বিজ্ঞান ও প্রজুক্তি: ঈশ্বর কণা-ধাঁধা ১৩ তারিখে ‘ব্রেকিং নিউজ’,
অপেক্ষায় বিজ্ঞানীরা

সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের কাছে ১৩ সংখ্যাটি অশুভ হতে পারে, তবে বিশ্বব্যাপী পদার্থবিজ্ঞানীরা কিন্তু সাগ্রহে তাকিয়ে আছেন তেরো ডিসেম্বর তারিখটির দিকে। ওটি কি হতে চলেছে ‘ডি-ডে’?
ঈশ্বর কণা, যার খোঁজ চলেছে জেনিভার অদূরে সার্ন গবেষণাগারে, তার অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব কি ঘোষণা হবে ওই দিন?
উপলক্ষ, সার্ন গবেষণাগারে বিশেষ এক আলোচনাচক্র। যেখানে নিজেদের পরীক্ষার ফলাফল পেশ করবেন দু’দল বিজ্ঞানী। ওঁদের পরীক্ষা প্রায় দু’বছর ধরে চলেছে অ্যাটলাস এবং সিএমএস নামে দু’টি ডিটেক্টর যন্ত্রে।
সার্ন-এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি)-এ সেকেন্ডে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে প্রোটন কণা। হয়েছে চূর্ণবিচূর্ণ। সেই টুকরোগুলির মধ্যে কি মিলেছে ঈশ্বর কণার চিহ্ন? প্রশ্নটির উত্তর, অন্তত প্রাথমিক ভাবে, মিলতে পারে ১৩ ডিসেম্বর তারিখের ওই সেমিনারে।
হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয়ে নির্মিত এলএইচসি। তার নির্মাণের মূলে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ওই ঈশ্বর কণা আবিষ্কার। বিশ্বসংসার কণাময়। অথচ এক একটি কণার ভর এক এক রকম। কেন? এই মহাপ্রশ্নের উত্তর দিতে পারে ঈশ্বর কণা। কারণ, বিজ্ঞানীরা মনে করেন,
ওই কণাটি আর সব কণাকে ভর জোগায়। কণাদের ভর বিনা এই ব্রহ্মাণ্ড হত এক্কেবারে অন্য রকম। গ্রহ-তারা-ছায়াপথ কিংবা মানুষ-পশু-পাখি কিছুরই চিহ্ন থাকত না এখানে। ভরের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জোগায় বলেই কণাটির নামের সঙ্গে জুড়েছে ওই ‘ঈশ্বর’ বিশেষণ।
নানান কণার আচরণ ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীদের যা একমাত্র সম্বল, সেই ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ তত্ত্বে প্রায় প্রাণপুরুষ বলা যায় ওই ঈশ্বর কণাকে। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, ওটির অস্তিত্ব এখনও ধরা পড়েনি। সে জন্যই ঈশ্বর কণা শনাক্ত করার জন্য বিজ্ঞানীদের মরিয়া চেষ্টা। এ হেন উদ্যোগের ফলাফল জানতে গবেষকদের কৌতূহলের সীমা নেই। উত্তেজনা এমনই পর্যায়ে যে, এ বছরের গোড়ায় সার্ন-এর এক গবেষক এক ব্লগে খবর রটিয়ে দেন যে, ঈশ্বর কণা নাকি শনাক্ত হয়েছে। উড়ো খবরে হইচই। অচিরে জানা যায়, সেটা পরীক্ষার ফলাফল দেখে ওই বিশেষ গবেষকের নিজস্ব অনুমান। সার্ন কর্তৃপক্ষ কড়া নির্দেশ জারি করেন, অহেতুক গুজব ছড়ানো চলবে না।
প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষে চূর্ণবিচূর্ণ টুকরোর মাঝে ঈশ্বর কণার খোঁজ কেমন কাজ? অগস্ট মাসে মুম্বইতে গবেষকদের এক সম্মেলনে সার্ন-এর ডিরেক্টর জেনারেল রল্ফ হাওয়ার বলেছিলেন, “ব্যাপারটা যেন একটির বদলে হাজারটা খড়ের গাদার ভিতর থেকে একখানি সুচ খোঁজা। অথবা বলতে পারেন, তুষারাবৃত পর্বতের উপর তুষারপাতের ছবি তোলা।” যা বলতে চেয়েছিলেন সার্নের প্রধান, তা হল এই যে, ভিড়ের মাঝে ঈশ্বর কণার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যেন অসাধ্য কাজ। অথচ সেই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাটলাস এবং সিএমএস ডিটেক্টর দু’টিতে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। ১৩ ডিসেম্বর বিশেষ আলোচনাক্রে ওঁরা পেশ করবেন নিজেদের সিদ্ধান্ত। ব্যবস্থা এমনই যে, দু’দলের কোনও পক্ষই জানে না, অন্যেরা কী পেয়েছে। এটা নিরপেক্ষতার স্বার্থে। যাতে এক দলের সিদ্ধান্ত অন্য দলকে প্রভাবিত না করে।
কী ঘোষণা হতে চলেছে ও দিন? ঈশ্বর কণা সম্পর্কে চূড়ান্ত ঘোষণা কি মিলবে ও দিন? এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মুখে কুলুপ আঁটা। তবে, অ্যাটলাস ডিটেক্টরে তথ্য বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত ব্রিটিশ পদার্থবিদ ডক্টর অ্যালান বার বলেছেন, “মনে হচ্ছে, চূড়ান্ত ঘোষণা ও দিন হবে না। জানানো হবে প্রাথমিক অনুমান। ঈশ্বর কণা থাকা এবং না থাকার ব্যাপারে। চূড়ান্ত ঘোষণা হয়তো হবে আরও কিছু দিন পর।”
সম্ভাবনা নানা রকম। এক ঈশ্বর কণা থাকতে পারে, আবার না-ও পারে। তা ছাড়া, থাকলেও একটার বদলে ঈশ্বর কণা মিলতে পারে একাধিক। যদি একটি মাত্র ঈশ্বর কণার খোঁজ মেলে, তা হলে পদার্থবিজ্ঞানীরা ফেলবেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ নামে তাঁদের সাধের তত্ত্বটির ‘সুস্বাস্থ্য’ নিয়ে তা হলে থাকবে না আর কোনও সংশয়। আর যদি না থাকে ঈশ্বর কণা, অথবা থাকে একটির চেয়ে বেশি, তা হলে প্রায় সর্বনাশ। কেননা সাধের ওই তত্ত্বের সংস্কার দরকার হবে তা হলে। দ্বিতীয় এই সম্ভাবনাটিও অনেক গবেষকের কাছে রীতিমতো কৌতূহলের। কেননা নতুন ভাবনাচিন্তার অনেক দরজা খুলবে তার ফলে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.