উত্তর কলকাতা
দুর্ভোগের বাস
জোড়াতালির আবাসন
কোথাও বিম ঝুলে পড়েছে। কোথাও ছাদের চাঙর খসে পড়েছে। অভিযোগ, বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে। এমনই অবস্থা বেলেঘাটার কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের (কেআইটি) আবাসনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দেওয়া হলেও দীর্ঘ দিন পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। ফলে এই অবস্থা। ঝুঁকির মধ্যে বাস করতে হয়।
বার বার জানানো সত্ত্বেও কেআইটি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
কলকাতা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলেঘাটায় কেআইটি-র এই আবাসন। ২১টি পুরনো বিল্ডিং। সেখানে রয়েছে ৫৫৬টি ফ্ল্যাট। ১১টি নতুন বিল্ডিংয়ে রয়েছে ৪৮০টি ফ্ল্যাট। সব মিলিয়ে ১০৩৬টি ফ্ল্যাটে প্রায় চার হাজার মানুষ বাস করেন। পুরনো ফ্ল্যাটগুলি পঞ্চাশের দশকে এবং নতুন ফ্ল্যাট সত্তরের দশকের কাছাকাছি সময়ে তৈরি হয়।

এই আবাসন দেখভালের দায়িত্ব কেআইটি-র। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারের কাজ হয়। পূর্ণাঙ্গ মেরামতির অভাবে ফ্ল্যাটগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। যেমন, জল পড়া বন্ধ করতে ছাদে পিচের চট লাগানো হয়েছে। কিন্তু এতে নিকাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ছাদে জল জমে সর্বোচ্চ তলার ঘরে চুঁইয়ে পড়ছে। বাসিন্দাদের কেউ পলিথিন টাঙিয়ে, কেউ বা বালতি পেতে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন।
কয়েকটি বিল্ডিংয়ের জলের ট্যাঙ্কে ফাটল ধরেছে। সেখান থেকে জল বেরিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া প্রায় সব বিল্ডিংয়ের নানা জায়গায় ফাটল ধরেছে। অভিযোগ, সিমেন্টের পিলার আর বিমে বিপজ্জনক ভাবে চিড় ধরেছে। ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। বাসিন্দারা জানান, কয়েক মাস আগে কেআইটি বিল্ডিংয়ের মেরামতি করে। তাঁদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত ভাবে এবং নিম্নমানের কাজ হয়েছে। যার ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ফাটল ধরেছে। ফাটলে আগাছা গজিয়েছে। আবাসনের মোট চারটি পাম্পের মধ্যে দু’টি দীর্ঘ দিন খারাপ। বাকি দু’টিও মাঝেমধ্যেই বিগড়ে যায়।
পুরনো বিল্ডিংয়ের আবাসিকদের সংগঠন ‘১ নম্বর মহল্লা কমিটি’র সম্পাদক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী বলেন, “মেরামতি, সাফাই ও পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে বহু বার অভিযোগ করা হয়েছে। অল্পই কাজ হয়েছে। পাম্পের সমস্যাও মেটেনি।” নতুন বিল্ডিংয়ের আবাসিকদের সংগঠন ‘২ নম্বর মহল্লা কমিটি’র সম্পাদক অমর বসু বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিছু কাজ হয়েছিল। এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। আশানুরূপ মেরামতি হয় না। জলের একটি পাম্প দীর্ঘ দিন খারাপ। আরও একটি পাম্প প্রয়োজন। সাফাইয়ের সমস্যাও রয়েছে।”
আবাসনের বাসিন্দা বলরাম দে-র কথায়: “খাপছাড়া ও নিম্নমানের কাজ হয়। প্রায় সব বিল্ডিংয়ের সর্বোচ্চ তলের ছাদ থেকে ঘরে জল পড়ার সমস্যা রয়েছে।” রয়েছে নোংরার সমস্যাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবাসনের জঞ্জাল সরানোর দায়িত্ব কেআইটি-র। কিন্তু কেআইটি সেই কাজ ঠিকমতো করে না।
কেআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার অশোক নস্কর বলেন, “মেরামতির জন্য যা অর্থ পাওয়া গিয়েছিল তাতে কাজ চলছে। আরও অর্থ চাওয়া হয়েছে। পাওয়া গেলে পুরোপুরি মেরামতি হবে। পাম্পের সমস্যাও মিটবে।” সাফাই প্রসঙ্গে কেআইটি-র এস্টেট ম্যানেজার নমিতা রায়মল্লিক বলেন, “আমাদের ঝাড়ুদারের অভাব রয়েছে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.