শ্রীরামপুরে সিপিআইয়ের জেলা সম্মেলন
নতুন প্রজন্মকে টানার সূত্র খোঁজার চেষ্টা নেতৃত্বের
নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটতে চায় সিপিআই।
রাজ্যে টানা ৩৪ বছর শাসনের সুবাদে দলীয় স্তরে আন্দোলন বিমুখতাই তাদের গদিচ্যুত করেছে, নির্বাচন-পরবর্তী বিশ্লেষণে প্রকাশ্যে না হোক, বাম দলগুলির অন্দরে এ নিয়ে ঝড় উঠছে। কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়ছেন দলীয় নেতৃত্ব। ফলে, নতুন করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি এবং মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নতুন প্রজন্মকে কী ভাবে ‘আকৃষ্ট’ করা যাবে, তা নিয়েই মাথাব্যথা শুরু হয়েছে তাঁদের। সিপিআইয়ের ২২ তম হুগলি জেলা সম্মেলনেও ধরা পড়ল একই ছবি।
শুক্রবার থেকে শ্রীরামপুরে ওই সম্মেলন শুরু হয়। শেষ হল রবিবার। প্রথম দিন শ্রীরামপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন গাঁধী ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। পরের দু’দিন সম্মেলন হয় মাহেশের একটি প্রেক্ষাগৃহে। সেখানে ‘আত্মসমালোচনা’র উপরে অনেকটা সময় ব্যয় করা হয়। অনেকেই বলেন, “কৃষক এবং শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করেই বামেদের উত্থান। কিন্তু সেই বাম সরকারই কৃষকদের স্বার্থহানিকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই কারণেই মানুষ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে।” দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেন, “এখন বামফ্রন্টের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। আমাদের সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলতে হবে। মানুষের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে।”
স্রেফ বিরোধিতার কারণে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে তীব্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে নারাজ সিপিআই। এ ব্যাপারে দলের জেলা সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন পালের বক্তব্য, “সরকার নতুন ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কিছুটা সময় অবশ্যই দেওয়া উচিত। উন্নয়নমূলক কোনও কাজে প্রশাসন আমাদের ডাকলেই যাব। বিরোধী থাকার সময় তৃণমূল এটা করেনি। আমরা করব। তবে দুর্নীতি হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে মিটিং-মিছিল করে প্রতিবাদ জানাব।”
দলের একশ্রেণির নেতার ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে আঙুল ওঠে বিভিন্ন সম্মেলনে। প্রিয়রঞ্জনবাবু বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের চলাফেরার ক্ষেত্রে হয়তো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। এ নিয়ে দলে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। নেতৃত্বকে অকারণ সমীহ না করে দলীয় কর্মীরা সোজাসুজি যেন তাঁদের ভুলগুলি ধরিয়ে দেন। তাতে আখেরে দলের ভালই হবে।” আলোচনায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ উঠে আসে। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “সিঙ্গুর-সহ যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গিয়েছে, তার প্রায় সবক’টাই সিপিএম একক ভাবে নিয়েছে। কিন্তু শরিক হিসেবে আমরাও এর দায় এড়াতে পারি না। কিছু ভুল সিদ্ধান্তের নামমাত্র প্রতিবাদ করেছি বামফ্রন্টের সভায়। কিন্তু আওয়াজটা আরও জোরদার করা উচিৎ ছিল। তা হলে হয়তো রাজ্যে বাম জমানা আরও দীর্ঘস্থায়ী হত।”
সিপিএমের সঙ্গে হুগলির নানা জায়গায় টক্কর রয়েছে সিপিআইয়ের। বিশেষ করে আরামবাগে দুই শরিকের সম্পর্ক যথেষ্ট অম্ল-মধুর। দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রায়ই আকচা-আকচি লেগে থাকে। আলোচনার মাধ্যমেই দল এই সমস্যা মেটাতে চায় বলে সিপিআই নেতারা জানিয়েছেন।
মঞ্জুকুমারবাবু, প্রিয়রঞ্জনবাবু ছাড়াও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের জাতীয় পরিষদের কার্যকরী সমিতির সদস্য পল্লব সেনগুপ্ত, দলের নেতা দেবাশিস দত্ত, অশোক রায়, ধীরেন দাশগুপ্ত প্রমুখ। প্রকাশ্য সমাবেশে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনীতির বিরোধীতায় সোচ্চার হন পল্লববাবুরা। পল্লববাবু বলেন, “বিশ্ব পুঁজিবাদের প্রতিফলন পড়ছে আমাদের দেশেও। ধনতন্ত্রের পথে চলেছে দেশ। ফলে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের পকেট উপছে পড়ছে। আর, গরিব আরও গরিব হচ্ছে। কেন্দ্রকে এই নীতি বদল করতে হবে। কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থরক্ষা হয়, এমন আর্থিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অবিলম্বে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” কিষেণজির মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবি জানান মঞ্জুকুমারবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.