শিক্ষায় ‘দলতন্ত্রে’র তির ঘুরে এ বার তৃণমূলের দিকেই
মানা বদলেও ঘরানা বদলায়নি! শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘দলতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার যে নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়াকে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের অন্যতম কারণ বলে ধরা হয়, সেই একই অভিযোগে এখন কাঠগড়ায় উঠতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবীন সরকারকে! অবস্থার এমনই ফের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘দলতন্ত্র’ চালানোর অভিযোগে সরব হচ্ছে বামফ্রন্ট। কয়েক দশক ধরে রাজ্যে যে ‘সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরই ‘কৃতিত্ব’ দেওয়া হয়!
স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে বিভিন্ন কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় এখন বসেছেন তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বেরা। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষা জগতের সঙ্গেই যুক্ত। বাকিরা শুধুই শাসক দলের বিধায়ক বা সাংসদ হওয়ার ‘গুণে’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন! এমনকী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও রয়েছেন এই তালিকায়! কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রী একটি জেলার কোনও এক মহকুমার কলেজে পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান হচ্ছেন এমন নজির বাম জমানায় তো বটেই, সচরাচর কোনও রাজ্যে ঘটে না বলেই বাম বিধায়কদের দাবি। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, ‘ঘটনাচক্রে’ তাঁরা তৃণমূল। বামফ্রন্টের আমলে সার্বিক ‘একচ্ছত্র আধিপত্যে’র বিরুদ্ধে যাঁরা জোট বেঁধে আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা সকলেই তৃণমূল নেত্রী মমতার পক্ষে। তাই তাঁদের শুধু ‘তৃণমূলের লোক’ বলে আখ্যা দেওয়া ঠিক নয়।
বিধানসভায় বুধবার উচ্চ শিক্ষা দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘দলতন্ত্রে’র প্রসঙ্গ টেনেছিলেন করিমপুরের সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরেই বাম শিবিরের অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্ত মণ্ডল যেমন তৃণমূলের শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক, তেমনই মধ্য শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারপার্সন চৈতালী দত্ত সিঙ্গুরে তৃণমূল নেত্রীর আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য তো সরাসরি তৃণমূলের টিকিটেই গত বিধানসভা নির্বাচনে পলাশিপাড়া কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এই তিন জনই
শিক্ষা জগতের সঙ্গেই যুক্ত। কিন্তু তৃণমূলের ‘কাছের লোক’ না-হলে তাঁরা পদে আসীন হতেন কি না, বাম শিবিরের প্রশ্ন সেই জায়গায়। ঠিক যে প্রশ্ন বাম জমানায় অজস্র বার
তুলতেন তৎকালীন প্রধান বিরোধী নেত্রী মমতা।
কলেজগুলির ক্ষেত্রে যে তালিকার কথা বাম শিবির বলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে শাসক দলের জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে পরিচালন সমিতির প্রধান হওয়ার ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে! যেমন, কলকাতা এবং তার আশেপাশে চারুচন্দ্র কলেজে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, গুরুদাস কলেজে পরেশ পাল, সুরেন্দ্রনাথ কলেজে শিখা মিত্র, বজবজ কলেজে অশোক দেব পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান বা সভাপতি। এঁরা সকলেই তৃণমূলের বিধায়ক। কলকাতার বাইরে জেলায় গেলেও ছবিটা একই। পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ এবং মহিষাদল গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির নেতৃত্বে আছেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। ঠিক তেমনই তমলুক কলেজ এবং কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এবং খেজুরি কলেজে তাঁর মন্ত্রী-পিতা (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) শিশির অধিকারী আছেন পরিচালন সমিতির মাথায়। ময়না কলেজে ভূষণচন্দ্র দলুই, রামনগর কলেজে অখিল গিরি, বাজকুল কলেজে অর্ধেন্দু মাইতি, মুগবেড়িয়া কলেজে রঞ্জিত মণ্ডল এঁরা সকলেই স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় আছেন আবু তাহের। যিনি তৃণমূলের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং তৃণমূল পরিচালিত নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি।
উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু বলছেন, “সুনন্দ সান্যাল, চৈতালী দত্তদের তৃণমূলের লোক বলা যায় না। আসলে ঘটনা হল, রাজ্যটাই প্রায় দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাম জমানায় সর্বক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে যাঁরা জোট বেঁধে লড়েছেন, সেই মানুষ
তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই দিকে। কারণ, ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে মমতাই। যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা মানুষের প্রতিনিধি। এবং তাঁরা ঘটনাচক্রে তৃণমূলের দিকে।” সিপিএমের এক প্রথম সারির বিধায়কের কথায়, “আমাদের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ এনেই তো ওঁরা ক্ষমতায় এসেছেন। আর এই তালিকা বেড়েই চলেছে!”
অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত বদলে গিয়েছে। তিন মাসের ‘পরিবর্তন’!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.