|
|
|
|
বৃষ্টিতে ভাঙা রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু বহরমপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
রাস্তা সংস্কার নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা কাটছে না। কাটছে না সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও। পুলিশের দাবি, বুধবার রাতে বহরমপুর শহরে রাস্তা খারাপ বলে লরির ধাক্কায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বহরমপুর থানার আইসি প্রমোদরঞ্জন বর্মন বলেন, “বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তা খুব খারাপ। সম্ভবত সেই কারণেই লরির ধাক্কায় সালারের বাসিন্দা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। ওই লরি চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তবে বুধবার সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। তাতে রাস্তার খানাখন্দ রাতের বেলা বোঝাও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে চালকদের কাছে।
পুরসভার কাজের খতিয়ান পর্যালোচনা করতে দেড় মাস আগে আলোচনা করেছিল বহরমপুর পুরসভা। ওই আলোচনা সভায় অন্যান্য আলোচনার সঙ্গে উঠে আসে পুর-এলাকার নিকাশি ও রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি। কিন্তু দেড় মাস কেটে যাওয়ার পরেও নিকাশি ব্যবস্থা বা রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে পুরসভার উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিকে গত কয়েক দিনের নাগাড়ে বৃষ্টিতে বহরমপুরের বিভিন্ন গুরূত্বপূর্ণ রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। কিন্তু আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পুরবাসিন্দাদের ভুগতে হচ্ছে। তার মধ্যে গির্জা মোড় থেকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড, পঞ্চাননতলা মোড়, বিদ্যাসাগর মূর্তি থেকে চুঁয়াপুর, ভৈরবতলা ঘাট থেকে কুমার হোস্টেল পর্যন্ত নেতাজি রোড, বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বহরমপুর স্টেশন পর্যন্ত-সহ বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের অভাবে হাঁটাচলা করার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। শহরের মধ্যে দিয়ে পণ্যবাহী লরি চলাচল করার ফলে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ। |
|
বেহাল রাস্তাতেও বাসের মাথায় লোক। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের হাল আরও খারাপ। ওই রাস্তার বেহাল দশার কারণে ১০ মিনিটের পথ পার হতে আধ ঘন্টারও বেশি সময় লাগছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা হয়ে চুঁয়াপুর মোড় পর্যন্ত ৩ওই রাস্তায় পিচ বলে আর কিছু নেই। পিচের চাদর উঠে গিয়ে রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এক টানা বৃষ্টিতে ওই খানাখন্দে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রাস্তা ছোট-খাটো পুকুর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করতে না পারার কারণেও যানজট হচ্ছে, তেমনি মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডে বহরমপুর পুরসভার তরফে যে টোল-ট্যাক্স আদায়, তাতে ওই যানজট আরও তীব্র হয়েছে।
এই অবস্থায় ফের মঙ্গলবার রাত থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার সারা দিন তার থেকে রেহাই মেলেনি। বুধবার সকাল থেকে কখনও ঝিরঝির করে, কখনও বা মুষল ধারায় বৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির পরে মাঝে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি বন্ধ হলো বলে যারা স্বস্তিতে ছিলেন, মঙ্গলবার রাতের কয়েক ঘন্টার মুষল ধারার বৃষ্টি তাদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে রাতের বহরমপুর।
এ দিকে বহরমপুর বাস টার্মিনাস থেকে বেলডাঙা-হরিহরপাড়াগামী বাসগুলি বাইপাস হিসেবে উত্তরবঙ্গ বাস টার্মিনাসের সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এতে বহরমপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। এখন ওই রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। একই ভাবে বাইপাস রাস্তা হিসেবে ট্রেকার স্ট্যান্ড লাগোয়া ধোপঘাটির রাস্তা দিয়ে যান চলাচল শুরু করায় ওই রাস্তাও দৈন্যদশায় পরিণত হয়েছে। পুরসভা ও প্রশাসন অবশ্য নির্বিকার।
বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য অবশ্য রাস্তা সারাইয়ের বিষয়ে নতুন কোনও আশ্বাস বাণী শোনাতে পারেননি। তাঁর কথায়, “বৃষ্টিতে রাস্তার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তায় খোয়া ইট ফেলে খানা-খন্দ বুজিয়ে ফেলার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। তাই বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু করা যাবে না।”
রাস্তা সারাই প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “এক নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অবিলম্বে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হবে।” |
|
|
|
|
|