উদাসীন মৎস্য দফতর
ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করায় বাজার হারাচ্ছে শুঁটকি
থায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালির রসনা-তৃপ্তিতে মাছের ব্যবহারও বৈচিত্রপূর্ণ। সেই বৈচিত্র-বিলাসেরই অন্যতম অঙ্গ শুকনো মাছ ওরফে শুঁটকি। এ বাংলার মাছ শুকনো হয়ে পাড়ি দেয় ওপার বাংলাতেও। উত্তর-পূর্ব ভারতেও ভাল রকম কদর রয়েছে এ রাজ্যের শুঁটকি মাছের। সেই জিভে জল আনা শুঁটকিই কি প্রাণ-সংশয়ের কারণ হতে পারে?
প্রশ্নটা কিন্তু উঠে গিয়েছে। পচন ঠেকাতে মাছ শোকানোর সময়ে যথেচ্ছ হারে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে এ রাজ্যের, বিশেষত উপকূল অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টা যে কেউ জানত না, এমন নয়। কিন্তু শুঁটকি মাছের চাহিদা এতই বেশি যে তা নিয়ে হইচই করতে চাইত না কেউ। সম্প্রতি বাংলাদেশ-সহ কয়েকটি দেশ ‘অস্বাস্থ্যকর ও বিষাক্ত’ বলে এ রাজ্যের শুঁটকি মাছ ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মৎস্য দফতরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও।
দিঘা মোহনায় মাছ শুকনো করতে অবাধে চলেছে কীটনাশক প্রয়োগ। নিজস্ব চিত্র।
অভিযোগ, মাছ শুকনো করার সময়ে ব্যবসায়িক স্বার্থে মৎস্যজীবীরা কাঁচা মাছে প্রচুর পরিমাণে মেটাসিড, ফর্মালিন, বিএইচসি ৫০, সাইপারমাইথিন, এন্ডোসালফার, ক্লোরোপাইরিফস এমনকী গ্যামাকসিন পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। কাঁথি মহকুমার জুনপুট, দাদনপাত্রবাড়, জলধা, বগুড়ান জলপাই, শৌলা-সহ উপকূলের বিয়াল্লিশটি মৎস্যখটির প্রায় সব ক’টিতেই মাছ শোকানোর সময়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগও এই অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না। তাঁর বক্তব্য, “খুব দ্রুত মাছ শোকানো ছাড়াও পচন ঠেকিয়ে দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে মৎস্যজীবীরা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন।”
বিষাক্ত ওই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মেশানো শুঁটকি মাছ খেলে সাধারণ মানুষের গ্যাসট্রাইটিস, গ্যাসট্রিক আলসার, নার্ভের অসুখ হতে পারে। এমনকী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জীবনহানিও ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। অলবেঙ্গল ড্রাই ফিশ বায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিনোবা জানার কথায়, “কলকাতা, উত্তর-পূবর্র্ ভারতের মণিপুর, ত্রিপুরা, অসম, নাগাল্যান্ড এমনকী প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও রফতানি হত আমাদের শুঁটকি মাছ। কিন্তু এ রাজ্যের শুঁটকি মাছ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে বিদেশের ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে অনেকেই তা ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকী বাংলাদেশের সরকার প্রায় এক কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট করে দিয়েছে।” অবৈজ্ঞানিক উপায়ে শোকানোর ফলে শুঁটকি মাছের বাজার যে ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে তা মেনে নিয়ে নেটওয়ার্ক ফর ফিশ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেনেবল ফিশিং বা নেটফিশ-এর রাজ্য সঞ্চালক অতনু রায় বলেন, “গত বছর কলকাতা থেকে বিদেশে ৬০৬৪ মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ রফতানি হলেও এ বছর রফতানি নেই বললেই চলে। এ রাজ্যের শুঁটকি মাছ খাদ্য হিসাবে ক্ষতিকর বলে বিদেশের ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বাইরের অধিকাংশ দেশই এ রাজ্যের শুঁটকির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।”
এর জন্য দরিদ্র মৎস্যজীবীদের অবশ্য দায়ী করতে চাইছেন না বেনফিশের ভাইস চেয়ারম্যান তথা কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির কার্যকরী সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানা। তাঁর বক্তব্য, “অযথা মৎস্যজীবীদের দায়ী করে লাভ নেই। চিরাচরিত প্রথায় তৈরি শুঁটকির তুলনায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে তৈরি শুঁটকি মাছ অনেক বেশি দাম দিয়ে কেনেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তাই মাছ শোকানোর জন্য নিষিদ্ধ ফর্মালিনে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা ছাড়াও পোকামাকড়, পিঁপড়ের উপদ্রব কমাতে গ্যামাকসিন, ডাসবার্ন, ক্লোরো-পাইরিফস নামক রাসায়নিকগুলি মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর জেনেও ব্যবহার করে থাকেন মৎস্যজীবীরা।”
এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি মৎস্য দফতরের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন বিনোবা জানা। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে শুঁটকির গুণগত মান নির্ণয় করার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মৎস্য দফতর। ফলে যথেচ্ছাচার চলছে। এখন ভিন্ দেশের মতো অভ্যন্তরীণ বাজারেও মার গেলে মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা চূডান্ত সঙ্কটে পড়বেন। অস্বাস্থ্যকর ও বিষাক্ত শুঁটকি মাছ বিক্রি বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে মৎস্য দফতরকেই।”
সব জেনেও মৎস্য দফতর কড়া পদক্ষেপ করছে না-ই বা কেন?
দফতরের সহ-অধিকর্তা সুরজিৎবাবু ‘শিবির করে রাসায়নিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মৎস্যজীবীদের সচেতন করা হচ্ছে’ বলেই দায় সেরেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৎস্যজীবীর কথায়, “কোটি কোটি টাকার লেনদেন যেখানে, সেখানে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তিদের সচেতন করে লাভ নেই। রুজির টানে বাজারের চাহিদা মেনে নিতে হয় আমাদের। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বা সামর্থ্য তো আমাদের নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.