নদিয়া জেলা জুড়ে ২২টি বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য রান্না করার দায়িত্ব পেল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
এত দিন জেলার ওই হাসপাতালগুলিতে রান্নার দায়িত্ব সামলাত বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থা। স্বাস্থ্য দফতরসূত্রে জানা গিয়েছে সরকারি নির্দেশ অনুসারে ১ ডিসেম্বর থেকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। বাজার করা থেকে, রান্না এমনকী সেই খাবার রোগীদের শয্যায় পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্ব এখন থেকে সামলাবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন,‘‘সরকারি নির্দেশ অনুসারে জেলার যে সমস্ত হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৬০ বা তার নিচে সেই হাসপাতালগুলোতেই রান্নার যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। যেখানে শয্যা সংখ্যা ৬০ এর বেশি সেখানে অবশ্য ঠিকাদার সংস্থার লোকেরাই রান্না করবেন। |
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার থেকেই রান্নার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১১ জন মহিলা। কাজের দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা রীতিমত খুশি। মমতা পাল তাঁদেরই এক জন। বলছেন, ‘‘এর আগে আমরা অনেকরকম কাজ করেছি। কিন্তু এই কাজটা সম্পূর্ণ অন্য ধরণের। দায়িত্বও অনেক। কাজটা করতে গিয়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।’’ কীভাবে এই গোটা কাজটা করবেন? পার্বতীদেবীর কথায়,‘‘ বাজার করা থেকে যাবতীয় খরচ প্রথমে আমাদের বহন করতে হবে। আমরা অবশ্য কিছু দোকানের সঙ্গে মাসিক একটা চুক্তি করে নিয়েছি এরপর আমরা সেই খরচের বিল পেয়ে গেলে সেই টাকা পরিশোধ করে দেব।’’
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন,‘‘ যাঁরা রান্নার দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালেই প্রথম দিনে ওঁরা ভালই কাজ করেছেন।”
প্রথম দিন তাঁদের মেনু ছিল, সকালে কলা, পাউরুটি ও ডিম সেদ্ধ। দুপুরে ভাত, ডাল, ডাঁটা, আলু, বেগুন, কপি দিয়ে একটি তরকারি ও মাছের ঝোল। রাতেও মাছ, ভাত, সব্জি। গত আট দিন ধরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি আছেন মুরুটিয়া থানার বেড় রামচন্দ্রপুর গ্রামের রহমতুল্লা মণ্ডল। তিনি বলেন,‘‘আজ সব মহিলারা এসেছিলেন খাবার দিতে। রান্না কিংবা খাবার পরিবেশনের ধরণ দেখে মোটেও বোঝা যায়নি যে ওঁরা একেবারেই আনকোরা। রান্না এবং ওঁদের আচার ব্যবহারও খুব ভালো।’’ তবে এত দিন হাসপাতালে রান্নার কাজ করছিলেন যাঁরা, আশিস কুন্ডু, অনিমা স্বর্ণকারদের মন ভারি। তাঁরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রান্নার দায়িত্ব সামলে আসছিলাম। হঠাৎ আমাদের সরিয়ে দেওয়া হল। আমরা এবার কোথায় যাব? সরকার আমাদের জন্য একটা বিকল্প কোন ব্যবস্থা করতে পারত।’’ |