শিক্ষামন্ত্রীর মঞ্চেই উল্টো সুর শিক্ষাবিদের
ফেল রদ থেকে অর্ডিন্যান্স, বেঁকে বসলেন সরকারের ঘরের লোকও
বিরোধীরা প্রতিবাদ করেছেন আগেই।
এ বার শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হলেন নতুন সরকারেরই ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের একাংশও। এঁদের কেউ কেউ আবার সরকারের গড়া বিভিন্ন কমিটির সদস্য।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদের যে-সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, প্রকাশ্যেই তার বিরোধিতা করেছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের গড়া পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান সুনন্দ সান্যাল।
আর অর্ডিন্যান্স জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যে-সংশোধন রাজ্য সরকার এনেছে, তার বিরোধিতা করেছেন উচ্চশিক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের গবেষণা ও উন্নয়নের প্রধান কল্যাণ রুদ্র। এবং এঁরা সকলেই রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
স্কুল এবং উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করতে রাজ্য সরকার দু’টি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে। কিন্তু তার কোনওটিতেই এই বিষয়গুলি আলোচিত হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বিগত বৈঠকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল না-রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার, জাতীয় শিক্ষা দিবস উপলক্ষে মহাজাতি সদনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শিক্ষার অধিকার আইনের নানা দিক তুলে ধরেন। পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য সবিস্তার ব্যাখ্যায় যাননি তিনি। শুধু বারবার উল্লেখ করেন, ‘‘এটি কেন্দ্রীয় আইন।’’ সুনন্দবাবুও তখন মঞ্চে ছিলেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে ব্রাত্যবাবুর পরের বক্তা ছিলেন তিনি।
সুনন্দবাবু বলেন, “অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দিলে সমস্যা হবে। পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা যাবে না।” সেই সঙ্গে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি। ওই শিক্ষাবিদ বলেন, “পরিকাঠামো তৈরি না-হলে শিক্ষা অভিযানের সার্থকতা থাকবে না। বিশেষত, যাঁরা পড়াবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।” সুনন্দবাবু বলতে ওঠার আগেই অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী মহাজাতি সদন থেকে বেরিয়ে যান।
এ দিনই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিবর্তন আনতে রাজ্য সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে টিচার্স অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট এগেনস্ট ম্যালডেভেলপমেন্ট (টাসাম)। ওই সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। অশোকেন্দুবাবু, ভাস্করবাবু, কল্যাণবাবুরা ওই সংগঠনের সদস্য। তাঁদের সংগঠন মনে করছে, ওই অর্ডিন্যান্স তৈরির সঙ্গে এমন ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের সঙ্গে যাঁদের কোনও যোগ নেই। এটা ‘দলতন্ত্রের জায়গায় আমলাতন্ত্রের আমদানি’ বলেও শিক্ষক-গবেষকদের সংগঠনটির অভিমত।
নতুন আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটিগুলিতে ছাত্র, গবেষক, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নেই। এসএফআই এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বামপন্থী কর্মী সংগঠন এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু করেছে। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-ও ওই অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছে। টাসাম-এর পক্ষ থেকে এ দিন প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে (ছাত্র ও শিক্ষাকর্মীদের) নামমাত্র প্রতিনিধিত্ব থাকলেও বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে ভাল হত।
অর্ডিন্যান্স অনুসারে উপাচার্য কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য বা অন্য ভাবে ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন না। টাসাম এর বিরোধী। তাদের বক্তব্য, দেশের সংবিধান নাগরিকদের যে-অধিকার দিয়েছে, এটি তার বিরোধী। এই নিয়ম মানতে হলে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ত্রিগুণা সেনের মতো বিশিষ্টজনেরাও উপাচার্য-পদে বঞ্চিত হতেন। সহ-উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্সে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে যে-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটাকে সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন টাসাম-এর সদস্য শিক্ষক ও গবেষকেরা।
অবশ্য উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলতন্ত্রের দাপাদাপি ঠেকাতে নয়া অর্ডিন্যান্স খুবই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে। তাঁদের মতে, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বামফ্রন্টের আমলে এ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়েছে। আলিমুদ্দিনের ইচ্ছামতো উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। রেডিস্টার্ড গ্যাজুয়েট, কর্মী-প্রতিনিধি ইত্যাদি ছিল রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার হাতিয়ার। সেই জায়গায় বর্তমান অর্ডিন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সময় এই ব্যাপারে উপাচার্য এবং শিক্ষকদের অনেক স্বাধীনতা দেবে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। পাশ-ফেল রদের ব্যাপারে সুনন্দবাবুর আপত্তি এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জারি করা অর্ডিন্যান্সের ব্যাপারে সরকার-ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের অনেকেরই বিরুদ্ধ মত সম্পর্কে তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “এ-সব নিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.