উত্তরের চিঠি
অবাধে চোরাচালান,অনুপ্রবেশ
স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অন্যতম বিষয় হল তার সীমান্ত, কিন্তু ভারতের পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ-সীমান্তবর্তী অঞ্চল যে কী অবস্থায় রয়েছে তা একমাত্র আমাদের মতো এই অঞ্চলে বসবাসকারীরাই জানেন। দূর থেকে কাশবন ঘনই দেখা যায় বাংলায় বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটির সার্থকতা (নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে) পশ্চিমবঙ্গের ২২১৬.৭০ কিমি ভারত-বাংলাদেশ সীমারেখার কোনও অঞ্চলে গেলেই উপলব্ধি করা যাবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্তারা যতই সীমান্ত অঞ্চলে বজ্র আঁটুনির কথা বলুন না কেন, আসলে তা ফস্কা গেরো। দেশ জুড়ে ক্রমাগত চলতে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদ আজ যখন ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে, তখনও অবস্থার এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। চোরাচালান, অনুপ্রবেশ, অবৈধ কারবার আজও নিরবচ্ছিন্ন গতিতে চলছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে তার রূপ বা পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটেছে মাত্র।
প্রথমে বলা যাক চোরাচালানের কথা। কী নেই এ পার ও পার চালাচালির তালিকায়। রাতের অন্ধকারে এ দেশ থেকে ওষুধ, জামাকাপড়, চিনি, চুরি যাওয়া মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ, এমনকী নেপাল থেকে অবৈধ ভাবে আসা সুপারিও চলে যাচ্ছে ও দেশে।
সীমান্তে জালনোট উদ্ধার। মালদার কালিয়াচকে তোলা ছবি।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েক বছর যাবৎ আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পঁচিশ পয়সার মুদ্রা একেবারেই অমিল। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কালোবাজারিরা সুকৌশলে পঁচিশ পয়সার মুদ্রাকে অচল আখ্যা দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করে ও পারে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা ব্যবহৃত হচ্ছে ব্লেড তৈরির কাজে। এলাচ, লবঙ্গ, সুপারি থেকে শুরু করে খাবার নুনও আছে ও পারগামী জিনিসের তালিকায়। এ দিকে কাপড়-চোপড়, মূল্যবান বিদেশি পণ্য, মাদক, সিগারেট, জাল টাকা, সিডি, মোবাইল ফোন সহ আরও অনেক কিছুই চলে আসছে এ পারে। বেশ কিছু দিন ধরে এই তালিকায় সংযোজিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন মোবাইল পরিষেবা সংস্থার সিম কার্ডও। যদি অস্ত্র চান তা-ও মিলবে, শুধু ঠিক ক্যারিয়ারকে ধরতে হবে। সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পান-বিড়ি, মুদিখানা এমনকী চায়ের দোকানে জিজ্ঞাসা করলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব।
এ তো গেল পণ্য পারাপারের বারোমাস্যা। এ পার ও পার হচ্ছে গরু-ছাগল এ সবও। সীমান্তে এখন চলছে তৃতীয় পর্যায়ের কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ। পশ্চিমবঙ্গের ২২১৬.৭০ কিমি ভারত-বাংলাদেশ সীমারেখার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১২১৯ কিমি অংশে বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের হিসাব অনুযায়ী)। অর্থাৎ এখনও প্রায় ১০০০ কিমি অংশ উন্মুক্ত! এই সব বেড়াবিহীন অংশ দিয়েই মূলত রাতের অন্ধকারে অবাধে পারাপার হয় গবাদি পশু। আর সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের যে সমস্যায় ভারত একদা জর্জরিত ছিল, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলে তা কমলেও ইন্দো-বাংলা সীমান্তে এর ভিত আজও সুদৃঢ়। সীমান্ত পারাপারের সব ব্যবস্থা করে দেন দালালরা। বৈধ ভাবে সীমান্ত পেরোতে যতটা ঝক্কি পোহাতে হয়, অবৈধ ভাবে পার হলে তার সিকি ভাগ ঝামেলাও পোহাতে হয় না। নিয়মমাফিক পার হতে গেলে অভিবাসন দফতর, শুল্ক দফতরে নানা রকম কাগজপত্র ও সঙ্গের মালপত্র পরীক্ষা করানোর পরই পারাপারের অনুমতি মেলে। কিন্তু আপনি যদি এজেন্টদের শরণাপন্ন হন, তা হলে কোনও অসুবিধেই নেই। শুধু আপনার পাসপোর্ট (যদি থাকে) ও নির্দিষ্ট দক্ষিণা এজেন্টের হাতে দিলেই হল। কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আপনি চলে যেতে পারবেন ও দেশে। পাসপোর্ট না থাকলে একটু বেশি টাকা গুনতে হবে। আবার আসার সময়েও একই পরিষেবা মিলবে ও দিকের এজেন্টদের কাছ থেকে। এ ভাবেই বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে প্রচুর জাল নোট, এমনকী দুষ্কৃতীরাও সহজে আমাদের দেশে চলে আসতে পারছে। যার ফলে জঙ্গি কার্যকলাপ আজ দেশ জুড়ে ভয়ংকর আকার নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সীমান্তে নজরদারি কঠোর করার প্রতিশ্রুতি অনেক বার দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
চিঠি পাঠান নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.