অনেকটা পৃথিবীর মতো। আকারে একটু বড়। তাপমাত্রা আনুমানিক ২২ ডিগ্রি। সূর্যের মতোই একটা নক্ষত্রকে ঘিরে অনেক দিন ধরে ঘুরে চলেছে ‘সে’। অবশেষে তার নাম রাখা হল ‘কেপলার-২২বি’। সৌজন্যে নাসা আর কেপলার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। গত কাল একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের সামনে এর কথা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই হইচই পড়ে গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে।
কারণ?
‘কেপলার-২২বি’ গ্রহটিতে যে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা যে প্রবল। এর আগেও একাধিক বার ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক নতুন গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে। তাতে প্রাণ থাকার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু পরে তা নিয়ে আর কোনও কথা শুনতে পাওয়া যায়নি। এ বারে তাই কোনও বিতর্কের অবকাশ রাখতে চাইছে না নাসা। রীতিমতো আটঘাট বেঁধে আসরে নেমেছে তারা। |
নাসার তরফে একবিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছর গ্রহটির প্রথম অস্তিত্ব টের পায় অতি আধুনিক কেপলার দূরবীক্ষণ। আর কেপলারের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতেই গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে কেপলারের নামে। ২০০৯-এর মার্চে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের একটি বিশেষ উপগ্রহের সাহায্যে কেপলারকে মহাকাশে পাঠিয়েছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। উদ্দেশ্য পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে প্রাণের সন্ধান করা। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ‘হ্যাবিটেব্ল জোনে’ (প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ, যেখানে তাপমাত্রা না খুব ঠান্ডা না খুব গরম) যে সব গ্রহ বিভিন্ন নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে তাদের কড়া নজরে রাখা। এবং ওই গ্রহগুলি সম্পর্কে যা তথ্য পাওয়া যায় তা পৃথিবীতে পাঠানো। নাসার দাবি, ২০০৯-এর মার্চ থেকে এখনও পর্যম্ত ১০৯৪টি নতুন গ্রহের সন্ধান দিয়েছে কেপলার। এদের মধ্যে অন্তত ৪৮টি গ্রহে প্রাণ থাকার পরিবেশ আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তা হলে ‘কেপলার-২২বি’ নিয়ে এত উৎসাহ কেন? নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রহটির অবস্থান আর বাইরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা ওই ‘কেপলার-২২বি’-কে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের যা দূরত্ব অনেকটা সে রকমই দূরত্ব ‘কেপলার-২২বি’ আর সেটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে তার মধ্যে। ওই নক্ষত্রটিকে ঘিরে পুরে এক পাক ঘুরতে গ্রহটির সময় লাগে ২৯০ দিন যা অনেকটাই পৃথিবীর কাছাকাছি। এর বাইরের পৃষ্ঠের উষ্ণতা আনুমানিক ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট! পৃথিবীর সঙ্গে এত সাদৃশ্য থাকায় শুধু জল বা বায়ুমণ্ডল নয় সেই সঙ্গে গ্রহটিতে প্রাণ থাকারও সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিজ্ঞানীমহল। তাঁদের এই গবেষণা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ প্রকাশিত হতে চলেছে।
তবে পৃথিবীর থেকে আড়াই গুণ বড় ‘কেপলার-২২বি’ গ্রহটি কঠিন, গ্যাসীয় না তরল তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত নাসার বিজ্ঞানীরা। ‘সান হোস স্টেট ইউনিভারসিটির’ জ্যোতির্বিজ্ঞানী নাটালি বাতাল্লা নাসার এই ‘কেপলার’ অভিযানের অন্যতম গবেষক। তিনি বললেন, “আমরা এক নতুন পৃথিবী খোঁজার পথে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু আরও অনেক পথ যেতে হবে।” বাতাল্লা আরও জানান, কোনও গ্রহে প্রাণ আছে কি না কেপলার তা সঠিকভাবে জানাতে পারে না। তবে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশের সন্ধান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এটি।
কিন্তু আরও তথ্য জানতে এই গ্রহে কোনও মহাকাশযান পাঠানোর চিন্তাভাবনা নাসা করতে পারছে না। কারণ পৃথিবীতে আবিষ্কৃত এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গতিসম্পন্ন মহাকাশযানেরও ওই গ্রহে পৌঁছতে সময় লেগে যাবে প্রায় দু’ কোটি কুড়ি লক্ষ বছর। এতে অবশ্য দমে যেতে রাজি নয় নাসা। ২০১২-র নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করবে কেপলার। তত দিনে ওই গ্রহ নিয়ে আরও অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারা যাবে বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কেপলার প্রকল্পের বিজ্ঞানী ডগলাস হজিনসের কথায়, “পৃথিবীর যমজ খুঁজে পেয়েছি। এটি আমাদের গবেষণার কাজে একটা বড় মাইলফলক।” তবে গ্রহটিতে আদৌ কোনও প্রাণী থাকতে পারে কি না তা নিয়ে গবেষণা চলবে বলে জানান তিনি।
ছ’টি ঋতুর পুরনো পৃথিবী না ‘চির বসন্তের’ নতুন ‘কেপলার-২২বি’ কোনটি মানুষের ভবিষ্যতের ঠিকানা হতে পারে, বিজ্ঞানীদের কর্মপন্থা আর সময়েই হয়তো লুকিয়ে তার উত্তর। |