গুনে গুনে আটশো ডলার খরচ করে বিমানের টিকিট কেটেছিলেন ৫৭ বছরের আর্থার বার্কোউইজ। তবু সিটে বসা হল না। আলাস্কা থেকে ফিলাডেলফিয়া পর্যন্ত ঝাড়া সাত ঘণ্টার বিমানযাত্রাটা তাঁকে করতে হল দাঁড়িয়েই। আর বার্কোউইজের হকের সিটটি ‘দখল’ করে বসে রইলেন তাঁর সহযাত্রী!
কারণ আর কিছুই নয়, সহযাত্রীটির ওজন প্রায় ১৮১ কেজি! ফলে, নিজের সিটটি তো বটেই, বার্কোউইজের সিটেরও অর্ধেকটা দখল করে ফেলেন ওই ব্যক্তি! আজকের দিনটা ভারতে পালিত হচ্ছে ‘স্থূলতা বিরোধী দিবস’ হিসেবে। তার ঠিক আগে এমন একটি ঘটনা ‘ওবেসিটি’ বা স্থূলতার সমস্যাকে আরও এক বার সামনে এনে দিল। জীবনযাত্রার মান বাড়ার সঙ্গেই যে সমস্যার প্রকোপ ক্রমাগত বাড়ছে। এই মুহূর্তে ভারতে প্রতি ছ’জন মহিলার মধ্যে এক জন এবং প্রতি পাঁচ জন পুরুষের মধ্যে এক জন স্থুলতার সমস্যায় আক্রান্ত। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় সাত কোটি মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)-র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ স্থূলতার জন্য মারা যান। এই সমস্যা থাবা বসাচ্ছে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যেও। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী প্রায় ১৭ শতাংশ শিশু স্থূলতায় আক্রান্ত। হু-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী বিশ্বের প্রায় চার কোটি তিরিশ লক্ষ শিশু স্থূলতায় ভোগে। কী কারণে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগেন এত সংখ্যক মানুষ? বেশি ক্যালরি-যুক্ত খাবার খাওয়া এবং সেই অনুপাতে পরিশ্রম না করার ফলে শরীরে অবাঞ্ছিত মেদ জমে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে অধিকাংশ মানুষই সামান্য ওজন বাড়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। সমস্যার সূত্রপাতটা সেখান থেকেই হয়ে যায়। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষও শুধু মাত্র মনোযোগের অভাবে এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। সব থেকে বড় কথা, স্থূল শরীরে বাসা বাঁধতে পারে অন্যান্য মারণ রোগও। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এবং অন্তত দু’ থেকে তিনটি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার একটা অন্যতম কারণ স্থূলতা। এমনকী, আশপাশের মানুষের অসুবিধা হচ্ছে, এ কথা ভেবে হীনমন্যতার শিকারও হতে পারেন স্থূলতায় আক্রান্তরা। বার্কোউইজের সহযাত্রীটির কথায় সেই হীনমন্যতার ছাপ কিছুটা পাওয়া যায়। বার্কোউইজ জানিয়েছেন, নিজের চেহারা নিয়ে যথেষ্টই লজ্জিত ছিলেন ভদ্রলোক। বিমানে উঠেই তিনি বার্কোউইজকে বলেন, “আপনার জন্য আমি একটা দুঃস্বপ্ন। আমায় ক্ষমা করবেন।” বার্কোউইজের অবশ্য সহযাত্রীটির উপরে বিশেষ ক্ষোভ নেই। তিনি বরং ঢের বেশি চটে বিমানসংস্থার উপরে। তাঁর কথায়, “অমন চেহারার এক জন যাত্রীর পক্ষে যে একটা সিটে বসা সম্ভব নয়, তা বিমানসংস্থার মাথায় রাখা উচিত ছিল।” এ কথা জানিয়ে বিমানসংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন বার্কোউইজ। তবে তাঁর ক্ষোভ, আটশো ডলারের পরিবর্তে মাত্র দু’শো ডলার দিয়েছে সংস্থা। তাই এ বার আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েছেন বার্কোউইজ। |