কার নির্দেশে মগরাহাটের গ্রামে বাড়তি পুলিশ পাঠানো হয়েছিল এবং কার নির্দেশে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ, বিচার বিভাগীয় তদন্তেই তার উত্তর মিলবে বলে আশা করছে সিপিএম।
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, এগুলো গুরুতর প্রশ্ন। বুধবার তিনি বলেন, আরও একটি বড় প্রশ্ন হল, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার মহাকরণে থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী সময়মতো গুলির খবর পেলেন না কেন?
বিচার বিভাগীয় কমিশনের বিচার্য বিষয়ের ব্যাপারে সূর্যবাবু এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বলেন, এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা জরুরি। অথচ প্রশাসনিক তদন্তে এর সম্পূর্ণ জবাব পাওয়া সম্ভব নয়। জবাবের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের উপরেই ভরসা করতে হবে।
বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেও প্রশাসনিক নির্দেশে ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও-র অপসারণ নীতিসম্মত কি না, বিরোধী শিবিরে সেই প্রশ্নও উঠছে। মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনা ও প্রাণহানি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য এ দিনই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। প্রাক্তন বিচারপতি প্রবীর সামন্তের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিশন এই তদন্ত করবে। রিপোর্ট পেশ করতে হবে ছ’মাসের মধ্যে।
গত ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট এলাকায় হুকিং কেটে দেওয়ার অভিযানে পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। প্রাথমিক পুলিশি তদন্তের পরে মগরাহাট থানার ওসি-কে ‘ক্লোজ্ড’ করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও-কে। কিন্তু এই নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত শনিবার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী এ দিন সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।
মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনায় যে-সব প্রশ্ন উঠেছে, বিচার বিভাগীয় তদন্তে সেগুলিরই উত্তর উঠে আসা উচিত বলে দাবি করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেছেন, “মগরাহাটের ওই গ্রামে বিদ্যুৎকর্মীদের সঙ্গে বাসিন্দাদের হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা চলছিল বলেই আমরা রিপোর্ট পেয়েছিলাম। আমাদের প্রতিনিধিদল ঘুরে আসার পরে সে-কথা আমরা জানিয়েও দিয়েছিলাম।” তাঁর প্রশ্ন, তার পরেও কার নির্দেশে সে-দিন ওই গ্রামে বাড়তি পুলিশ পাঠানো হয়েছিল? কার নির্দেশেই বা গুলি চালানো হয়?
মগরাহাটে গুলি চালানোর দিনে ঘটনাস্থলে এক জন কনস্টেবলকে কার্বাইন হাতে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের কর্তারা উদ্বিগ্ন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন এক জন পদস্থ পুলিশ অফিসারের দেহরক্ষীর হাতেও কার্বাইন ছিল। সেই কার্বাইন থেকে গুলি চলেছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। মগরাহাটে কার্বাইনের মতো আধা-স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চলে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই তাঁরা অতি মাত্রায় সতর্ক বলে জানান কয়েক জন পুলিশকর্তা। ওই ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নপরাজিত মুখোপাধ্যায় জেলাগুলিতে জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কনস্টেবলদের হাতে কার্বাইন যাতে না-থাকে, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। |