হুজির ই-মেল পেলেও সন্দেহের তালিকায় থাকছে লস্কর, আইএম
এক অদ্ভুত সমাপতন!
সকালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ভবনে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের সঙ্কল্প ঘোষণা করছেন, ঠিক তখনই দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বিস্ফোরণ।
বক্তৃতা শেষ করেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহনের সফরসঙ্গী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের কথা হয়। এর পরেই জানা যায়, বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে ই মেল পাঠিয়েছে হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি (হুজি)। হুমকি দিয়েছে, সংসদ হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত আফজল গুরুর ফাঁসির আদেশ রদ না হলে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালানো হবে।
বাংলাদেশ যে হেতু হুজি-র শক্ত ঘাঁটি, সে হেতু শুরু হয়ে যায় জল্পনা। প্রশ্ন ওঠে, বেছে বেছে প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়েই কি নাশকতা ঘটানো হল? যাতে দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে? প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়া কোনও সংগঠনের জড়িত থাকার নির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। মনমোহন বলেন, “আমরা কিছু সূত্র পেয়েছে। তবে কোন গোষ্ঠী এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “কোনও রকম সন্ত্রাসই গ্রহণযোগ্য নয়।”
দুই সন্দেহভাজনের স্কেচ আনুমানিক বয়স ২৬ ও ৫০
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে হুজি-র নাম জড়িয়ে দিয়ে তদন্ত বিপথগামী করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, অন্য কোনও উদ্দেশ্য থেকে হুজি-র নামে বিবৃতি দেওয়ার সম্ভাবনাও। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র বলছে, নেপাল, ভুটান, মায়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের পূর্বে একটি আঞ্চলিক অক্ষ গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যে উদ্যোগ স্বাভাবিক কারণেই পাকিস্তানের ভাল লাগার কথা নয়। ফলে লস্কর-ই-তইবা বা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো পাক সমর্থনপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন এই ঘটনা ঘটিয়ে হুজি-র নাম জড়িয়ে দিচ্ছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গন্ধ শুঁকে...দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বিস্ফোরণস্থলে গোয়েন্দা কুকুর। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স
তবে তাই বলে হুজি-র নামে পাঠানো ই-মেল যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও কিন্তু নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) ইউ কে বনসল বলেন, “ওই ই-মেলটির সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।” আজকের বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হাতে। এনআইএ-র প্রধান শরদচন্দ্র সিংহ বলেন, হুজি-র নিশানার তালিকায় ভারতও রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে মূলত বাংলাদেশে ভর করেই ভারতে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়েছে হুজি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এক শীর্ষকর্তা বলেন, “শেখ হাসিনা নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে হুজির কাজকর্মের উপরে যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে। যাতে আখেরে ভারতেরও লাভ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে হুজি-র পাণ্ডা মৌলানা মহম্মদ ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। সেই চাপের মুখে প্রত্যাঘাত হিসেবেও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এই হামলা হয়ে থাকতে পারে।”
হাইকোর্টের ৫ নম্বর গেটের কাছে বিস্ফোরণ
স্যুটকেসে ২ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পিইটিএন
সিসিটিভি নেই, অকেজো মেটাল ডিটেক্টর ও স্ক্যানার
দায় স্বীকার করে ই-মেল পাঠাল হুজি
পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতে জম্মু-কাশ্মীরে কাজ শুরু করলেও নয়ের দশক থেকেই বাংলাদেশে জাল বিছানোর কাজ শুরু করে হুজি। ২০০২ সালে দাউদ-কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলা, কাশ্মীরের বাইরে হুজি-র প্রথম ‘অপারেশন’। তার পরে একে একে শ্রমজীবী এক্সপ্রেস, বারাণসীর সঙ্কটমোচন মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশের সন্ত্রাসদমন বাহিনীর সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে হুজি-র ডেরায় প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি জঙ্গিরা। সীমান্তের ও-পারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে হামলার ঘটনাতেও হুজি-র নাম জড়িয়েছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বাংলাদেশে হুজি-জঙ্গিদের ধরতে হাসিনা-সরকার অভিযান চালালেও, ভারতের মতো পাকিস্তানেও হুজি-র প্রচুর সদস্য সক্রিয়। তাদের নির্দেশেই এই নাশকতা এবং ই-মেলে সংসদ হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী, পাকিস্তানি জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য আফজল গুরুর ফাঁসি প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়ে থাকতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.