো। সভাপতি বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন। আয়োজক সিনে সেন্ট্রাল। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গানের পিছনে যে গল্প আছে সেই গল্প আর গান নিয়ে সিডি প্রকাশ করতে চলেছে সাংস্কৃতিক সংস্থা শ্রাবস্তি। ২১ ডিসেম্বর ফরচুন সিলেক্ট লাউডনে আত্মপ্রকাশ করবে সিডিটি। রবি ঠাকুরের ১৪টি গান আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্প বলেছেন চৈতালি দাশগুপ্ত ও সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
|
নাট্যমেলা |
কুড়ি বছর ধরে নাটক নিয়ে আলোচনা, নাট্য প্রশিক্ষণ, বিতর্ক সভা, নাট্যপত্র প্রকাশনার মাধ্যমে কাজ করে চলেছে ‘শোহন’ নাট্যগোষ্ঠী। ২০০২ থেকে ‘বিজন থিয়েটার’কে স্বমহিমায় ফেরাতে আরও তিনটি নাট্যদলের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করার যে কাজ শুরু করেছিলেন এই নাট্যগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা, তারই প্রেক্ষিতে বিজন থিয়েটার উৎসব। দেশ-বিদেশের নাট্যদলগুলিকে নিয়ে এই উৎসব এ বার নবম বর্ষে পড়ল। ২৪-৩০ ডিসেম্বর ১৩টি নাট্যদল এই উৎসবে থাকবে। ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শামিম শাগর’কে সম্মান জ্ঞাপন করা হবে। এ ছাড়া বিজন থিয়েটার প্রাঙ্গণে ‘এবং বাদল সরকার’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে।
|
নিরলস |
নিজেদের কাজের মাধ্যমেই শ্রীরামকৃষ্ণের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে বিবেকানন্দ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেন্টার। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই শাখা সংগঠনটি বর্তমানে উত্তর কলকাতার রামবাগান, দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর এবং পূর্ব কলকাতার তিলজলা বস্তিতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে। ১৯৫০-এর দশকে স্বামী লোকেশ্বরানন্দের হাত ধরে কর্মযজ্ঞের সূচনা। তখনও নরেন্দ্রপুর তৈরি হয়নি। স্বামী লোকেশ্বরানন্দ ছিলেন মিশনের পাথুরিয়াঘাটা আশ্রমের দায়িত্বে। সেখানে কয়েক জন ছাত্রকে নিয়ে রামবাগান বস্তিতে সেবামূলক কাজ শুরু করেন তিনি। একটি বয়স্ক এবং মহিলা ও যুব শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়। ৬০ বছর পরেও সংস্থাটি কর্মকাণ্ড অক্ষুণ্ণ রেখেছে। বিভিন্ন বস্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা, সেলাই, ছবি আঁকা, বাঁশের কাজ, লেদ চালনা শিবির চালায় সংস্থাটি। ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী মাসিক পাঁচশো টাকা সাম্মানিকের বিনিময়ে এই কাজ করে যাচ্ছেন। এই পরিষেবা যাতে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছয়, শ্রীরামকৃষ্ণের ১৭৫ তম জন্মবার্ষিকীতে সেটাই লক্ষ্য সংস্থার।
|
চন্দ্রনাথের খোঁজে |
দ্বারকানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে ছিলেন চন্দ্রনাথ (১৮৪১-১৯০৫)। সেন্ট পল্স কলেজের এই খ্রিস্টান ছাত্রটি ১৮৭৪-এ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন। ১৮৭২-এই তিনি কিন্তু লিখে ফেলেছেন হাওড়া: পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট নামে একটি মূল্যবান বই, বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা তখনও শৈশবে। বইটি এখন সুদুর্লভ, রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ জেলা গেজেটিয়ার্সের উদ্যোগে তা এ বার পুনর্মুদ্রিত হতে চলেছে টীকা, মানচিত্র, আলোকচিত্র-সহ। এই বিভাগ থেকে ইতিমধ্যেই বিশ শতকের দুর্লভ জেলা গেজেটিয়ার্সের নানা খণ্ড পুনর্মুদ্রিত হয়েছে, বিশেষ করে উল্লেখ্য সম্প্রতি খুবই যত্নে প্রকাশিত জন এফ গ্রুনিং-এর জলপাইগুড়ি (২৭৫.০০)। কিন্তু চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেও ঠেকে গিয়েছে একটি জায়গায়, তাঁর জীবন সম্পর্কে বিশেষ তথ্য না মেলায়। কোথায় গেলেন তাঁর উত্তরসূরিরা? সল্ট লেকের বিকাশ ভবনে গেজেটিয়ার্স দফতরে এখন তারই অপেক্ষা। |
বিস্মৃত শিল্পী |
১৯৩৩। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর প্রথম প্রদর্শনীতে ছিল তাঁর দু’টি ছবি। আঁকা শেখা কিশোরী বয়সেই, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। সঙ্গে গান ও লেখালেখি। পরে বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেলেও সম্প্রীতি দেবী ছিলেন সে কালের যথেষ্ট প্রতিভাবান শিল্পী (সঙ্গের ছবি)। সম্পর্কে পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের বড়দিদি। ১৯৬৫-তে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘আর্টিস্টস ওন’ পত্রিকা। ১৯৬০-এর দশকে তিনি আবার অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন, প্রদর্শনীও করেন। লেডি রাণুু ছবি আঁকার জন্য তাঁকে অ্যাকাডেমির একটি ঘর দিয়েছিলেন। পঁচানব্বই বছর বয়সে সম্প্রীতি দেবী মারা যান। এ বছর শতবার্ষিকীতে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে অ্যাকাডেমির ৭৬তম বার্ষিক প্রদর্শনীতে থাকছে তাঁর আঁকা ছবি (১৮ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি)। সূচনার দিনে ‘লেডি রাণু মুখার্জি মেমোরিয়াল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১০’ অর্পণ করা হবে রবীন মণ্ডলকে। এ দিকে ২২-২৩ ডিসেম্বর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে চারু ও কারু শিল্পের বিশেষ উৎসব। সরা ও পট পরম্পরার লোকশিল্পীদের সঙ্গে বসে কাজ করবেন প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীরা। ঘুড়ি, হাতপাখার মতো বাতাসি প্রেক্ষাপটে লাগবে তাঁদের হাতের ছোঁয়া। মস্ত একটা শূন্য চিত্রপটে শিল্পকলা বিভাগের সে-কাল এ-কালের শিক্ষক-ছাত্ররা একসঙ্গে ছবি আঁকবেন। নানা ধরনের স্টলে মিলবে বিচিত্র শিল্পসম্ভার।
|
নগর-চিত্র |
উনিশ শতক জুড়ে কী ভাবে গড়ে উঠেছিল কলকাতা? এক দিকে নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়া, অন্য দিকে চওড়া রাস্তা, পাকা নর্দমা, উপযুক্ত প্রশাসনিক বাড়িঘর তৈরি, আরও কত কী। এর টুকরো-টাকরা ছড়িয়ে আছে নানা বইয়ে, কিন্তু আসল আকর-ভাণ্ডার আছে লেখ্যাগারে। ডিরেক্টরেট অব স্টেট আর্কাইভস সেই সব নথি সাধারণের হাতের নাগালে আনতে চাইছে অনেক দিন ধরেই। রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত নথির সংগ্রহের পর এ বার হাতে এল সিলেক্ট ডকুমেন্টস অন ক্যালকাটা ১৮০০-১৯০০ (সম্পা: অতীশ দাশগুপ্ত, সম্পাদনা-সহযোগী বিদিশা চক্রবর্তী ও শর্মিষ্ঠা দে, ১৮০০.০০)। অনেক দিনের পরিশ্রমে ৫০০ পাতার যে তথ্যসম্ভার উন্মুক্ত হল, তা বিস্ময়কর। শহরের বৃদ্ধি, শহরের ‘শহর’ হয়ে ওঠা, পরিকাঠামো গঠন, প্রশাসনিক অগ্রগতি আর এ সব কিছুর প্রতিক্রিয়া নথির পর নথিতে স্পষ্ট। কিন্তু এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। লেখ্যাগারের বিপুল ফার্সি নথির কথাই ধরা যাক, সে সব তো পড়েই আছে লোকাভাবে। আর কত দিন প্রান্তিক থাকবে এমন বিভাগ? কিছু কি করা যায় না?
|
শ্রীমতী |
বছর কয়েক পর অভিনয়ে ফিরলে কী হবে, কে ভুলতে পেরেছে ‘অসুখ’ আর ‘উৎসব’-এ তাঁর অভিনয়? ‘অসুখ’-এ আবার নিজের গলায় রবীন্দ্রনাথের গানও গেয়েছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছাড়াও প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী, শক্তি সামন্তের ছবিতেও কাজ করেছেন অর্পিতা পাল। সম্প্রতি অভীক মুখোপাধ্যায়ের ‘একটি তারার খোঁজে’র সূত্রে আবার তিনি শিরোনামে, কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন অঞ্জন দত্তের ছবিতে। আর ওডিয়ন নাট্যোৎসবে ২০ ডিসেম্বর কলামন্দিরে সন্ধে ৭টায় তাঁর প্রথম নাট্যাভিনয়। রবীন্দ্রনাথ অবলম্বনে কৌশিক সেনের পরিচালনায় স্বপ্নসন্ধানী-র নতুন নাটক ‘নটীর পূজা’য়, শ্রীমতী-র চরিত্রে। গান-নাচের তালিম নিয়ে বড় হলেও স্কুল-কলেজে কখনও অভিনয় করেননি নাটকে। ‘আসলে আর অভিনয় ছেড়ে থাকতে পারছিলাম না। অভিনয়ের যে খিদেটা আমায় ফিরিয়ে আনল ছবিতে, সেটাই সাহস জুগিয়েছে থিয়েটারে কাজ করার। তা ছাড়া কৌশিক রবীন্দ্রনাথের শ্রীমতীর মধ্যে যে ভাবে মণিপুরের প্রতিবাদী শর্মিলা চানু-কে এনেছে, তাতে চরিত্রটা আরও চ্যালেঞ্জিং আমার কাছে।’ সহমত কৌশিকও: ‘রাষ্ট্র তো কৌশলে শর্মিলাকে প্রান্তিক করতে চাইছে, শ্রীমতীকেও সে ভাবেই প্রান্তিক করা হয়েছিল, তাই এ-দু’য়ের সাযুজ্য খুঁজেছি। অর্পিতার অভিনয় দেখে দর্শক সারপ্রাইজড হবেন গ্যারান্টি!’ ২৫ ডিসেম্বর মধুসূদন মঞ্চে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ওদের দ্বিতীয় অভিনয়। |
|
|
|
শ্রদ্ধার্ঘ্য |
ছোটবেলায় ছবি আঁকা শেখা পটুয়াদের কাছে, বড় হয়ে এক নতুন শিল্পরীতিই তৈরি করলেন বাঁকুড়া-র বেলিয়াতোড় গ্রামের যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২)। গ্রামের পড়া শেষ করে কলকাতায় আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। অল্প বয়সেই ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব আর্ট’-এর পত্রিকায় ছবি ছাপার সুযোগ হয়েছিল যামিনী রায়ের। ১৯৩৪-এ ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক পান। প্রথম জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন যেমন, পরে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন। ১৯৫৫-এ পান পদ্মভূষণ। অনেক বার বিদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেলেও দেশ ছেড়ে যাননি কোথাও। থাকতেন বাগবাজারের আনন্দ চ্যাটার্জি লেনে। ‘সুতানুটি বইমেলা কমিটি’-র উদ্যোগে রাজবল্লভপাড়ার মোড়ে এ বার বসানো হচ্ছে শিল্পীর একটি আবক্ষ ব্রোঞ্জ মূর্তি, স্থানীয় পৌর-প্রতিনিধি পার্থ মিত্রের ‘এলাকা উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়ন’ তহবিলের অর্থে। সম্ভবত এই প্রথম শহরের কোনও প্রকাশ্য স্থানে কোনও শিল্পীর মূর্তি বসছে। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছ’টায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরোহিত্যে নব পাল ও অমল পালের তৈরি ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন, ভারতীয় সংগ্রহালয়ের অধিকর্তা অনুপ মতিলাল প্রমুখ। প্রকাশিত হবে প্রণব বিশ্বাস সম্পাদিত, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধদেব বসু বিষ্ণু দে অশোক মিত্র শঙ্খ ঘোষ পরিতোষ সেন বিকাশ ভট্টাচার্য প্রমুখের লেখা নিবন্ধ-সংকলন যামিনী রায় শ্রদ্ধার্ঘ্য (সুতানুটি বইমেলা কমিটি, ১৫০.০০) শীর্ষক সচিত্র স্মারক-গ্রন্থটিও। |
|
|
|
|
|
|
|