বহরমপুর, জঙ্গিপুরের পরে এ বার কান্দির কলেজও উত্তপ্ত হয়ে উঠল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে। কলেজ নির্বাচনকে ঘিরে পরপর অশান্তির ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনও। শুক্রবার জেলার সব ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে।
সামনের ১৭ ডিসেম্বর জেলার ১৫টি কলেজের ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন হবে। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর এই নির্বাচন হয়েছিল। ১৫টি কলেজের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছিল এসএফআই। ৬টি পেয়েছিল ছাত্র পরিষদ। এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদের সঙ্গেই এই লড়াইয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উঠে আসায় ইতিমধ্যেই কলেজ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ পর্যন্ত বহরমপুর, জঙ্গিপুর ও কান্দি সর্বত্রই রাজ্যে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ হয়েছে। দু’টি ছাত্র সংগঠনই পরস্পরের বিরুদ্ধে এসএফআইয়ের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। বিভিন্ন কলেজে বারবার সংঘর্ষে দুই সংগঠনেরই বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। পঠন-পাঠন ব্যাহত হচ্ছে অনেক কলেজে। |
জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে কলেজ নির্বাচনের জন্য সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে শুক্রবার বৈঠক ডাকা হয়েছে।” জেলাশাসক জানিয়েছেন, গতবার নির্বাচনের সময় যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এ বারও সেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বার কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল?
কলেজ থেকে ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত নির্বাচনের দিন জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়া কলেজে প্রবেশাধিকার ছিল না কারও। সর্বত্রই ছিল বিশাল সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী।
এ বার ইতিমধ্যেই কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “সর্বত্রই পুলিশি টহলদারি রয়েছে। একই দিনে নির্বাচনের জন্য সব রকম পুলিশি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে গোলমালের আশঙ্কা তো রয়েইছে।” সেই সঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয়কুমার ঘোষের কথায়, “জেলার কলেজগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি আমরা জানি। কী ধরনের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তা-ও জানি। তাই সব দিক বিবেচনা করেই কলেজ ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।”
কিন্তু তারপরেও একের পর এক ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছে বিভিন্ন কলেজে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামানের অভিযোগ, “রাজ্য রাজনীতিতে পরিবর্তনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলার কলেজগুলিতে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা। |
তাদের মদত দিচ্ছে এসএফআই। এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করতে গেলেই সংঘর্ষ ঘটাচ্ছে তারা। প্রশাসন ও পুলিশ সব দেখেশুনেও সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থ পালের কথায়, “কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদ আমাদের আটকাতে অনেক কলেজে এসএফআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।”
কেন এই দুই ছাত্র সংগঠন জোট করে লড়ছে না? হাসানুজ্জামানের দাবি, “এ জেলায় এসএফআইয়ের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাই কলেজ ভোটে তাদের সঙ্গে জোট হওয়ার প্রশ্নই নেই।” তাঁর আশা গত বার ৬টি কলেজে ছাত্র পরিষদ জিতলেও এ বার তাঁরা জিতবেন অন্তত ১০টি কলেজে।” পার্থবাবুর বক্তব্য, “ছাত্র পরিষদের ছেলেরা সর্বত্রই অশান্তি তৈরি করছে। আমাদের আশঙ্কা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, সন্ত্রাস তত বাড়বে। তবে এ বার আমাদের ভাল ফল হবে ডোমকল, বহরমপুর কলেজ ও লালবাগে। আরও ৫টি কলেজেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ভাল অবস্থাতেই থাকবে।”
বামবিরোধী জোট কলেজ নির্বাচনে না হওয়ার ‘সুবিধা’ এসএফআই কতটা ভোটবাক্সে প্রতিফলিত করাতে পারবে, তা সময়ই বলবে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য কোনও ছাত্র সংগঠনকেই ‘মদত’ দেওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ সব দাবি করলেই হবে না। কেউ বিশ্বাস করবে না। সর্বত্রই লড়াই হবে।” তাঁর বক্তব্য, “গত বছর পরিবর্তনের হাওয়াতেও ৯টি কলেজ পেয়েছিলাম আমরা। এ বার ১০টি পাব বলে আশাবাদী আমরা।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “আমাদের আশঙ্কা সন্ত্রাস করে জেতার মরিয়া চেষ্টা করবে পরিবর্তন জোটের শরিকেরা। প্রশাসনকে বলেছি, যতই সন্ত্রাস চলুক, এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না এসএফআই।” কান্দির রাজা বীরেন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রদেশ ঘোষ বলেন, “কলেজ নির্বাচন নিয়ে এত সব অশান্তির পিছনে রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ এ সব পছন্দ করে না।” |