দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এক পঞ্চায়েত সচিবের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে জামালপুরে। বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয় রাজারামপুর গ্রামের ঘটনা। বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে গলায় নাইলনের ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাঁচড়া পঞ্চায়েতের সচিব সুদর্শন মালিকের (৫৭) দেহটি মেলে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুজোর আগে তিন জনের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন জামালপুরের বিডিও। সুদর্শনবাবু ছাড়াও পঞ্চায়েত প্রধান এবং এক ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে থাকার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তারই জেরে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।”
১০০ দিনের প্রকল্পে একটি খাল সংস্কার নিয়ে সিপিএম পরিচালিত পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০০৯ সালে। সংস্কারের কাজে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে ২২ হাজার টাকার কাজের কোনও হিসেব মেলেনি বলে প্রশাসনিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। এই ঘটনার জেরে সাসপেন্ড করা হয় সুদর্শনবাবুকে। পঞ্চায়েত প্রধান ইমদাদুল হক, সুদর্শনবাবু-সহ তিন জনের জেলও হয়। |
জেল থেকে বেরনোর পর থেকেই সুদর্শনবাবু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। এ দিন বর্ধমানের পুলিশ মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এমনই দাবি করেছেন সুদর্শনবাবুর বড় ছেলে, কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক সুমন্ত মালিক। তিনি বলেন, “বাবা তো ঘর থেকে বেরনোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেবলই বলতেন, তিনি নির্দোষ। উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও বলছিলেন। কিন্তু এ ভাবে যে আত্মহত্যা করে বসবেন, ভাবতেও পারিনি।”
প্রধান ইমদাদুল হক এ দিন বলেন, “১০০ দিনের কাজের সেই ২২ হাজার টাকা এখনও পোস্ট অফিসেই জমা রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তদন্ত চলার সময় আমরা একটি রেজিস্ট্রার দেখাতে পারিনি। সেটি হারিয়ে গিয়েছিল। আর তারই জেরে আমাদের জেল খাটতে হয়। তবে একটা কথা বলতে পারি, সুদর্শনবাবু সম্পূর্ণ নির্দোষ।” প্রধানের দাবি, সুদর্শনবাবুর ছেলে চিকিৎসক, মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা। তিনি কেন ২২ হাজার টাকা চুরি করতে যাবেন?
তবে পুলিশ সুপার বলেন, “ওই তছরুপের ঘটনার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আর তা শেষ হওয়ার আগে কে দোষী বা কে নির্দোষ তা বলে দেওয়া যায় না। তাছাড়া বিডিও তো প্রাথমিক তদন্ত করেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।” বিডিও বুলবুল বসু অবশ্য ঘটনাটি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |