উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
স্রেফ কাজিয়া
সেই তিমিরেই
ল্প বৃষ্টিতেই বিটি রোডে জল জমার সমস্যা আজও মিটল না। যদিও প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় নিকাশির কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বিটি রোডের ধারে কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মতো বরাহনগর পুর এলাকার ঘোষপাড়া থেকে ডানলপের ছবিটাও করুণ।
ঘোষপাড়া পেট্রোল পাম্প থেকে টবিন রোড বাজার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষাকালে এলাকা কার্যত নরকের চেহারা নেয়। অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। বিটি রোডের অন্যত্র জমলেও সেখানে দ্রুত জল নেমে যায়। কিন্তু এখানে জল জমে থাকে দীর্ঘক্ষণ। স্থানীয় গৌরগোপাল সাহা বলেন, “এ বছর দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। পেট্রোল পাম্প থেকে টবিন রোড বাজার পর্যন্ত বৃষ্টির জমা জলের সঙ্গে নোংরা জল এবং রাস্তার ধারের বর্জ্য ও বাজারজাত আবর্জনার স্তূপ। রোজ এর মধ্যে দিয়েই অফিস যাতায়াত। পুরসভা প্যাচওয়ার্কের কাজ করে। কিছু দিন ঠিক থাকে। তার পরে যে-কে-সেই।

বিটি রোডের অন্য প্রান্তে এক দিকে উড়ালপুলের কাজ এবং কলকাতা পুরসভার প্রকল্পের কাজ চলছে। ফলে সে দিকেও সমস্যা হচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের কথায়, উন্নয়নের জন্য সাময়িক কষ্ট হবে। কিন্তু তা দীর্ঘ দিনের জন্য নয়।
তবে নিকাশির বেহাল অবস্থার জন্য বাসিন্দারা প্রসাশনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। টবিন রোড এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত দাস বলেন, “বিটি রোডের সম্প্রসারণ হলেও দু’ধারের নর্দমার কোনও উন্নতি নেই। টবিন রোড এলাকায় রাস্তার ধার ঘেষে বাজার। উপরন্তু ঢাকা নর্দমার উপরে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড। প্লাস্টিক থেকে রোজের আবর্জনার একটি বড় অংশ নর্দমায় জমা হয়। কিন্তু প্রশাসন সে বিষয়ে নিশ্চুপ। ফলে এই এলাকায় জল বেশিক্ষণ জমে থাকে।”
বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বাজারের আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করা হয়। পুরসভার সাফাই কর্মীরা তা সাফ করেন। তবে অনেকে আবার নর্দমা-সহ বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ফেলেন। তা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগে বাম পুরবোর্ডও অস্থায়ী ভাবে সংস্কারের কাজ করত। এখনও তার পরিবর্তন হল না। বিটি রোডের ধারে জল জমার সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান নিয়ে ভাবছে না প্রশাসন।
বরাহনগর পুরসভার কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বলেন, “বিটি রোডের ধার ঘেষে বক্স ড্রেনের সংস্কার হয় না দীর্ঘ দিন। সেটাই আসল সমস্যা। এত দিন বাম পুরবোর্ড কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। আমরা দায়িত্বে আসার পরে কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কাজে হাত দিয়েছি। মাঝে নানা কারণে কাজ স্থগিত ছিল। ফের কাজ শুরু হবে।”
অভিযোগের জবাবে বরাহনগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অশোক রায় বলেন, “বিরোধিতার সময়ে অনেক কথা বলা যায়। শাসন ক্ষমতায় এলে বোঝা যায় আসল সমস্যা। এখন তৃণমূল বুঝতে পারছে। ওই নদর্মা সংস্কার করতে যে যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, তার ব্যবস্থা করা পুরসভার আর্থিক ক্ষমতার বাইরে। কলকাতা পুরসভার উপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের সময়েও তা সংস্কার করা হয়েছিল। একই কাজ বর্তমান পুরবোর্ড করছে।”
রাজনৈতিক কাজিয়া যাই থাক না কেন, বাসিন্দাদের দাবি, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হোক পুরসভা। অভিযোগের জবাবে বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, “আমরা দায়িত্বে এসে নিকাশি সংস্কারে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এই ধরনের নর্দমা সংস্কার করতে গেলে যে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা আমাদের নেই। কলকাতা পুরসভার সহযোগিতা পাচ্ছি। তা দিয়ে কিছু দিন কাজও হয়েছে। যন্ত্রপাতি কিনতে বিপুল খরচ মেটানো পুরসভার সামর্থ্যের বাইরে।” তা হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কী হবে? অপর্ণাদেবী বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই কেএমডিএ-র কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও আলোচনা হবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.