|
|
|
|
বাড়ি হবেই, এলাকায় গিয়ে আশ্বাস মমতার |
নুরুল আবসার • উদয়নারায়ণপুর |
বৃষ্টি সবে ধরেছে। সবুজ পাড় শাড়ি অল্প গুটিয়ে তিনি পা বাড়ালেন জলের মধ্যেই। দু’ধারের দোতলা বাড়িগুলিতে মুহূর্তে জমল ভিড়। কয়েক জন জল পেরিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছতে মরিয়া। “সাবধানে এসো। না হলে পা পিছলে পড়ে যাবে যে” সতর্ক করলেন যিনি, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজিরবিহীন ভাবে শুক্রবার এসে দাঁড়ালেন দামোদরের জলে প্লাবিত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে দুর্গতদের মধ্যে।
গিয়েছিলেন উদয়নারায়ণপুর ব্লক অফিসে। বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে। ফেরার কথা ছিল মহাকরণে। কিন্তু ব্লক অফিস থেকে বেরনোর সময়েই উদয়নারায়ণপুরের দলীয় বিধায়ক সমীর পাঁজাকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কাছাকাছি কোনও প্লাবিত এলাকায় যেতে চান। সমীরবাবু তাঁকে নিয়ে আসেন টোকাপুরে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের বাঁধে দু’দিনে অন্তত ৪টি জায়গায় বড় ভাঙন হয়েছে। ব্লকের ১১টির মধ্যে যে ৭টি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত তার মধ্যে একটি কুড়চি-শিবপুর। ওই পঞ্চায়েতেই টোকাপুর গ্রাম। |
![](13hgly1.jpg) |
জলে নেমে: বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উদয়নারায়ণপুরের টোকাপুরে। শুক্রবার হিলটন ঘোষের তোলা ছবি। |
গ্রামের কোথাও জল বইছে একহাত উপর দিয়ে। কোথাও কিছুটা নিচুতে। উদয়নারায়ণপুর-ডিহিভুরশুট রোডে জল যেখানে কিছুটা কম, সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যান সমীরবাবু। জলমগ্ন এলাকাতেও মমতাকে ঘিরে এগোতে থাকে ভিড়। রাস্তার দু’ধারের কয়েকটি দোতলা বাড়িতে প্রশাসনের তরফে নিচু এলাকার কিছু বাসিন্দাকে সাময়িক ভাবে এনে রাখা হয়েছে। তাঁরা উপর থেকে হাত নেড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের দুর্দশা বোঝাতে চান।
বছর বাহান্নর জহুরা বিবি সরাসরি চলে যান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পাশের জঙ্গলপুরে থাকতেন। মমতাকে তাঁর জিজ্ঞাসা, “কী করব বলতে পারেন?” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “ত্রাণ কিছু পেয়েছেন?” প্রৌঢ়া বলেন, “সকালে কিছুটা চিঁড়ে আর একটা ত্রিপল পেয়েছি। কিন্তু বাড়ির কী হবে? সেটা ভেঙে গিয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “চিন্তা করবেন না। আপাতত ত্রিপল রাখুন। জল সরলে এঁর (বিধায়ককে দেখিয়ে) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, বাড়ির ব্যবস্থা হবে।”
আবার কিছুটা এগোলেন মমতা। জল একটু বাড়ল। মুখ্যমন্ত্রীর স্বগতোক্তি, “কী অবস্থা!” আরও কিছুটা এগোতে বিধায়ক সতর্ক করলেন, “আর এগনো ঠিক হবে না দিদি। সামনে আরও জল।” থামলেন মমতা। দূরে মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোমরজল ভেঙে বহু গ্রামবাসী আসছেন রাস্তার দিকে। সমীরবাবুকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “নিচু এলাকার মানুষদের দ্রুত উঁচু এলাকায় তুলে আনার ব্যবস্থা করুন।”
ফেরার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীকে থামাল ন’বছরের স্বপ্নিল পাত্র। জলের মধ্যে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম। চমকেই উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, “আরে করছিস কী! জলে পড়ে যাবি যে।” মুখ্যমন্ত্রী চলে যেতে স্বপ্নিলের মা, সিংটি গ্রামের লিপিকাদেবী হাসি মুখে বললেন, “ছেলে বায়না ধরেছিল, দিদিকে
এক বার প্রণাম করবে।”
পরিস্থিতি যে ‘ভয়ঙ্কর’, তা টোকাপুরে আসার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। এ দিন দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ব্লক অফিসে আসেন তিনি। সেখানেও ভিড় অগুন্তি মানুষের। জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দন, পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এবং বিধায়ক সমীর পাঁজার সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও।
মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, দুর্গতদের দ্রুত ত্রাণ-সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে খোলা বাজার থেকে শিশুখাদ্য এবং শুকনো খাবার কিনে বিলি করার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আশ্বাস, টাকার অভাব হবে না। চালের বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলে জেলাশাসক জানান, কনফেড চাল পাঠায়নি। তখনই মুখ্যমন্ত্রী ফোনে এ নিয়ে কথা বলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে। কনফেডের চাল যত দিন না পৌঁছয়, তত দিন বাজার থেকে চাল কিনে কাজ শুরু করার জন্য সমীরবাবুকে তিনি নির্দেশ দেন। মিনিট পনেরোর বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর। ডিভিসি-কে ১০-১২ দিন জল ছাড়তে বারণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্যোগ মারাত্মক। কিছু করার নেই। ত্রাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করতে বলেছি। চালের ব্যবস্থাও করে গেলাম।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিনই অরূপ রায়ের নেতৃত্বে জেলার পাঁচ বিধায়ক পাশের প্লাবিত আমতা-২ ব্লকে গিয়ে বিডিও-র সঙ্গে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
|
বন্যার সামগ্রিক চিত্র |
• দুর্গত জেলা ১৪
• সতর্কিত জেলা ৯
• বন্যা কবলিত ব্লক ১৪৫
• ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ লক্ষ
• ত্রাণশিবিরে১৩ হাজার ৬৯০
• বাড়ি ভেঙেছে ৫৩ হাজার
• ক্ষতিগ্রস্ত চাষ৬ লক্ষ ৪০০ হেক্টর |
|
|
|
![](https://archives.anandabazar.com/newimages/blank.gif) |
|
|