অধরা লক্ষ্মী ৩
‘কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক’নামেই, সাহায্য অমিল
নসংখ্যা বাড়ছে। জমি বাড়ছে না। কৃষি-নির্ভর মানুষের সংসার প্রতিপালনের লড়াই দিনে দিনে কঠিন হচ্ছে। আয় বৃদ্ধি না হলে উন্নতি তো দূরের কথা, দু’বেলা খাবার জোটানোই মস্ত সমস্যা। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো, সেই লক্ষ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, চাষে বৈচিত্র আনার বহুমুখী লক্ষ্যে সরকার নিয়োগ করেছিল ‘কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক’ বা কেপিএস। যাঁদের কাজ ছিল, চাষিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। কোন সময়ে কী চাষ করতে হবে এবং কী ভাবে, রোগপোকার আক্রমণে কোন কীটনাশক কত পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে--এ সব নিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া তাঁদের কাজ। সেই সহায়তা পাওয়া তো দূরের কথা, অনেক কৃষক জানেনই না কৃষি দফতরে এই ধরনের কর্মী রয়েছেন! এমন কর্মীর দেখা কস্মিনকালেও পাননি অধিকাংশ চাষি।
অথচ কৃষিক্ষেত্রে এই কেপিএস-দের গুরুত্ব অনেক। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন-বৃদ্ধির পথ দেখাবেন তো তাঁরাই। যাতে কম জমিতেও বেশি ফলন হয়। সেই তাঁরাই চাষির কাছে যেন ভিন্গ্রহের জীব! কেন? কৃষি দফতরের ব্যাখ্যা, যত দিন গিয়েছে কেপিএসের সংখ্যা কমেছে। নতুন নিয়োগ বন্ধ। কাজ করবে কে?
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেপিএস নিয়োগের শুরুতে সরকারের পরিকল্পনা ছিল, অন্তত ১২০০ কৃষক-পিছু এক জন করে কেপিএস থাকবেন। যদিও সেই লক্ষ্যে কোনও দিনই পৌঁছনো যায়নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় তিনশো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সরকার অনুমোদিত কেপিএস পদের সংখ্যাই মাত্র ৪৪৩। অর্থাৎ প্রতি পঞ্চায়েতে দু’জন করেও কেপিএস নেই। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পঞ্চায়েত-পিছু অন্তত এক জন কেপিএস যেন থাকেন। তিনি পঞ্চায়েত অফিসে যাবেন, পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন। পঞ্চায়েত এলাকার কৃষি-সংক্রান্ত সমস্যা জানবেন। সেই অনুযায়ী এলাকায় গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেবেন। মাটি পরীক্ষা কী ভাবে করতে হয়, বীজ-শোধন করতে হয় কী ভাবে, কত দিন ছাড়া সেচ দিতে হয়, সেচের মাত্রা কতটা--প্রশিক্ষণে এ সব বিষয় জানাবেন। কিন্তু কোথায় কী! কেপিএসদের দেখাই পান না চাষিরা।
এখন আবার জেলায় অনুমোদিত ৪৪৩টি পদের মধ্যে ২০৯টিই শূন্য! অর্থাৎ সব পঞ্চায়েতে এক জন করেও কর্মী নেই। কৃষি দফতরও শূন্যপদের সমস্যাকেই বড় করে দেখাচ্ছেন। কিন্তু আগেও কি কেপিএস-রা তাঁদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করতেন? বহু এলাকাতেই যে তাঁদের যাতায়াত ছিল না, তার সাক্ষী অধিকাংশ চাষিই। ঘাটালের ইড়পালা গ্রামের গৌতম চক্রবর্তী, গড়বেতার কাদড়া গ্রামের বন্দিরাম নিয়োগীরা বলেন, “কেপিএস বলে কিছু আছে সেটাই তো আমরা জানি না। পরামর্শ নেওয়া তো দূরের কথা। তাঁরা যদি আসতেন, পরামর্শ দিতেন কত উপকার হত!” দাসপুরের দেবাশিস নিয়োগী, শালবনির পঞ্চানন হালদারেরা বলেন, “কেপিএস রয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কোনও দিন দেখিনি। কৃষি দফতরের কাছ থেকে সাহায্য পাই না বললেই চলে।”
শুধু কেপিএস কেন? জেলা কৃষি-দফতরে অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য। প্রশাসনিক রিপোর্ট বলছে, অনুমোদিত পদের সংখ্যা যেখানে ২৮৮৭, সেখানে শূন্য পদ ১৬৬৭! মাত্র ১২২০ জন কর্মীকে নিয়ে এত বড় জেলায় খুঁড়িয়ে চলছে কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা তপনকুমার ভুঁইয়া বলেন, “কেপিএসদের শূন্যপদের কথা সরকারকে জানিয়েছি। কর্মী কম থাকায় সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে সবাই সাধ্যমতো কাজ করছেন।”

(চলবে)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.