সংসদের চলতি অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ না হওয়ার ব্যাপারে আগাম আশঙ্কা ছিলই। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নয়া মতান্তর আজ তাতে আরও অক্সিজেন জোগাল।
লোকপাল বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত কাল অবধিও ঠিক ছিল, আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখা হবে। লোকপালের আওতায় থাকবেন গ্রুপ ‘সি’ কর্মীরাও। কিন্তু গত কাল রাতে কোর গ্রুপের বৈঠকের পর রাতারাতি অবস্থা্ন বদলে ফেলল কংগ্রেস। স্থায়ী কমিটিতে কংগ্রেস সদস্যরা সমস্বরে আজ জানিয়ে দিলেন, গ্রুপ ‘সি’ কর্মীদের লোকপালের আওতায় রাখা চলবে না। কমিটিতে শাসক জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেই মত প্রাধান্য পেল ঠিকই। কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিজেপি-বাম-সপা-বসপা সদস্যরা জানিয়ে দিলেন, স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টে এ ব্যাপারে তাঁরা আপত্তি জানিয়ে নোট দেবেন।
আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখতে গোড়া থেকেই দাবি জানাচ্ছেন অণ্ণা হজারে ও তাঁর সমর্থকরা। অণ্ণাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে সহমত বিজেপিও। ফলে স্থায়ী কমিটিতে আজকের সিদ্ধান্তের ফলে সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে নতুন করে যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বিজেপি ও বামেদের অভিযোগ সংসদে দাঁড়িয়ে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় যে আশ্বাস দিয়েছিলেন এখন সেই কথার খেলাপ করছে কংগ্রেস।
সূত্রের খবর, গত কাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক হয়। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ ওই বৈঠকে যোগ দেন। তখনই স্থির হয়, আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখার বিরোধিতা জানাবে কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে সহমত শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। আবার এনডিএ-র শরিক বিজু জনতা দলও একই মত পোষণ করছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের তরফে আজ এই যুক্তিই তুলে ধরা হয় যে, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পর সরকারি কর্মচারীদের গ্রুপ ‘ডি’ স্তর তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ ‘সি’ কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর পর আবার রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর উপর নজর রাখতে গেলে লোকপালের আওতায় অন্তত ৫০ হাজার সচিব নিয়োগ করতে হবে। যা যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং সিভিল সার্ভিস আইন অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থাতেই গ্রুপ ‘সি’ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রতি দু’মাস অন্তর অভিযোগগুলি সম্পর্কে রিপোর্ট নেবে ভিজিল্যান্স কমিশন। তার পর লোকপালকে সেই রিপোর্ট দেওয়া হবে। তার পর তেমন কোনও একটি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে চাইলে লোকপাল তদন্ত করতে পারে।
কিন্তু বিজেপি ও বামেদের বক্তব্য, আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরে দুর্নীতি অনেক বেশি। তাদেরকেই যদি লোকপালের আওতায় না আনা যায়, তা হলে প্রকৃত উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। তবে মতান্তর শুধু এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই নয়। নাগরিক সনদ, বিচারব্যবস্থা, সিবিআইয়ের দুর্নীতিদমন শাখাকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখা নিয়ে আপত্তি রয়েছে অণ্ণাদের। তবে এই বিষয়গুলি নিয়ে আজ নতুন করে কোনও আলোচনা হয়নি। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা-না রাখা নিয়েও আজ আলোচনা হয়নি। স্থায়ী কমিটিতে সূত্রে বলা হচ্ছে, আজকের আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর কমিটির বৈঠকে তা গৃহীত হবে। ওই রিপোর্টে বিষয় ধরে ধরে বিরোধীদের আপত্তিগুলিও সুনির্দিষ্ট ভাবে রাখা হবে।
এই অবস্থায় লোকপাল বিলের ভবিষ্যৎ কী? কংগ্রেস নেতৃত্বের কথায়, বিজেপি ও বামেরা যুক্তি-তর্কের ধারকাছ দিয়েও যাচ্ছেন না। বিল পাশ না হলে অণ্ণারা আন্দোলনে নামবেন। বিজেপি ফায়দা নেবে। চলতি অধিবেশনে বিলটি পেশ ও পাশ করা সম্ভব হবে কি না, প্রশ্ন রইল। |