সম্পাদকীয় ১...
চিন হওয়ার সাধনা
রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর ইউ পি এ সরকারের রাশ যত শিথিল হইতেছে, তাহার নিয়ন্ত্রণপ্রবণতাও ততই বাড়িতেছে। সাম্প্রতিকতম উদাহরণটি দুই দিন পূর্বের। কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী কপিল সিব্বল ফেসবুক, গুগ্ল বা ইয়াহু-র ন্যায় বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটকে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর যে কোনও ব্যক্তির যে কোনও মন্তব্যকে সাইটে স্থান দিবার পূর্বে তাহা বিচার করিয়া দেখিতে হইবে। যদি দেখা যায়, সেই মন্তব্যে ‘আপত্তিকর’, ‘অবমাননাকর’ বা ‘প্ররোচনামূলক’ কিছু নাই, তবে তাহা প্রকাশ করা চলিতে পারে, নচেৎ নহে। কোন মন্তব্যটি আপত্তিকর আর কোনটি নহে তাহার কোনও মাপকাঠি নাই। থাকিবার কথাও নহে। দুর্জনে বলিবে, ইউ পি এ সরকার অথবা তাহার নেতা-নেত্রীদের বিষয়ে তির্যক মন্তব্যই মন্ত্রিমহোদয়ের নিকট আপত্তিকর ঠেকিতেছে। শ্রীসিব্বল অবশ্য বলিয়াছেন, অনেক দুষ্কৃতী বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াইতে চেষ্টা করিতেছে। তাহাদের ঠেকাইতেই এই নিয়ম। দিনে কয়টি টেক্সট মেসেজ করা যাইবে, টেলিভিশনে কোন অনুষ্ঠান দেখানো যাইবে না, ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিবার পর কেন্দ্রীয় সরকার যখন ইন্টারনেটের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াছে, তখন সন্দেহ হইতে বাধ্য চিনের সহিত ভারতের তুলনাটিকে কি নেতারা একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়া ফেলিলেন? কায়মনোবাক্যে চিনের ন্যায় সর্বময় রাষ্ট্র হইয়া উঠিবার এই সাধনাকে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। এই নিয়ন্ত্রণ যে গণতন্ত্রের পরিপন্থী, তাহা বুঝিতে দেশের শাসকদের সমস্যা হইবার কথা নহে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র লইয়া ঢাক পিটাইব আবার প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অপচেষ্টাও চালাইয়া যাইব দুইটি এক সঙ্গে চলিতে পারে না।
নিয়ন্ত্রণের সমর্থকরা প্রশ্ন তুলিতেই পারেন, তাহা হইলে কি ইন্টারনেটে যাহা ইচ্ছা, তাহাই লিখিবার স্বাধীনতা থাকিবে? সেই মন্তব্য যদি কাহারও ভাবাবেগে আঘাত করে, তবুও কি সরকার তাহা রোধ করিবার চেষ্টা করিবে না? প্রথম প্রশ্নটির উত্তর: হ্যাঁ, দ্বিতীয়টির উত্তর: না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মন্তব্য করা বাক্-স্বাধীনতার অন্তর্গত। সরকার তাহাতে হস্তক্ষেপ করিতে পারে না। অন্তত, ভারতের ন্যায় গণতন্ত্রে পারে না। কোনও কথা বলিবার পূর্বে সরকারের অনুমতি লইতে হইবে, এই মর্মে আদেশ জারি করিবার পূর্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার কথা স্মরণ করিলে ভাল। ইন্দিরা গাঁধীর সরকার যে তীব্র জনরোষের সম্মুখীন হইয়াছিল, তাহার মূলে কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপজনিত ক্ষোভই ছিল। কোনও মন্তব্য কাহারও ভাবাবেগে আঘাত করিলে সরকারের কী কর্তব্য, এই প্রশ্নটি অপেক্ষাকৃত জটিল। প্রথম কথা, ভারতের জনসমাজের উপর ভরসা হারাইবার কোনও প্রকৃষ্ট কারণ এখনও নাই। কিছু সুযোগসন্ধানী রাজনীতিক ব্যতীত কেহই অন্য কাহারও ভাবাবেগে সচরাচর আঘাত করেন না। রাজনৈতিক উস্কানি ছাড়া কেহ অত সহজে আহতও হন না। এই আঘাতের যুক্তিটি রাজনীতির হাতিয়ার। মন্ত্রিবর নিজের সিদ্ধান্তের সমর্থনে সজ্ঞানেই তাহা ব্যবহার করিয়াছেন। কাজটি অনুচিত হইয়াছে। আর, সত্যই যদি কাহারও মন্তব্যে কেহ আহত হয়, তাহার প্রতিকারের ব্যবস্থাও এই দেশের সংবিধানেই আছে। অভিযুক্তকে আদালতে লইয়া যাওয়া কঠিন নহে। আদালত যদি তাহাকে দোষী সাব্যস্ত করে, আইন মানিয়া তাহার শাস্তি হইবে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের কোনও স্থান নাই। অনধিকারচর্চার দীর্ঘলালিত কু-অভ্যাসটি ত্যাগ করিয়া ইউ পি এ সরকার যদি যথার্থ শাসনে মনোনিবেশ করে, তবে সরকারেরও লাভ, দেশেরও লাভ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.