অসুস্থ নাতির জন্য দু’বেলার খাবারটুকু জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে বছর ষাটেকের প্রৌঢ়া মহিমাদেবীকে!
হাটে সব্জি বেচে ‘সংসার’ চালান মণিপুরের পশ্চিম ইম্ফলের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই বাসিন্দা। কিন্তু নিত্যদিন সংঘর্ষ, বন্ধ, রাস্তা অবরোধে ক্রেতারই যে দেখা নেই। নাতির ওষুধ তো দূরের কথা, কখনও কখনও খাবার কেনারও টাকা থাকছে না প্রৌঢ়ার কাছে। এড্সে ছেলে আর বৌমা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। দু’কুলে কেউ নেই। তবু পড়শিরা ভয়ে মহিমাদেবীর বাড়ির ধারেকাছে যান না। কারণ, তাঁর নাতি, বছর তেরোর দেবেন্দ্র সিংহের শরীরেও জন্ম থেকেই বাসা বেঁধেছে এইচআইভি-র জীবাণু।
শুধু দেবেন্দ্র নয়, এমন অসংখ্য অসহায় শিশু ছড়িয়ে রয়েছে মণিপুরের আনাচেকানাচে। তাদের অসুখটা ভয়ানক। কিন্তু তাদের পড়শিদের ‘অসুখটা’-ও কম ভয়াবহ নয়। এড্স, এইচআইভি ছোঁয়াচে, এই ভ্রান্ত ধারণায় আক্রান্ত প্রতিবেশীরা। সংক্রমণের অমূলক আশঙ্কায় পাশে দাঁড়াচ্ছেন না তাঁরা। প্রায় প্রতিদিনের কার্ফু, বন্ধ, অবরোধ, হিংসা-হানাহানির ঘটনায় মারণ-জীবাণু প্রতিরোধক ‘অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি’ (এআরটি)-র ওষুধ পৌঁছচ্ছে না উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ওষুধের দোকানগুলিতে। চলতি আর্থিক-রাজনৈতিক অচলাবস্থায় জীবিকার পথও কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়ায় ডিম, দুধ, কলার মতো পুষ্টিকর খাদ্য এবং ওষুধ কেনার টাকাও থাকছে না ওই শিশুদের পরিবারের কাছে।
শিশুদের উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বক্তব্য, মণিপুরের মতো অশান্ত রাজ্যগুলিতে এইচআইভি আক্রান্ত ছোটরা অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ওই সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা অতীন্দ্রনাথ দাসের কথায়, “প্রশাসনিক সাহায্য পাচ্ছে না ওরা। পড়শিরাও ভয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।” তিনি জানান, এ-সবের জেরে সমস্যা জটিল হয়েছে। পড়শি বা প্রশাসন, কারও সাহায্য না-পেয়ে সংসার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই রোগাক্রান্ত ওই সব শিশুর ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতে নাকাল হচ্ছেন পরিবারের লোকজন।
ন্যাশনাল এড্স কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন বা ন্যাকো ২০০৬ সালে সংস্থার নীতি এবং পরিকল্পনা রূপায়ণ সংক্রান্ত রিপোর্টে জানিয়েছিল, বর্তমানে এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের যে-সাহায্য দেওয়া হয়, তা অপ্রতুল। অল্প কিছু সময়ের জন্যই
তা মেলে। কিন্তু সেই রিপোর্টের পাঁচ বছর পরেও ওই সব শিশুর স্বাস্থ্য,
নিরাপত্তা, শিক্ষা কিংবা পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়ার বিষয়টি কার্যত সকলের নজরের বাইরেই থেকে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় তিনটি পদক্ষেপ জরুরি বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি।
• এড্স রোগীদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে বিনামূল্যে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
• মণিপুরের কোনও প্রান্তে কার্ফু, বন্ধ কিংবা অবরোধ চললেও যাতে বিশেষ ‘করিডর’-এর মাধ্যমে ওই ওষুধ সরবরাহ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে।
• এড্স সম্পর্কে শহর ও গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের ভুল ধারণা ভাঙার চেষ্টা চালাতে হবে। এই কাজে সাহায্যের জন্য জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রককে এগিয়ে আসার অনুরোধও জানিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা। |