আক্রমণের মুখে চিদম্বরম, আত্মীয়দের ধিক্কার রাহুলকে
দুর্নীতির নানা অভিযোগে জর্জরিত। অণ্ণা হজারে থেকে শুরু করে হালের তিস্তা চুক্তি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগও বাড়ছে। তার পর আজ খাস রাজধানীতে বিস্ফোরণ সরকারের সঙ্কট আরও বাড়িয়ে দিল।
সন্ত্রাস রোধে কঠোর পদক্ষেপ না করার জন্য বিরোধীরা আজ এককাট্টা হয়ে সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, তীব্র আক্রমণ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। শুধু তা-ই নয়, সামগ্রিক ভাবে জন-অসন্তোষের আঁচ যে সরকার তথা কংগ্রেসের গায়েই আছড়ে পড়ছে তা-ও কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দলীয় হাইকম্যান্ডের কাছে। আজ রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে গেলে ‘আম-আদমি’র বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় রাহুল গাঁধীকে। আহতদের আত্মীয়রা স্লোগান তোলেন, ‘রাহুল গাঁধী ওয়াপস যাও। রাহুল গাঁধী শরম করো।’ এই অবস্থায় কংগ্রেস বিস্ফোরণ ঠেকাতে না পারার দায় চিদম্বরমের ঘাড়েই ঠেলে দিয়েছে।
ঘনিষ্ঠ মহলে কংগ্রেস নেতারাই স্বীকার করছেন, দল আর সরকারের এখন দিশাহীন অবস্থা। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “গত অক্টোবর থেকে একের পর এক সমস্যা চলছে। গতকালই অমর সিংহের গ্রেফতারের ঘটনা অশনি সঙ্কেত বয়ে এনেছে। আর আজ রাজধানীতেই বিস্ফোরণ। পুরনো সমস্যা সমাধান হওয়ার আগেই নতুন বিড়ম্বনা মাথা তুলছে। ফলে ক্ষত মেরামতের সময় পর্যন্ত পাচ্ছে না সরকার।”
গতকাল ঘুষ কাণ্ডে বিজেপির দুই প্রাক্তন সাংসদকে জেলে পাঠানোর ঘটনার প্রতিবাদে আজ সংসদ অচলের কৌশল নিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগেই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী। সংসদের ভিতরে সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেও দিন যত গড়িয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধারও তত তীব্র হয়েছে।

চিদম্বরমের আমলে





হাসপাতালে রাহুল বিক্ষোভের মুখে পড়লেও লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরা কিন্তু তেমন ঘটনার মুখোমুখি হননি। বরং হাসপাতালে গিয়েই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তাঁরা। ৯/১১-এর বার্ষিকীর প্রাক্কালে এ ধরনের হামলা রোখা গেল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আডবাণী। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজের বক্তব্য, “চার মাস আগে এই হাইকোর্টের সামনেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা বড় হামলার ইঙ্গিত দিয়েছিল, সরকারের তাতেও টনক নড়ল না। একটি সিসিটিভি-ও বসানো প্রয়োজন মনে করল না। ফলে দোষী তো সরকার।” সিপিএম পলিটব্যুরো-ও সরকারের এবং গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
তবে বিরোধীদের আক্রমণের ঝাঁঝের বেশিটাই সহ্য করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমকে। রামদেব, তেলেঙ্গানা, অণ্ণা পর্বে তাঁর ভূমিকা নিয়ে এমনিতেই ক্ষুব্ধ বিরোধী শিবির। টু-জি দুর্নীতিতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের ‘ভূমিকা’ নিয়েও সরব তারা। গুজরাতে লোকায়ুক্ত নিয়োগ-সহ বিভিন্ন ঘটনায় বিজেপি অভিযোগ করছে, বিরোধীদের কোণঠাসা করতে নানা কৌশল করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী বলেছেন, বিরোধীদের ব্যতিব্যস্ত করায় শক্তি খরচ না করে চিদম্বরম বরং সন্ত্রাস রোধে তা কাজে লাগান। গুজরাত থেকে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও খোঁচা দিয়েছেন, “ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে হবে না। মানুষ কাজ দেখতে চায়।”
বিরোধীদের অভিযোগ মূলত ছ’টি। প্রথমত, একের পর এক জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটলেও কোনও কিনারা হচ্ছে না। দুই, সরকার কঠোর আইনও আনছে না, যাতে সন্ত্রাসবাদীরা ভয় পায়। তিন, চিদম্বরম সন্ত্রাসের অনেক ঘটনাই ছোটখাটো হামলা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না, সেগুলো বড় হামলার প্রস্তুতি। চার, চিদম্বরম পরের বড় হামলা রোখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন না। পাঁচ, গত জুলাই মাসের মুম্বই হামলা থেকে চিদম্বরম বলছেন, এগুলো গোয়েন্দা ব্যর্থতা নয়। কারণ, হামলার আগাম খবর গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না। কিন্তু আগাম তথ্য না-থাকা গোয়েন্দা ব্যর্থতাই। ছয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, জুলাইয়েই দিল্লি পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। ফলে এই দায় তিনি কী করে এড়াচ্ছেন?
২৬/১১-পরবর্তী পর্যায়ে শিবরাজ পাটিলের উত্তরসূরি হয়ে আসার পর সন্ত্রাস ঠেকানো নিয়ে ‘গর্ব’ করতেন চিদম্বরম। তাই অরুণ জেটলির বক্তব্য, চিদম্বরমের আমলে বিভিন্ন বিস্ফোরণের ঘটনার একটিরও কিনারা হয়নি। শুধু মাত্র শিবরাজ পাটিলের সঙ্গে তুলনা করে গর্ব করলেই হয় না। বিপদ বুঝে কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা চিদম্বরমের ঘাড়েই দায় ঠেলছেন। আজ দলের মুখপাত্র রশিদ অলভিকে যখন প্রশ্ন করা হয়, ‘এই ব্যর্থতার দায় কার?’ অলভি বলেন, “বিস্ফোরণ নিয়ে যা প্রশ্ন রয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই জিজ্ঞাসা করুন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.