চাপের কূটনীতি দিল্লির
চিনা আপত্তি উড়িয়ে দলাইয়ের সঙ্গে মঞ্চে নারায়ণন
বেজিংয়ের চাপ সামলাতে দিল্লির ‘কূটনৈতিক অস্ত্র’ এখন দলাই লামা। অরুণাচল, অনুপ্রবেশের মতো নানা বিষয়ে ভারতের উপর লাগাতার চাপ বাড়িয়ে চলেছে চিন। এমনকী বুদ্ধদেবের জন্মস্থান নেপালের লুম্বিনীতে সম্প্রতি তিনশো কোটি ডলার ব্যয়ে ‘বুদ্ধ-সার্কিট’ নগরী গড়তেও চিন উদ্যোগী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় দলাই লামার অবস্থান জোরালো করে তুলে বেজিংকে পাল্টা চাপে ফেলতে সক্রিয় হয়েছে দিল্লি। গত চার দিন ধরে দিল্লিতে বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। আর আজ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারকে দেওয়া চিনা দূতাবাসের ‘নোট’ উপেক্ষা করেই দলাই লামার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ভেবেচিন্তেই তিব্বত তথা দলাই লামার তাসটি খেলছে দিল্লি। বৌদ্ধ সম্মেলনের সময়ে বেজিংয়ের আপত্তি উড়িয়ে দিল্লি জানিয়েছিল, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে দলাই লামার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আগামী ৩ তারিখ দিল্লিতে বেশ কয়েক জন রাষ্ট্রদূতকে নৈশভোজে ডেকেছেন দলাই লামা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগের ব্যবস্থাপনায় সরকারি ভাবে নরওয়ে থাকলেও নিশ্চিত ভাবেই এতে সাউথ ব্লকের প্রধান ভূমিকা রয়েছে। উদ্দেশ্য, দলাই লামার পক্ষে ধীরে ধীরে একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ তৈরি করে বেজিংকে কোণঠাসা করা। চিনের সঙ্গে আপাতত এই শঠে শাঠ্যং কূটনীতিই নিচ্ছে কেন্দ্র।
নারায়ণনকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন দলাই লামা। —নিজস্ব চিত্র
তারই আংশিক প্রতিফলন দেখা গিয়েছে আজ কলকাতায়। মাদার টেরিজা সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে (যেখানে আজ দলাই লামা গিয়েছিলেন) রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিনা দূতাবাস থেকে রাজ্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যপাল সে প্রসঙ্গে বলেন, “ওঁরা তো সরকারের কাছে ‘নোট’ পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে আপনারা কী প্রত্যাশা করেন?”
মা গুরুতর অসুস্থ না হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিত ভাবেই দলাই লামার সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন বলে জানান তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। ডেরেক আরও জানান, কলকাতাবাসীর তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী দলাই লামাকে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন।
এ দিন জোকার আইআইএম-এ একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিব্বতি ধর্মগুরু বলেন, “ওই ‘নোট’ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। আমি কোনও রাজনৈতিক প্রশাসনের নেতা নই। ফলে আমার সফরের রাজনীতিকরণ হোক চাই না।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমার যে কোনও গতিবিধিকেই চিন-বিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে মনে করে সে দেশের সরকার। যেটা সত্যি নয়। চিনের অনেক বিশিষ্ট জনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে সমর্থন করেন। চিন সরকারের জনাকয়েক কর্তাই শুধু সমালোচনা করে চলেছেন। এটা সে দেশের অদূরদর্শী নীতির প্রতিফলন।” চিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ‘ভণ্ডামিতে পরিপূর্ণ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, চিনা দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল গত মঙ্গলবার ওই ‘বিতর্কিত’ নোটটি নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি প্রতিনিধিদল। নোট দেওয়ার পাশাপাশি মৌখিক ভাবেও তাঁরা বলেছিলেন দলাই লামা চিন-বিরোধী কাজকর্মে জড়িত। তাই রাজ্যের কোনও অনুষ্ঠানে সরকারি প্রতিনিধির থাকা ঠিক হবে না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কড়া মনোভাবই দেখিয়েছে রাজ্য। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র জানান, তাঁরা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন এটা দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়। তাই কিছু বলার থাকলে বিদেশ মন্ত্রককে বলতে হবে। রাজ্যের কিছু করার নেই। ওই মুখপাত্র জানান, অন্য দেশের বিশেষ অতিথিরা কোনও রাজ্যে গেলে বিদেশ মন্ত্রক থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে নির্দেশ বা পরামর্শ দেওয়া হয়। দলাই লামার ক্ষেত্রে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, তাঁর অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। চিনা দূতাবাসের ‘নোট’ ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনার কথা বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.