বাজারের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়ে কৃষি ক্ষেত্রের সমস্যা নিরসনের দাওয়াই। ক্ষুদ্রশিল্পের সামনে ব্যবসা বাড়ানোর বড় সুযোগ। সাধারণ ক্রেতার নাগালে উঁচু মানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া। দেশের খুচরো ব্যবসায় লগ্নির দরজা বিশ্বের তাবড় ব্র্যান্ডের জন্য খুলে দিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে এ ভাবেই দেখছে ভারতীয় রিটেল শিল্পমহল।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকলেও খুচরো ব্যবসায় আর্থিক সংস্কারের গতি বজায় বেখে বিদেশি লগ্নিকারীদের পা রাখার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিনের। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র সে পথে হাঁটায় বাম বা তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকে-র মতো ইউপিএ-র শরিক দল সাধারণ ছোট ব্যবসায়ী ও কৃষক-স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় আপত্তি তুলেছে। শিল্পমহলের পাল্টা দাবি, ওই আশঙ্কা অমুলক। বরং উল্টোই হবে। পরিকাঠামোর উন্নতির ফলে নয়া বাজারের সম্ভাবনা খুলে গিয়ে কৃষকের অবস্থার উন্নতি হবে। কমবে শস্য ঘাটতি। অপচয় এড়িয়ে জোগান বাড়লে রোখা যাবে চড়া মুল্যবৃদ্ধিও। সব মিলিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হারও বাড়বে। প্রসঙ্গত, রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও আশা বহু ব্র্যান্ডের রিটেলে ৫১% বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত মূল্যবৃদ্ধি কমার পথ প্রশস্ত করবে। |
শস্য উৎপাদনের পর তা বাজারে পৌঁছে দেওয়া, অর্থাৎ, ‘ব্যাক এন্ড’ পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিগত ঘাটতিই এখন কৃষি ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তা দূর করতে বিপুল লগ্নির প্রয়োজন। বিদেশি সংস্থা এলে সে সমস্যা মিটবে, নিশ্চিত সিআইআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান রণবীর সিংহ, আরপিজি গোষ্ঠীর কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কা, বা রহেজা গোষ্ঠীর এমডি গোবিন্দ শ্রীখণ্ডে, সকলেই। শ্রীখণ্ডে বলেন, “শুধু চাষ করলেই হবে না, লাভ ঘরে তোলার পরবর্তী ব্যবস্থাও মসৃণ হওয়া দরকার। যেহেতু বিদেশি লগ্নির ৫০%-ই সংরক্ষণ বা সরবরাহ ব্যবস্থায় করতে হবে, তাই পরিকাঠামো উন্নয়ন সহজ হবে।” পূর্বাঞ্চল মূলত কৃষি নির্ভর হওয়ায় এই সিদ্ধান্তে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করেন সিংহ। পরিকাঠামোর উন্নতি হলে অপচয় ঠেকিয়ে (বর্তমানে ফসলের প্রায় ৩০%-ই সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়) বাজারে শস্য ঘাটতি মেটানোও সহজ হবে বলে মনে করছে শিল্পমহল। সিংহের দাবি, খাদ্যপণ্যের চড়া মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর এটা অন্যতম সমাধানসূত্র। সাধারণ ভাবে রাজনৈতিক ও অন্যান্য স্তরে অভিযোগ, একে কৃষক দাম পান না। উপরন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি সংস্থা এলে তাঁরা আরও বিপাকে পড়বেন। এ আশঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছে শিল্পমহল। গোয়েন্কার মতে, দামের ভারসাম্যের সমস্যা বরং এখনই বেশি। ক্রেতারা চড়া দরে জিনিস কিনলেও চাষিরা দাম পান না! সিংহের ধারণা, সংস্কারের ফলে মধ্যস্থতাকারী এড়িয়ে কৃষকের সঙ্গে সরাসরি বাজারের যোগসূত্র তৈরি হবে। সার্বিক ভাবে সব পক্ষের লাভবান হওয়ার যুক্তিই তুলে ধরেছেন ফিউচার গোষ্ঠীর কর্তা কিশোর বিয়ানিও। তাঁর দাবি, কৃষক ও ক্রেতার পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি রিটেল সংস্থাগুলি উপকৃত হবে। বিশ্বমানের প্রযুক্তি দেশি সংস্থাগুলির নাগালে আসবে। বিদেশি সংস্থা পাবে বিপুল বাজার। শ্রীখণ্ডের দাবি, ক্রেতার ণ্য বাছাইয়ের সুযোগ বাড়ায় পণ্যের দাম ও গুণগত মানের মধ্যেও সমতা আসবে।
কিন্তু দেশের অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর কী হবে? শিল্পমহলের দাবি, চিনে বিদেশি সংস্থার জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পরেও ছোট খুচরো ব্যবসায়ী দ্বিগুণ হয়েছে। প্রথম ২০টি ‘রিটেল চেন’ চিনা সংস্থারই দখলে। বস্তুত, ভারতে প্রায় ১.৫ কোটি ছোট খুচরো ব্যবসায়ী থাকলেও ৯৪%-ই অসংগঠিত। আর, সে জন্যই সমস্যা বাড়ে, দাবি শিল্প-কর্তাদের। তাঁদের হিসেবে, বিদেশি লগ্নি এলে তিন বছরে সংগঠিত ব্যবসা ১৫%-এ পৌঁছলেও তা হবে দেশের বিপুল বাজারের নামমাত্র। বরং পরিকাঠামো উন্নয়নের সুফল পাবেন ছোট ব্যবসায়ীরাও। দেশি রিটেল শিল্পের আরও দাবি, ব্যবসায়িক কারণেই কারণ বিপুল লগ্নি করে ছোট এলাকায় এ ধরনের ব্যবসা চালানো লাভজনক হয় না। তা থাকবে ছোট ব্যবসায়ীদের হাতেই। সুভিক্ষা বা স্পেনসার্স (কিছু ক্ষেত্রে) সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী। তবে তৃণমূল কংগ্রেস আপত্তি তোলায় পশ্চিমবঙ্গে কি এই ব্যবস্থা চালু হওয়া সম্ভব? এ দিন ইন্দো-আমেরিকান চেম্বারের সভার পরে রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার দাবি, কেন্দ্র কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই এগোবে। |