বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি রাজ্য সরকার বিবেচনা করছে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শনিবার
পশ্চিমবঙ্গ কলেজ কর্মচারী সমিতির একটি অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
শিক্ষার অঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিতে শিক্ষাকর্মী, ছাত্র ও গবেষকদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ নেই। রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, এই ধরনের প্রতিনিধিত্বের নাম করেই দীর্ঘকাল রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স জারির পর থেকেই ছাত্র, শিক্ষাকর্মী, এমনকী শিক্ষক সংগঠনগুলিও এর প্রতিবাদ করতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে শুধু রাজনীতিমুক্ত করাই নয়, এগুলির সর্বোচ্চ কমিটি থেকে ছাত্র, শিক্ষাকর্মী, গবেষকদের বাদ রাখার পিছনে আর একটি ভাবনাও কাজ করেছে বলে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল। তা হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সব সিদ্ধান্তের ভার প্রধানত শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া।
উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের কী ভূমিকা থাকতে পারে? স্নাতক ডিগ্রিধারী কোনও শিক্ষাকর্মীই বা উপাচার্য নির্বাচনের ব্যাপারে মতামত দেবেন কেন?
শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকে এই যুক্তিগুলিকে সমর্থনও করেন। তবে এখন আবার ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার যুক্তি কী?
রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিত বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা রকম কর্মকাণ্ড চলে। সেগুলির সঙ্গে শিক্ষাকর্মীরা সরাসরি যুক্ত। তাই তাঁদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে শিক্ষাকর্মীদের যুক্ত করা হলে ছাত্র প্রতিনিধিদেরও বাদ রাখা যাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছে। এ দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদও দাবি জানিয়েছে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের’। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি রাখা যায় কি না, তা আলোচনা করে দেখবে উপদেষ্টা কমিটি।”
এ দিন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ কর্মচারী সমিতির অনুষ্ঠানটি হয়দক্ষিণ কলকাতার সিটি কলেজে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কর্মচারীর সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে তাঁদের যুক্ত রাখার আবেদন জানিয়েছেন। আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্র ও শিক্ষাকর্মীদের যুক্ত করলে কি ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হবে না? মন্ত্রী বলেন, “প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে তো এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।” |