রফার চেষ্টার পাশাপাশি সংসদে আক্রমণ

১৪ দিন অনশনে অনুমতি দিল্লির, অণ্ণার সিদ্ধান্ত আজ

নশন-ধর্নার প্রশ্নে অণ্ণা হজারের অনড় মনোভাব এবং তাঁর আন্দোলনে বিপুল জনসমর্থন দেখে ফের নরম হতেই হল সরকারকে। নতুন ভাবে আলোচনা শুরু করে অণ্ণাকে রামলীলা ময়দানে ধর্নার অনুমতি দিতেও রাজি হয়েছে তারা। গভীর রাতের খবর, ১৪ দিন অনশনের অনুমতি দিতেও রাজি পুলিশ। কিন্তু অণ্ণা কি তাতে সম্মত? সূত্রের খবর, কাল, বৃহস্পতিবার তাঁর সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন প্রবীণ গাঁধীবাদী নেতা, যিনি নিজের অবস্থানে অনড় থেকে এ দিনও তিহাড় জেলেই রয়ে গিয়েছেন।
রফার চেষ্টার পাশাপাশি অবশ্য কংগ্রেস তথা সরকার রাজনৈতিক ভাবে তাঁর আন্দোলন মোকাবিলা করার চেষ্টাও করেছে। গত কাল তাঁকে গ্রেফতারের ঘটনা যথার্থ পদক্ষেপ ছিল বলে যেমন আজ সংসদে দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, তেমনই এ-ও বোঝাতে চেয়েছেন যে, বর্ষীয়ান এই নেতার আন্দোলন অযৌক্তিক এবং তা সংসদীয় গণতন্ত্রের কাঠামোকেই দুর্বল করবে।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় অণ্ণার আন্দোলন সর্বভারতীয় স্তরে যে ভাবে সাড়া ফেলেছে, তাতে এখন দৃশ্যতই সংযত ও নরম আচরণ করছে সরকার। সে জন্যই আজ তিহাড় জেলে অণ্ণা এবং তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেন দিল্লি পুলিশের কর্তারা। অনশন-ধর্নায় অনুমতি না মেলা পর্যন্ত তিহাড় জেল থেকে অণ্ণা বেরোতে রাজি না হওয়ায় ঝুঁকতেই হয়েছে সরকারকে। অণ্ণা অনশনও চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলের বাইরে হাজার হাজার অণ্ণা সমর্থকের ভিড়ও পুলিশকে উদ্বেগে ফেলে। এই পরিস্থিতিতে সরকার অণ্ণা সমর্থকদের রামলীলা ময়দানে প্রতিবাদ সভা করতে দিতেও রাজি হয়। পাঁচ হাজারের পরিবর্তে ২৫ হাজার বিক্ষোভকারীকেও অনশন সভায় বসতে দিতে রাজি পুলিশ। তবে জট ছিল কত দিন ধরে অনশন চলবে, তা নিয়ে। পুলিশ সাত দিনের জন্য অনুমতি দিতে রাজি ছিল। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রশান্ত ভূষণ, কিরণ বেদীরা ৩০ দিনের জন্য অনুমতি চান। এই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে দিল্লির পুলিশ কমিশনারের বৈঠকে গভীর রাত পর্যন্ত টানাপোড়েন চলে। পরে দিল্লি পুলিশের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ১৪ দিন অনশন করুন অণ্ণা। তার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা বুঝে এক দিন করে অনশনের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। তবে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। টিম অণ্ণার তরফে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কাল অণ্ণা নিজেই নেবেন।
মুখে হাসি। তিহাড় জেলে অণ্ণা। ছবি: পি টি আই
তবে অণ্ণাদের সঙ্গে সমঝোতা করে রফাসূত্র বের করার চেষ্টা যেমন একটা দিক, তেমনই সরকার আজ রাজনৈতিক ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামে। গত রাতে তাঁর বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠকের পর আজ সকালে ফের কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। স্থির হয়, বিরোধীদের দাবি মেনে নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেবেন তিনি। তার পর অণ্ণাকে গ্রেফতার নিয়ে সংসদে আলোচনাতেও রাজি হবে সরকার। যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সরকার অণ্ণার আন্দোলনকে অযৌক্তিক এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর বলে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এবং সংসদে অন্য দলগুলিকে দিয়েও সে কথা বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে। তাঁরাও যে অণ্ণা হজারেদের তৈরি জন লোকপাল বিল সমর্থন করেন না, তা বিরোধীদের দিয়েও বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে।
সেই কৌশল অনুযায়ী লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত চায় না। কিন্তু কোনও গোষ্ঠী যদি সরকার ও সংসদের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে, তা হলে শান্তি বজায় রাখা সরকারের কর্তব্য। সেই কারণেই দুর্ভাগ্যজনক হলেও অণ্ণা হজারেকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ।” মনমোহনের কথায়, কঠোর লোকপাল সরকারও চাইছে। কিন্তু যে ভাবে অণ্ণা এবং তাঁর সমর্থকরা তাঁদের মতকে জোর করে চাপাতে চাইছেন, তা সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে আশঙ্কাজনক।
কংগ্রেসের কৌশল বুঝতে পেরে লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বলেন, যে ভাবে অণ্ণাকে বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাতে সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। কত জন বিক্ষোভ দেখাবেন, ক’দিন ধরে অনশন চলবে তা সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে না। তা ছাড়া কংগ্রেস যে ভাবে অণ্ণার মতো এক জন সৎ ও পরিচ্ছন্ন সমাজসেবীর চরিত্রহননে নেমেছে তা-ও ন্যক্কারজনক। একই মত পোষণ করেন সংযুক্ত জনতা দলের নেতা শরদ যাদব এবং বাম নেতারা।
তবে আলোচনায় তাঁরাও স্বীকার করে নেন, অণ্ণার জন লোকপাল বিলের সব ধারাকে তাঁরাও সমর্থন করেন না। এমনকী, বিতর্ক চলাকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির সময় সুষমা-ও স্বীকার করেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে কয়েকটি জায়গায় অণ্ণা হজারে যে ধরনের শব্দের প্রয়োগ করেছেন, তাতে তাঁর আপত্তি রয়েছে। বসপা নেতা দারাসিংহ চহ্বাণ এবং আর জে ডি নেতা লালুপ্রসাদ স্পষ্টতই সংসদের মর্যাদা সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিয়ে সওয়াল করেন। সেটাই প্রাপ্তি বলে মনে করছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, এটাই চাইছিল সরকার। গত কাল সংসদে আলোচনায় রাজি না হয়ে সরকারের ভুলই হয়েছে। কারণ, তাঁর দাবি, আজ সংসদে আলোচনার পর অন্তত অধিকাংশ দল মেনে নিয়েছে যে, অণ্ণার জন লোকপাল বিল তারা সমর্থন করে না। তা ছাড়া অণ্ণাকে গ্রেফতার করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে বিরোধীরা সরব হলেও, দিনের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম যখন জবাবি বক্তৃতায় গ্রেফতারের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেছেন, তখন নীরব থেকেছেন বিরোধীরা।
অবশ্য সেই কার্যকারণের ব্যাখ্যা আজ চিদম্বরম এমন ভাবে করেছেন যাতে অণ্ণাদের বিরুদ্ধে কোনও ভাবেই সরকারের আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ না পায়। সে জন্য আজ তিনি বারবার অণ্ণাকে প্রকৃত গাঁধীবাদী নেতা হিসাবে উল্লেখ করেন। আরও বলেন, অণ্ণাকে সাত দিনের জন্য তিহাড় জেলে বন্দি করতে চায়নি সরকার। কাল আদালতে অণ্ণাকে পেশ করার পর পুলিশ জানিয়েছিল, তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হোক। কিন্তু অণ্ণা প্রকৃতই গাঁধীবাদী। তাই তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, এর পরেও তিনি আইন লঙ্ঘন করবেন। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে সাত দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই খবর পাওয়া মাত্রই দিল্লি পুলিশকে মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে জবাবি বক্তৃতার শেষে চিদম্বরম ফের বলেন, মূল বিতর্ক হল, কে আইন প্রণয়ন করবে? সে ক্ষেত্রে যদি সংসদের অধিকার এক চুলও খর্ব হয়, তবে তা হবে সব থেকে দুঃখের দিন। সব মিলিয়ে বিতর্কের মুখ ঘোরাতে সরকার সংসদের মর্যাদাকেই মূল প্রশ্ন বলে তুলে ধরল ঠিকই। তবে অণ্ণার আন্দোলন সংসদীয় গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে সর্বভারতীয় স্তরে এই বার্তা দিতে সরকার কতটা সফল, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.