সম্পাদকীয় ১...
কঠোর হউন, সংযতও
মাওবাদী জঙ্গিদের প্রতি সরকারের দ্বিমুখী নীতির সুফল ফলিতে শুরু করিয়াছে। এক দিকে যেমন যৌথ বাহিনীর সহিত সংঘর্ষে জঙ্গলমহলে আত্মগোপনকারী সশস্ত্র জঙ্গিরা পর্যুদস্ত হইতেছে, অন্য দিকে তেমনই নাম-করা জঙ্গি নেতানেত্রীরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণও করিতেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে আইনের শাসন কায়েম করার প্রশাসনিক ও সামরিক উদ্যোগের পাশাপাশি আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের পুনর্বাসনের প্যাকেজও ঘোষণা করিয়াছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় হইতে কয়েক যৌথ বাহিনীর অভিযান স্থগিত রাখিয়া তিনি মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্যে জঙ্গিদের অস্ত্রসংবরণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিয়াছিলেন। সেই লক্ষ্যেই বাহিনীর কাছে অভিযান, ধরপাকড় ও সংঘর্ষ এড়াইবার নির্দেশ। তিনি যে শান্তিকামী এবং ধৈর্যসহকারে জঙ্গিদের বক্তব্য শুনিতে আগ্রহী, জঙ্গলমহলের অনুন্নয়নের সমস্যা মীমাংসা করিতেও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর, তাহার প্রমাণ দিতেছিলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই-দুইবার মন্ত্রী-পরিষদ ও আমলা-অফিসার সহ জঙ্গলমহল সফরে গিয়া কর্মসূচি গ্রহণ ও তাহার তৎক্ষণাৎ রূপায়ণের প্রক্রিয়া শুরু করিয়াছিলেন।
তাঁহার বার্তা পড়িতে জঙ্গলমহলের অসুবিধা হয় নাই। সাধারণ, দরিদ্র জনজাতীয় মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় নূতন আশার আলো দেখিয়াছেন। জঙ্গিদের মধ্যে যে অংশটির ইতিমধ্যেই মোহভঙ্গ হইতেছিল, তাঁহারাও স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরিতে উৎসাহিত বোধ করিতে থাকেন। ইহারই পরিণাম দশ দিনের ব্যবধানে দুর্ধর্ষ দুই জঙ্গি দম্পতির আত্মসমর্পণ। নিজেরা ধরা না দিলে কবে যে পুলিশ বা যৌথ বাহিনী তাঁহাদের নাগাল পাইত, কে জানে। কিন্তু মমতার আশ্বাসে তাঁহারা ভরসা পান। মাওবাদী কমান্ডার জাগরী বাস্কে ও রাজারাম সোরেন আত্মসমর্পণ করিতেই মমতা তাঁহাদের ‘ঘর বাঁধিতে সব রকম সাহায্য করা’র আশ্বাস দিয়াছেন। এই মানবিক স্পর্শটিই অনেক জঙ্গির হৃদয়-পরিবর্তনে অনুঘটক হইয়া উঠিতে পারে। পাশাপাশি প্রশাসক মমতার দৃঢ়তাও রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করিতেছেন। বস্তুত, সন্ত্রাস দমনে তাঁহার অনমনীয় কঠোরতার কারণেই যৌথ বাহিনীর সক্রিয়তায় নূতন গতি সঞ্চারিত হয়। নিরীহ মানুষের ঘাতকদের একের পর এক অযোধ্যা পাহাড় ও অন্য দুর্গম জঙ্গল হইতে পাকড়াও করা হইতেছে। মধ্যস্থতাকারীদের আবেদন মঞ্জুর করিয়া তিনি যে অনন্ত কাল জঙ্গি মোকাবিলায় টালবাহানা করার পক্ষপাতী নন, ইহা ঘোষণা করার পরই যৌথ বাহিনীও সবুজসঙ্কেত পাইয়া যায়।
কেবল চিহ্নিত সশস্ত্র জঙ্গিরাই নয়, তাহাদের সহিত যোগসাজশে থাকা বিভিন্ন গণসংগঠন বা মাওবাদীদের ফ্রন্ট সংগঠনও এ বার চাপের মুখে। স্বভাবতই জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের মতো ঘৃণ্য নাশকতামূলক ক্রিয়াকলাপে জড়িত ব্যক্তিরাও গ্রেফতার হইতেছে। এ সবই মমতা সরকারের বৃহৎ সাফল্য। তবে এ ধরনের সাফল্যের একটা আনুষঙ্গিক বিপদ আছে। সাফল্যে বুঁদ পুলিশ অতি-উৎসাহে জঙ্গি সন্দেহে যথেচ্ছ ধকপাকড়, সন্দেহভাজনদের ঘরে ঢুকিয়া হাড়ি-পাতিল ভাঙচুর করা, অভিযুক্তকে না পাইয়া তাহার বৃদ্ধ পিতামাতা বা শিশুসন্তানদের মারধর করা কিংবা থানায় তুলিয়া লইয়া যাওয়া, স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে ধৃতদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো ইত্যাদিতে লিপ্ত যেন না হয়। এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করার কারণ, ইতিপূর্বে, নিকট এবং দূর অতীতে এ ধরনের অত্যাচার চালানোর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে বারংবার উঠিয়াছে। মহাকরণে সরকার বদল হইলেই পুলিশের চরিত্র বদলাইয়া যায় না। কেবল মানবিকতার কারণে নয়, বাস্ত প্রয়োজনেও পুলিশ প্রশাসনের সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, নিরীহ মানুষের উপর মাওবাদী সন্দেহে করা নির্যাতন সেই মানুষগুলির মানবাধিকারই শুধু লঙ্ঘন করে না, তাহাদের সরকারবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর দিকে ঠেলিয়াও দেয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.