দলের শীর্ষনেতা কিষেণজি-র হত্যার বদলা নিতে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় মাওবাদীদের ধারাবাহিক নাশকতা বন্ধের দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত। কাল রাতেও ঘটেছে বেশ কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনা। মাওবাদী হামলায় বিহারের মুজফফ্পুরের এক পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী নিহত হয়েছেন, জখম হয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে। ঝাড়খণ্ডে গ্র্যান্ডকর্ড শাখার ধানবাদ ডিভিশনে কাল রাতে ফের রেল লাইন উড়িয়েছে মাওবাদীরা। তার জেরে ওই শাখায় ৯ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া, পলামুতে ব্লক অফিসেও বিল্ফোরণ ঘটানো হয়। মাওবাদীদের ডাকা বন্ধের দ্বিতীয় দিনে ওড়িশাতেও বেশ কয়েকটি জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়েই ছিল।
বিহার পুলিশ জানায়, রবিবার গভীর রাতে মাওবাদীদের সশস্ত্র একটি দল দেওরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কামিনী দেবীর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। প্রধানের পরিবারের সকলেই ঘুমিয়ে ছিলেন। হামলাকারীরা প্রধানের স্বামী মনন সিংহকে ঘরের বাইরে বার করে এনে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর ছেলে বাধা দিতে এলে তাঁকেও গুলি করে মাওবাদীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। |
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন। গোমো ও মতারি স্টেশনের মধ্যে
রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে। ছবি: চন্দন পাল। |
ঝাড়খণ্ড পুলিশ জানায়, রবিবার রাত ১১টা নাগাদ ধানবাদ ডিভিশনের গোমো এবং মতারি স্টেশনের মাঝখানে রেল লাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। বিস্ফোরণে আপ এবং ডাউন দুদিকের লাইন বেশ কয়েক ফুট উড়ে যায়। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও টানা ন’ঘণ্টা গ্র্যান্ডকর্ড শাখার ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। রেলের আধিকারিকেরা জানান, গোমো ও মতারি স্টেশনের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় আপ ও ডাউনের দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে। চরম আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটাতে হয় ট্রেন যাত্রীদের।
পুলিশ জানায়, কাল রাত আটটা নাগাদ পলামু জেলার ছতরপুর ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হয় জনা কুড়ি মাওবাদী। ব্লক অফিস চত্বরে পর পর বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। বিস্ফোরণে ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধসে পড়েছে ভবনের একাংশ। আগুনে পুড়ে যায় বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি। এ দিকে, আজ বেলা দুটো নাগাদ লাতেহারের গারু থানা এলাকায় আচমকা হানা দেয় মাওবাদীরা। গত শনিবার ঠিক যে জায়গায় ল্যান্ডমাইন ফাটানো হয়েছিল, সেই জায়গায় থাকা বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের গাড়িরটি ভগ্নাংশে আগুন ধরিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
বিহার পুলিশ সূত্রে খবর, গয়ার ডুমারিয়ায় কোবরা জওয়ানদের শিবিরে হামলায় সন্দেহভাজন এক মাওবাদীকে আটক করা হয়েছে। গত কালের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ওই আটক ব্যাক্তির পায়ে গুলি লাগে। তাকে সোমবার পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু করেছে। ডিআইজি (মগধ রেঞ্জ) এন এইচ খানের দাবি, “আটক ওই ব্যক্তিকে তাকে জেরা করা হচ্ছে।” |
মাওবাদীদের বোমায় উড়ে গিয়েছে দেওয়াল। পালামুর হরিহরগঞ্জের
ব্লক অফিসে সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
পুলিশ জেনেছে, নভেম্বরের শেষে মাওবাদীরা কোবরাদের ক্যাম্পে আক্রমণের ছক কষেছিল। হামলার পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ফাঁকা কার্তুজের খোলগুলি পরীক্ষা করে দেখেন। কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে হামরাকারীরা গুলি চালিয়েছিল তা জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সেখানে পুলিশ কুকুরও নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে ঔরঙ্গাবাদ জেলার তান্ডোয়া থানা এলাকায় প্রত্যন্ত একটি গ্রামে প্রায় ৫০ জন মাওবাদীর একটি দলের সঙ্গে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর গুলির লড়াই চলে। কেউ হতাহত হননি।
মাওবাদীদের হদিস পেতে গয়া, ঔরঙ্গাবাদ, জহানাবাদ, অরওয়াল এবং নওয়াদা জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপাররা একসঙ্গে অভিযানে নেমেছেন। এ ছাড়া সিআরপিএফ-কে সঙ্গে নিয়েও কোবরা জওয়ান এবং জেলা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। ঝাড়খণ্ডের পুলিশের সাহায্যও নিচ্ছে বিহার পুলিশ। পুলিশ আশঙ্কা করছে মাওবাদীরা ফের যে কোনও সময় আক্রমণ হানতে পারে।
মাওবাদীদের বন্ধে মালকানগিরি, রায়গড়া, গজপতি, সুন্দরগড়, কন্ধমাল-সহ কয়েকটি জেলায় আজ যানবাহন চলেনি। বন্ধ ছিল দোকানবাজারও। |