সোনারপুর থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিল দুই কিশোরী। তাদের খুঁজতে গিয়ে এক আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের হদিস পেল পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, পাচারের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের দুই পাণ্ডা-সহ সাত জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ওই দুই কিশোরী-সহ ৪ জনকে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত অক্টোবর মাসে দুই কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে সোনারপুর থানায়। তদন্তে নেমে এক কিশোরীর মোবাইল ফোনের নম্বর ‘ট্র্যাক’ করে মেটিয়াবুরুজের একটি ফোন নম্বরের হদিস পান তদন্তকারী অফিসারেরা। তারই সূত্র ধরে গত ২০ নভেম্বর মেটিয়াবুরুজে হানা দিয়ে জাহির আলি এবং খলিল শেখ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই ফোনটি রয়েছে রহিম শেখ ওরফে পিন্টুর কাছে। পর দিন সে একটি কিশোরীকে নিয়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে দিল্লি যাচ্ছে বলেও ওই দু’জন জানায়।
রহিমকে ধরতে ২১ তারিখ সোনারপুর থানার দুই অফিসার শিয়ালদহে পৌঁছে দেখেন, ট্রেন তত ক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছে। এর পরই যোগাযোগ করা হয় দিল্লি পুলিশের সঙ্গে। ওই দুই অফিসার বিমানে দিল্লি চলে যান। পর দিন রাজধানী পৌঁছনোর আগেই স্টেশনে হাজির হয় পুলিশ। সেখানেই গ্রেফতার করা হয় রহিমকে। উদ্ধার হয় এক কিশোরী। জেরায় রহিম জানায়, সে দিল্লির ধরমপুরায় নারী পাচারের ব্যবসা করে। সেখানে হানা দিয়ে সুশীলকুমার ঠাকুর এবং মীনারানি লামা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় সোনারপুরের নিখোঁজ আর এক কিশোরী-সহ আরও দু’জন। ভিন রাজ্যের ওই দুই কিশোরীকে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে কিশোরী এবং তরুণীদের ধরমপুরায় নিয়ে যাওয়া হত। পরে সেখান থেকে তাদের মুম্বই, পুণে-সহ দেশের বিভিন্ন নিষিদ্ধপল্লীতে পাচার করা হত। এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সোনারপুরের যুগীবটতলা থেকে গণেশ সাউ এবং আশরফ আলি বলে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয় শুক্রবার। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, গণেশ, আশরফ, জাহির এবং খলিল চক্রে ‘আড়কাঠি’ হিসেবে কাজ করত। আর রহিমের কাজ ছিল দিল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গার নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। সুশীল এবং মীনারানি নারী পাচারের মূল পাণ্ডা বলে পুলিশের দাবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ওই কিশোরীদেরও।” |