তরতরিয়ে এগোচ্ছিল টলিউড। সেই গল্প একটা বড়সড় ধাক্কা খেল রবিবার।
টলিউডের টেকনিশিয়ানরা রবিবার সকালে দাবি জানান, অবিলম্বে তাঁদের ৪০ শতাংশ বেতন বাড়াতে হবে। না হলে তাঁরা শু্যটিং করবেন না। আটকে যায় দু’দু’টি ছবির শু্যটিং। ক্ষতি হয় লাখ লাখ টাকার। এই ভাবে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে বেতন বাড়ানোর দাবিতে ক্ষুব্ধ প্রযোজকরা। প্রযোজক-টেকনিশিয়ানদের এই বিতণ্ডায় টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির আকাশে হঠাৎই কালো মেঘ।
রবিবার জোকায় বন্ধ হয়ে যায় প্রসেনজিতের ছবির শু্যটিং। ক্ষতি হয়েছে দু’লক্ষ টাকার। ছবির প্রযোজক হিমাংশু ধানুকা, পরিচালক রাজীব কুমার। এনটি ওয়ান স্টুডিওয় শু্যটিং থামাতে হয় ঋ
তুপর্ণা সেনগুপ্তকে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মুক্তধারা’-য় কাজ করছিলেন ঋ
তুপর্ণা। শিবপ্রসাদ বললেন, “ইমপা (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন) আমাদের ছবির প্রযোজককে টেকনিশিয়ানদের বেতন বাড়ানো নিয়ে কোনও নির্দেশ পাঠায়নি। ইমপা-র কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ না পেলে এই দাবি মানা সম্ভব নয়। তাতে যদি শু্যটিং বন্ধ হয়ে যায়, যাবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, এক দিন কাজ বন্ধ হওয়ায় ইতিমধ্যেই আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। |
সোমবার প্রযোজক-টেকনিশিয়ানরা বৈঠকে বসবেন। তাতে জটিলতা না কাটলে টলিউডের জন্য আরও দুর্দিন অপেক্ষা করছে। প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের ‘পাঁচ অধ্যায়’-এর একটি শিডিউল শুরু হওয়ার কথা সোমবার থেকে। টেকনিশিয়ানরা কাজ না করলে কী হবে, বলা যাচ্ছে না। রবি কিনাগির পরিচালনায় জিৎ অভিনীত একটি ছবির আউটডোর ছিল সোমবার। পিছোতে পারে সেটাও। আগামী জানুয়ারি থেকে দেব-কোয়েলের ‘পাগলু টু’-এর কাজ শুরু হওয়ার কথা। অচলাবস্থা না কাটলে থমকে যেতে পারে তার কাজও।
টেকনিশিয়ানরা কী বলছেন? টেকনিশিয়ানদের ফেডারেশনের তরফে অপর্ণা ঘটক বললেন, “টাকা বাড়ানো নিয়ে ইমপা-কে কিছু দিন ধরেই বলা হচ্ছে। কিন্তু ওরা সহযোগিতা করছে না। আমাদের কর্মীরা প্রায় উপোস করার মুখে। তবু প্রযোজকরা অবস্থাটা বুঝতে চাইছেন না। উল্টে অভিযোগ করছেন, আমরা নাকি হুমকি দিয়েছি বেতন না বাড়ালে সোমবার থেকে শু্যটিং বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেটা একেবারেই মিথ্যে।” তাঁর আরও দাবি, “সাড়ে চার বছর ধরে টেকনিশিয়ানদের মাইনে বাড়েনি। অথচ জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে কর্মীদের না খেয়ে মরতে হবে।”
হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধের বিষয়টি অপর্ণা অস্বীকার করছেন। কিন্তু প্রযোজকদের আশঙ্কা, শু্যটিং কিছু দিন বন্ধই থাকবে। ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনি বলছেন, “যদি শু্যটিং স্পটে টেকনিশিয়ানরা গিয়ে ঝামেলা করেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে শু্যটিং বন্ধ করে দেব। ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কোনও দাবি মানবে না।” টেকনিশিয়ানরা যদি তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন? মহেন্দ্র সোনি বললেন, “অচলাবস্থা চললে দৈনিক অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে ইন্ডাস্ট্রির।” টেকনিশিয়ানদের একবগ্গা মনোভাবই কি এই সমস্যার জন্য দায়ী? পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, “শু্যটিং বন্ধ করা ঠিক হয়নি। কিন্তু টেকনিশিয়ানদের বেতন অনেক দিন বাড়েনি। সেটাও প্রযোজকদের ভাবতে হবে।” টলিউডের সিনিয়র সদস্যদের কেউ কেউ মনে করছেন, বেতন বাড়ানোর দাবিটা সম্পূর্ণত অন্যায্য নয়। তবে টেকনিশিয়ানদের মধ্যে নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তাতেই বিষয়টা জটিল হয়ে যাচ্ছে।
রবিবার অবশ্য কল্যাণ বসুর নির্দেশনায় রূপা-স্বস্তিকা-আবিরের ‘আসব আর এক দিন’-এর শু্যটিং হয়েছে। কার্যনির্বাহী প্রযোজক অরিন্দম শীল বললেন, “গত ১৫ তারিখ থেকে টেকনিশিয়ানরা টাকা বাড়ানোর কথা বলছেন। ওঁরা কাজ বন্ধ করে দিলে ছবির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।” অরিন্দমের বক্তব্য, “টেকনিশিয়ানদের এক তরফা দাবি মেনে নেওয়া কঠিন। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।” একই মত হিমাংশু ধানুকার। হিমাংশু বলছেন, “টেকনিশিয়ানদের দাবি অন্যায্য। বসে কথাবার্তা বলে উপায় খুঁজতে হবে।’’
সোমবারের বৈঠকে এই মেঘ কাটবে কি?
|
|
একটি বাংলা ছবির শুটিংয়ের মহরতে প্রসেনজিতের সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) আবির চট্টোপাধ্যায়,
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল এবং ঋদ্ধিমা। ছবি: সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় |
|