সম্পাদকীয় ২...
সুশিক্ষার অধিকার
বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি অবধি কাহাকেও ‘অনুত্তীর্ণ’ রাখা চলিবে না পশ্চিমবঙ্গের নূতন রাজ্য সরকারের এই ‘পরিবর্তন’-এর উদ্যোগ লইয়া বহু তর্কবিতর্ক শোনা গিয়াছে। ইতিমধ্যে সাধারণ্যে ‘দিল্লি বোর্ড’ নামে পরিচিত কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজ্যামিনেশনস (সি আই এস সি ই) স্থির করিয়াছে, আই সি এস ই ছাত্রদের ক্ষেত্রেও ওই একই নীতি প্রযুক্ত হইবে। এক কালে ‘বেঞ্চি-সুদ্ধ প্রোমোশন’ কথাটি নিম্নমানের স্কুল সম্পর্কে ব্যঙ্গার্থে ব্যবহৃত হইত, এতদ্দ্বারা বোঝানো হইত যে, পড়াশোনা কিছুই হয় না, সবাইকে পাইকারি হারে পরের ক্লাসে তুলিয়া দেওয়া হয়। চিন্তার ধারা বদলাইয়াছে। অষ্টম শ্রেণি অবধি পাশ-ফেল প্রথা বিসর্জনের বুদ্ধিটিকে এক কথায় অযৌক্তিক বলিয়া উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই। এই প্রস্তাবের প্রেরণা আসিয়াছে শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইন হইতে, যে আইনের প্রেরণা আবার সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতি। সেই নীতিতে চৌদ্দ বছর বয়স অবধি সকলকে শিক্ষা দানের কথা বলা হইয়াছে। সাধারণ ভাবে চৌদ্দ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়িবার কথা। সুতরাং, অষ্টম শ্রেণি অবধি সকলের পড়িবার অধিকার আছে। সুতরাং সেই অবধি কাহাকেও আটকানো চলিবে না, পরীক্ষার ফল যেমনই হউক। যুক্তি সহজ, সরল।
এবং ভ্রান্ত। চাঁদমারিতে তির বিঁধিবার পরীক্ষায় সফল হইতে চাহিলে তিরটি নির্ভুল ভাবে নিক্ষেপ করিতে হয়। আগে তির নিক্ষেপ করিয়া সেই তির যেখানে বিঁধিল, তাহার চার পাশে বৃত্ত আঁকিয়া চাঁদমারি তৈয়ারি করিলে চলে না। অষ্টম শ্রেণি অবধি লেখাপড়া শিখাইতে হইবে, এই নীতিতে অন্তর্নিহিত একটি অনুশাসন আছে। তাহা হইল, যথাযথ লেখাপড়া শিখাইতে হইবে। শিক্ষা কথাটি যথেচ্ছ ব্যবহারে জীর্ণ এবং অসার হইয়া গিয়াছে। উৎকৃষ্ট মানের শিক্ষা না হইলে শিক্ষা অর্থহীন। মূল্যায়ন এই কারণেই জরুরি। পরীক্ষা নামক প্রক্রিয়া এই কারণেই উদ্ভাবিত। যে ভাবে পরীক্ষা পওয়া হয়, যে ভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাহা শ্রেষ্ঠ উপায়, এমন কথা মনে করিবার নিশ্চয়ই কোনও কারণ নাই। বস্তুত, পরীক্ষার বিকল্প খোঁজা অত্যন্ত জরুরি। নানা ভাবে তাহার চেষ্টা চলিয়াছে, চলিতেছে, তাহাও স্পষ্ট। কিন্তু সেই বিকল্প উদ্ভাবনের আগে পরীক্ষা তুলিয়া দিলে বড় ভুল হয়। আবার আদর্শ অবস্থায় কোনও পড়ুয়াকেই ফেল করানো উচিত নয়, বিশেষত তাহার মনের উপর যে চাপ পড়ে তাহার কারণেই উচিত নয়, ইহাও সত্য। কিন্তু বাস্তব আদর্শ হইতে অনেক দূরে। বাস্তবে পরীক্ষা আছে, অথচ পাশ-ফেল নাই, ইহা কার্যত অর্থহীন হইয়া পড়ে। সুতরাং অষ্টম শ্রেণি অবধি ‘বেঞ্চি-সুদ্ধ প্রোমোশন’-এর নীতি শুনিতে যতই ‘আধুনিক’ এবং ‘ছাত্রদরদি’ মনে হউক, প্রকৃতপক্ষে তাহার ফলে মূল্যায়ন ব্যাপারটিই আরও বেশি দুর্বল হইয়া পড়িতে বাধ্য। তাহার কুপ্রভাব পড়িবে উচ্চতর শিক্ষার স্তরে। সেই স্তরে অনেক ছাত্রছাত্রী প্রবেশ করিবে, যাহাদের সেই অবধি উঠিবার কোনও যোগ্যতাই নাই। অষ্টম শ্রেণি অবধি উঠিয়াছি, কিন্তু তাহার পর পথ বন্ধ, এবং কার্যত ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়িবার যোগ্যতাও নাই এই চিন্তা কোনও পড়ুয়ার মনের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হইতে পারে না। শিক্ষার অধিকার নয়, যাহা সকলের প্রাপ্য তাহা সুশিক্ষার অধিকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.