পর্যটনে পরিবর্তন অখ্যাত গারুচিরায়
সেচের জল নেই। ভুট্টা ও মারুয়া ছাড়া অন্য কিছুর চাষ হয় না। পাথুরে জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে চাষ করা হলেও ফসল ফলতে-না-ফলতে রাতে অর্ধেক সাবাড় করে চলে যেত বান্দাপানির বুনো হাতির পাল। পানীয় জলও মেলে না গ্রামে। লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভুটান থেকে ঝরনার জল বয়ে নিয়ে আসতে হয়। বিদ্যুৎ নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। গ্রাম পঞ্চায়েত রাস্তা তৈরি করে না। হাতে কাজ নেই ৭০০ বাসিন্দার। ওই গ্রামের কথা এক সময় জানাই ছিল না ব্লক কর্তাদের। বেকারত্বে জর্জরিত গ্রামের একাংশ যুবক মেতে উঠেছিলেন বন ধ্বংস করতে। আজ পর্যটন শিল্পকে হাতিয়ার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের ভুটান পাহাড়ের পাদদেশের ওই অখ্যাত গ্রাম গারুচিরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এক বছরে দূরদূরান্তের পর্যটকদের টেনে আনছে গারুচিরা। আর তাকে আঁকড়ে সংসার চলছে গ্রামের বহু পরিবারের। জলপাইগুড়ির ডিএফও কল্যাণ দাস বলেন, “গারুচিরায় এক বার কেউ এলে বার বার আসতে চান। এক বছরের মধ্যে পর্যটকদের কাছে ওই জায়গার চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে।”
ভুটান পাহাড়ের কোলে গারুচিরা রিসর্ট। ছবি: রাজকুমার মোদক
বন দফতরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করতে বাসিন্দারা এখন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিন দিকে ঘিরে থাকা ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে গারুচিরা গ্রামের এক পাশে রয়েছে বান্দাপানি। গ্রামবাসীদের কয়েক বিঘা জমিতে বন দফতর তৈরি করেছে ৩টি অতিথি নিবাস। বীরপাড়া শহর থেকে ১৪ কিমি অরণ্য ও ঝোরা পেরিয়ে ওই পরিবেশে পা পড়লে নিমেষে ক্লান্তি উধাও হয়ে যাবে। ১১ যুবককে নিয়ে কমিটি করে তাঁরাই পর্যটন আবাসের দায়িত্ব সামলান। আবাস থেকে আসা আয়ের ৪০ শতাংশ শেয়ার পান গ্রামবাসীরা। গ্রামের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। কয়েকজন পর্যটকদের ৪ কিলোমিটার ট্রেকিং করিয়ে ভুটান পাহাড়ের ঢোলেগাঁও গ্রামে নিয়ে যান। ঝরনা-পাহাড় , বান্দাপানি বনের ভেতর ঘুরিয়ে আনেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ঠাসা প্যাকেজ তৈরি করে পর্যটকদের কাছে গারুচিরাকে অনন্য করে তুলেছেন তাঁরা। গ্রামের বাসিন্দা অশোক থাপা ও রবিলাল কাগাতের কথায়, “আমাদের গ্রাম নিয়ে কারও মাথাব্যাথা ছিল না। এত দিন ভোটের সময় নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যেতেন। আজ পঞ্চায়েত নয়, আমাদের জন্য বন দফতর যা করার করছে। যে জমিতে চাষাবাদ হত না সেখানে পর্যটন আবাস তৈরি করে দেওয়ায় অনেকে এখন সংসার চালাচ্ছি। রাস্তা, পানীয় জল ও সামান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা যে কতটা জরুরি তা আমরা একমাত্র জানি।” পর্যটকদের জন্য ভুটান থেকে পাইপের মাধ্যমে জল এনে ও সোলার লাইট বসিয়ে দুই সমস্যা দূর করেছে বন দফতর। পশু পালনে উৎসাহিত করতে খামার তৈরি করেছে বন দফতর। টং বাহাদুর ছেত্রী ও অশোক থাপার মত বাসিন্দারা চান মানুষের অসুবিধা দূর করতে বন দফতরের মতো এগিয়ে আসুক পঞ্চায়েত-সহ অন্য সরকারি দফতর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.