বিনোদন নিঃসঙ্গতার গল্পে মিশছে রাজনীতির স্বর
নপ্রিয়তার দু’টি স্রোত এবং সেই দুই স্রোতের প্রতিনিধি একটি মুখ। এখন একসঙ্গে।
এক দিকে রাজনৈতিক নাটকের ধারা, অন্য দিকে নিঃসঙ্গ বার্ধক্যের পারিবারিক কাহিনি। এ বার এই দু’টো জনপ্রিয় ধারাকে একটি গল্পে মিশিয়ে দিয়ে দর্শকের নজর কাড়তে চাইছে দেবাশিস মজুমদারের ‘দহনান্ত’। গত কয়েক বছরে ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ বা ‘রুদ্ধসঙ্গীতে’র মতো রাজনৈতিক নাটকের পাশাপাশি তুমুল সাফল্য পেয়েছে ‘কাছের মানুষ’ বা ‘অজ্ঞাতবাসে’র মতো নিঃসঙ্গ বার্ধক্যের সমস্যা নিয়ে তৈরি নাটক। ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ ১৩৪টি শো হয়েছে। ‘রুদ্ধসঙ্গীতে’র শো ৮০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ‘কাছের মানুষে’র শো ১২৫-এর আগেপিছে। ‘অজ্ঞাতবাস’ ১৩১টি
শো হয়েছে।
‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ এবং ‘কাছের মানুষ’ তিনটি নাটকেই প্রধান চরিত্রে ছিলেন দেবশঙ্কর হালদার। ‘দহনান্তে’ও মূল ভূমিকায় তিনি। দেবশঙ্কর নিজে বলছেন, “রিহার্সাল দিতে গিয়ে বারেবারেই মনে হয়েছে, এই চরিত্রটা যেন চিনি। আগে যেন দেখেছি একে।” ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ থেকে ‘দহনান্ত’, একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বলেই মনে করছেন তিনি। ‘দহনান্তে’ মাওবাদী সন্ত্রাস, লাশ নিয়ে রাজনীতির গল্প একই সঙ্গে উস্কে দিচ্ছে সোদপুরের বৃ্দ্ধ দম্পতির স্মৃতি। নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন যাঁরা। দেবাশিসবাবু জানাচ্ছেন, “নাটকটা লেখা হয়েছিল ২০১০-এ। মঞ্চস্থ করতে আরও কিছুটা সময় গেল। তার মধ্যে সোদপুরের ঘটনাটা ঘটে যাবে, ভাবিনি। কিন্তু এখন যখন দর্শকরা দেখছেন, তাঁরা ওই ঘটনাটারই ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন।”
দহনান্ত নাটকের একটি দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক বছরে ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ ছাড়াও লাগাতার জনপ্রিয় হয়েছে আরও একগুচ্ছ রাজনৈতিক নাটক। অর্পিতা ঘোষের পশুখামার, বিভাস চক্রবর্তীর শৃন্বন্তু কমরেডস, কৌশিক সেনের বীরপুরুষ, আশিস চট্টোপাধ্যায়ের ভূতপুরাণ..। এবং এই জনপ্রিয়তা রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ আসার পরেও অটুট রয়েছে। কেন? নাট্যপরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতে, “কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতি একটা অগাধ দায়বদ্ধতার বোধ থেকে বাম আমলে শিল্পীরা দীর্ঘদিন চুপ ছিলেন। নাটক তার রাজনৈতিক ভাষা হারিয়ে একটা নির্বিকল্প সমাধির স্তরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই সময়টা অনেক আলাদা। এখন মানুষ অনেক দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে অভ্যস্ত।” দর্শকদের মতও অনেকটা তাই-ই। পেশায় কলেজ শিক্ষিকা, নাট্যদর্শক শম্পা মুখোপাধ্যায়ের মতে, “পরিবর্তন এলেও সেই রাজনৈতিক আবহটা এখনও খুব দূরের হয়ে যায়নি। তা ছাড়া বাঙালি দর্শক তো রাজনৈতিক নাটককেই চিরকাল গ্রুপ থিয়েটারের মূল স্তম্ভ জেনে এসেছেন। মাঝখানেই বরং কিছু সময় নাটক সেটা হারিয়ে ফেলেছিল।”
সুমন-শম্পার বক্তব্য মিলে যাচ্ছে নাট্যমঞ্চের বাস্তবতার সঙ্গে। কারণ, পরিবর্তন-উত্তর যুগেও একের পর এক রাজনৈতিক নাটক দর্শক টানতে সফল হচ্ছে। কৌশিক সেনের ‘সেই সুমৌলি’তে একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে ১৩ মে তারিখটি, যেদিন বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোল। এখনও অবধি ১০টি শো হয়েছে নাটকটির। কৌশিক জানাচ্ছেন, “আমাদের দলের নাটকগুলির মধ্যে টিকিট বিক্রির অঙ্কে পয়লা নম্বরে রয়েছে সেই সুমৌলি।” কৌশিকের ব্যাখ্যা, “পরিবর্তনের আগের বেশির ভাগ নাটকগুলোয় একটা একমুখী সমালোচনা ছিল। এখন কিন্তু মানুষ একটা নৈর্ব্যক্তিক স্বর শুনতে চাইছেন।” সেই চাহিদার দিকে তাকিয়েই শিল্পীর সঙ্গে ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘আমরা-ওরা’ বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে স্বপন সেনগুপ্তের ‘শ্রীশম্ভু মিত্র’। এখনও অবধি ৫টি শো হয়েছে। হাউসফুল। চন্দন সেনের ‘লাল-সবুজ’ নাটকে দেখা যাচ্ছে একটি মানুষকে, যার চোখে লাল আর সবুজ ছাড়া অন্য কোনও রং ধরা পড়ছে না। এ নাটকের শো ছাড়াল ৮।
‘দহনান্ত’ এক দিকে এই স্রোতেই পা মেলাচ্ছে। এখনও অবধি ৬টি শো হয়েছে। দর্শকের ভিড় চোখে পড়ার মতো। নাটক দেখে বেরিয়ে প্রৌঢ় নাট্যদর্শক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলে উঠছেন, “বাবা-মা আর সন্তানের দূরত্ব এখন প্রায় প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারেই। সেটাই ফের দেখতে পেলাম মঞ্চে।” এক ছেলে চাকরি সূত্রে আমেরিকায়। মাওবাদী ছোট ছেলে মারা গিয়েছে পুলিশের গুলিতে। নিঃসঙ্গ বাবা-মা একসঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন! রাজনৈতিক বাংলা নাটকের গতিপথ এই বিন্দুটিতেই এসে পৌঁছল তবে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.