লক্ষ্য দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন
সত্যজিতের স্মৃতিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠছে বাংলাদেশে
ত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়িকে ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এ কাজের প্রাথমিক খরচ হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের জমিদার-বাড়ি ছিল। যদিও এখন সেই জমিদার-বাড়ির প্রায় কোনও চিহ্ন আর অবশিষ্ট নেই। শুধু বাড়ির সামনের উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে মণ্ডপের ধ্বংসাবশেষ আর রয়েছে বাড়ির সামনের পুকুর। বাড়ির পিছনের মেয়েদের পুকুর আর বসত বাড়িটি বহু আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা দখল করে নিয়েছে।
সত্যজিৎ রায় এই বাড়িতে কখনও আসেননি। কিন্তু মসুয়া এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষ অস্কারজয়ী এই চলচ্চিত্রকারকে নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। এমনকী তাঁর নামে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠনও গড়ে উঠেছে সেখানে।
চলছে রায় পরিবারের আদিবাড়ির ফটক সংস্কার। ছবি: সৈয়দ মুরছালিন সালেহীন
সত্যজিতের জন্ম ও প্রয়াণ বার্ষিকীও ঘটা করে পালন করে এই সংগঠনগুলি। নিয়মিত সাহিত্য পাঠের আসর বসে। বছরান্তে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলার। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই আয়োজনকে ঘিরে অনেক দশর্নার্থীর ভিড়ও হয়। মানুষের এই আগ্রহের কথা জানানো হয় সরকারকে। শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রকের সচিব শফিক আলম মেহেদির বাড়ি মসুয়ার পাশের গ্রামে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই সরকারি সহায়তায় কটিয়াদিতে সত্যজিৎ রায় পর্যটন কেন্দ্রের শিলান্যাস হয়। গত মে মাসে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য প্রায় তিন একর জায়গা ঘিরে চারতলা ভবনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আপাতত বাড়িটির দোতলা পর্যন্তই গড়ে তোলা হবে। পরে পর্যটকদের চাপ বাড়লে অবস্থা বুঝে বাড়িটির আরও দু’টি তলা গড়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া কাঁটা তারের সীমানা প্রাচীর ও পুকুরঘাট সংস্কারের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। শফিক জানান, দুই বাংলার মানুষদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও আত্মিক মেলবন্ধন গড়ে তোলার উদ্দেশেই এই কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সত্যজিতের জীবদ্দশাতেই এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ইচ্ছে ছিল বলেও জানান তিনি। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় সেই পরিকল্পনা তখন বাস্তবায়িত করা যায়নি। এ বার শেখ হাসিনা সরকার তাঁদের আগ্রহে সরাসরি সাড়া দেওয়ায় এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্মীয়মাণ এই পর্যটন কেন্দ্র দেখতে গিয়েছিলেন কটিয়াদি উপজেলার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামি লিগ নেতা আলি আকবর। জানালেন, সত্যজিৎ রায় এই বাড়িতে না এলেও বাবা সুকুমার রায় বেশ কয়েক বার এসেছিলেন। সত্যজিতের ঠাকুর্দা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী মসুয়াতেই বড় হন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান আকবর। মসুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, পূর্ব পাকিস্তান থাকার সময় এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা সত্যজিৎ রায়ের নাম নিতে পারেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই সত্যজিতের নামে ফাউন্ডেশন গড়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা শুরু হয়। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বসত ঘরের আদলে এই পর্যটন কেন্দ্রে একটি বাড়ি গড়ারও দাবি জানান।
ওই এলাকার প্রবীণ মানুষরা জানিয়েছেন, কটিয়াদি ও সংলগ্ন এলাকার জমিদার ছিলেন হরি কিশোর রায়। নিঃসন্তান থাকায় তিনি ভাইয়ের ছেলে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। পরে বেশি বয়সে হরি কিশোরের নিজের একটি ছেলে হয়। তাঁর নাম নরেন্দ্র কিশোর রায়। নরেন্দ্র বড় হওয়ার পরে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। পরে কলকাতায় ফিরে উপেন্দ্রকিশোর সেখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে থাকেন। তবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী শেষ বয়সেও মসুয়ার বাড়িতে বছরে অন্তত এক বার বেড়াতে আসতেন। সঙ্গী হয়ে আসতেন পুত্র সুকুমার রায়। হরি কিশোর রায় তাঁর জীবদ্দশায় জমিদারির একাংশ ছেলে নরেন্দ্র রায় ও বাকি অংশ দত্তক পুত্র উপেন্দ্রকে বণ্টন করে দিয়েছিলেন। উপেন্দ্রকিশোর তাঁর অংশ বিক্রি করে দেন। নরেন্দ্র কিশোরের চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ধীরেন্দ্র কিশোর ছাড়া বাকি তিন জনই পরে লন্ডনে পারি জমান। তাঁরা আর কখনই দেশে ফিরে আসেননি।
হরি কিশোর রায়ের উত্তর পুরুষদের প্রায় ৬৪ বিঘা জমি সরকারি হেফাজতে থাকার কথা। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃতপক্ষে সেই জমির ৯ বিঘেরও কম অংশ সরকারি দখলে আছে। বাকি অংশের পুরোটাই বেদখল হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে কয়েকটি মামলা মোকদ্দমাও চলছে। তবে সত্যজিৎ রায়ের নামে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলায় বিশেষ কেউ আপত্তি করেনি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.