দমদম থেকে অপহরণ
দমদম থেকে অপহরণ, শিশুর দেহ মিলল খালে
প্রথমে চকোলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আট বছরের শিশুটিকে অপহরণ। তার পর গভীর রাতে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন। পর দিন সকালে বাড়ির লোক জানতে পারলেন, তাঁদের ‘রনো’ আর বেঁচে নেই। শনিবার সকালে শুভম চক্রবর্তী ওরফে রনো (৮) নামে সেই শিশুর হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ মিলল উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার একটি খাল থেকে।
শুভম।
তৃতীয় শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া শুভমকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ‘অপহরণ’ করা হয়েছিল। পূর্ব সিঁথির মধুগড় এলাকার বাসিন্দা ওই শিশুর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকাও। পুলিশের দাবি, এ দিন সকালে ধরা পড়ার পরে অপহরণকারীরা স্বীকার করেছে শুভমকে খুন করে হাড়োয়ার ওই খালে ফেলে আসে তারা। কিন্তু ঠিক কী কারণে শিশুটিকে তারা খুন করল, পুলিশ এ দিন রাত পর্যন্ত তা জানাতে পারেনি। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের বিবাদের জেরে খুন হতে পারে শুভম।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই শিশুকে অপহরণ করে খুন করার অভিযোগে রাকেশ পাণ্ডে, বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং কোনা ঘোষ নামে তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, শুভম দমদমের একটি স্কুলে পড়ত। মধুগড়ে তাদের দোতলা বাড়ি। তার বাবা গোবিন্দ চক্রবর্তী স্থানীয় একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। তিনি বছর পাঁচেক আগে রাকেশ পাণ্ডেকে ঘর ভাড়া দিয়েছিলেন। রাকেশ তার মাকে নিয়ে থাকত। সে একটি কেটারিং সংস্থায় কাজ করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গোবিন্দবাবু রাকেশকে ঘর ছেড়ে দিতে বলছিলেন। এ নিয়ে কয়েক বার রাকেশের সঙ্গে তাঁর ঝগড়াও হয়। তবে তার জেরেই শুভমকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়।
কী ভাবে অপহরণ করা হয়েছিল শুভমকে?
শুভমের দিদিমা মীরা অধিকারী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি নিজের বাড়িতে টিভি দেখছিলেন। তাঁর বাড়ি পাশেই। সওয়া সাতটা নাগাদ তাঁর ছোট মেয়ে পম্পা এসে জানায়, রনোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার আগে মামা কমলকৃষ্ণের কাছে দোতলার ঘরে বসে হোমওয়ার্ক করছিল রনো। শৌচাগারে যাওয়ার জন্য এক সময় বাড়ির বাইরে যায় সে। তাদের শৌচাগার দোতলায়। কিন্তু সেখানে রাজমিস্ত্রি লাগিয়ে নতুন পাইপ বসানোর কাজ হচ্ছিল। সেই কারণে বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় শুভমকে। তার পর থেকে আর তার কোনও হদিস মেলেনি। সেই রাতেই দমদম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন শুভমের বাড়ির লোক।
নিহত শুভমের মা।
পুলিশ জানায়, শুভম যখন বাড়ির বাইরে যায়, সেই সময় রাকেশ বাড়িতে ছিল না। রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি ফেরে রাকেশ। শুভম নিখোঁজ হয়েছে জেনে তার একটি ছবি নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। সবাইকে বলেও যায়, রনোকে খুঁজতে যাচ্ছে। এলাকার যুবক রতন রায় বলেন, “রাকেশের ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে ও বলে, দুই বন্ধুকে নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়েছে রনোকে খুঁজতে। পরে ও বলে, কয়েক জন যাত্রী নাকি ওকে জানিয়েছেন, শুভমকে বারাসত স্টেশনে দেখা গিয়েছে। পরে রাতে নিজেই শুভমের বাড়িতে ফোন করে রাকেশ। বলে, শুভম বারাসত থানায় রয়েছে।” গোবিন্দবাবুর পড়শিরা জানান, যে সব ফোন নম্বর থেকে রাকেশ যোগাযোগ করেছিল, শুক্রবার গভীর রাতে সেই সব নম্বর থেকেই মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়। মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে রাকেশের মায়ের মোবাইলেও। শাসানির সুরে বলা হয়, ‘শুভমের মুক্তিপণ হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
পুলিশে খবর দিলে ফল ভাল হবে না।’ পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই ফোনগুলি একটি বুথ থেকে করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই রাতেই পাড়ার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জানতে পারে, যে সময় শুভম নিখোঁজ হয়, তার পরে রাকেশের সঙ্গে রাস্তায় তাকে দেখা গিয়েছে। পুলিশের কাছে খবর আসে, এ দিন ভোরে বাড়ি ফিরেছে রাকেশ। সেখানে পৌঁছে শুভমের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে রাকেশকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জেরা চলাকালীন এক সময় রাকেশ জানায়, চকোলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শুভমকে অপহরণ করেছিল তারা। পুলিশের অনুমান, রাকেশ সম্ভবত ভেবেছিল, সে-ই যে অপহরণ করেছে বা মুক্তিপণ দাবি করেছে এই ব্যাপারে যদি শুভম পুলিশকে কিছু বলে দেয়, তা হলে সে বিপদে পড়বে। তাই রাকেশ আর তার দুই সঙ্গী শুভমকে শ্বাসরোধ করে খুন করে খালে ফেলে দেয়। রাকেশের পরে তার দুই সঙ্গীকেও ধরা হয়। এ দিন রাকেশের ঘরে ভাঙচুরের চেষ্টাও করেন শুভমের পরিচিতরা। তাঁদের কোনওমতে আটকানো হয়।
ছবি: সুমন বল্লভ
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.