দ্বিতীয়ের পাশাপাশি শুরু তৃতীয় সেতুর কাজও
খানে রাস্তা তৈরি হয়নি। ওখানে অসমাপ্ত পড়ে সেতু। দু’জায়গাতেই সে জন্য মানুষের দীর্ঘ কালের ভোগান্তি। বাইপাস না থাকায় বর্ধমানের পানাগড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা পেরনো এখন কার্যত নিত্যযাত্রীদের দুঃস্বপ্ন। অপরিসর রাস্তায় নিত্য যানজট। লেগেই রয়েছে দুর্ঘটনা, বিক্ষোভ। রূপনারায়ণ নদের উপরে দ্বিতীয় সেতু দীর্ঘকাল অসমাপ্ত থাকায় ছবিটা প্রায় একই ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটেও। তবে এ বার সেখানে আসতে চলেছে ‘পরিবর্তন’। প্রায় সাত বছর বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হয়েছে কোলাঘাটে। হাত পড়েছে তৃতীয় সেতুতেও।
জাতীয় সড়ক সংস্থা (এনএইচএআই) সূত্রের দাবি, আগামী এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সেতু তৈরি হয়ে যাবে। মুম্বই রোডকে ছয় লেনে পরিণত করা সিদ্ধান্তও পাকা। সেই প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে নির্মাণ শুরু হয়েছে তৃতীয় সেতুরও। ওই কাজ শেষ হবে ২০১৪ সালের মধ্যেই। ফলে, প্রত্যাশা রয়েছে আগামী তিন বছরের মধ্যে কোলাঘাট পাবে ঝকঝকে নতুন দু’টি সেতু।
কোলাঘাটে দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হয় সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পে । ২০০৪-এ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে ওই বছরেই চলে যায় ঠিকাদার সংস্থা। ওই ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে জাতীয় সড়ক সংস্থা। কিন্তু ২০০৮-১০ পর্যন্ত তিন বার বিজ্ঞাপন দিয়েও কোলাঘাটে অসমাপ্ত সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করানোর জন্য নতুন কোনও ঠিকাদার সংস্থা খুঁজে পায়নি তারা।
চলছে তৃতীয় সেতুর কাজ। ছবি: হিলটন ঘোষ
এই পরিস্থিতিতে সব গাড়ির চাপ এসে পড়ে পুরনো সেতুটির উপরে। ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত মুম্বই রোড চার লেনে পরিণত হওয়ার পরে এই রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ৬৭ হাজার ‘ইউনিট’ গাড়ি চলাচল করে। (সড়ক পরিবহণ আইনের পরিভাষায় বড় গাড়ি, ট্রাক এবং বাসকে কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা হয়। একটি ভারী ট্রাক ছয় ইউনিটের সমান)। ১৯৬৭ সালে তৈরি ওই সেতুর বহনক্ষমতা বর্তমানে অনেক কমে গিয়েছে। দু’পাশে মুম্বই রোড চার লেনের হলেও সেতুর উপরে রাস্তাটি দুই লেনের। এই পরিস্থিতিতে দিনের অনেকটা সময়ে সেতুর দু’দিকে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে। মাঝে মাঝে যানজট কাটতে লাগে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা। গাড়ি পারাপার করার সময়ে জীর্ণ সেতুটি দুলতে থাকে। মাঝে মাঝে মেরামতি হলেও, তার কয়েকদিনের মধ্যে অবস্থা ফের যে-কে-সেই।
এই প্রেক্ষিতে ২০১০-এ গোড়ায় মুম্বই রোডকে ছয় লেনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় সড়ক সংস্থা। তখনই ঠিক হয়, যে ঠিকাদার সংস্থা ওই কাজ করবে, তাদেরই অসমাপ্ত দ্বিতীয় সেতুর নির্মাণ শেষ করার বরাত দেওয়া হবে। তৃতীয় সেতুটির কাজও করবে ওই ঠিকাদার সংস্থা। মুম্বই রোডকে ছয় লেনে পরিণত করার জন্য ঠিকাদার বাছাইয়ের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। ওই ঠিকাদার সংস্থাই কোলাঘাটে অসমাপ্ত সেতুর কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জাতীয় সড়ক সংস্থা সূত্রের খবর। একই সঙ্গে তারা তৃতীয় সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।
অসমাপ্ত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১,১০০ মিটার। মোট ২২টি স্তম্ভের উপরে সেতুটি নির্মিত হওয়ার কথা। মাত্র ১৭টি স্তম্ভ তৈরি করে আগের ঠিকাদার সংস্থা চলে গিয়েছিল। তার মধ্যে আবার ৩টি স্তম্ভ জলের তোড়ে বেঁকে গিয়েছে। জাতীয় সড়ক সংস্থার কলকাতা ইউনিটের প্রকল্প অধিকর্তা অনিলকুমার দীক্ষিত বলেন, “ওই তিনটি বেঁকে যাওয়া স্তম্ভকে সোজা করা বা উপড়ে ফেলা যাবে না। ওই তিনটি স্তম্ভের পাশেই নতুন তিনটি স্তম্ভ তৈরি করা হবে।” বাগনানের নাওপালার দিকে কাজ শুরু হলেও কোলাঘাটের দিকে নদীর পাড়ে কিছু জবরদখলকারীর জন্য তাঁরা তৃতীয় সেতুর কাজ করতে সমস্যায় পড়ছেন বলে ঠিকাদার সংস্থার কর্তারা জাতীয় সড়ক সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছেন। অনিলবাবু অবশ্য বলেন, “জবরদখলকারীদের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের কর্তারা কথা বলছেন। স্থানীয় নেতারাও বিষয়টি দেখছেন। সমস্যাটি মিটে যাবে।”
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুম্বই রোড ধরে হাওড়া ও কলকাতায় দৈনিক গড়ে প্রায় ৩০০ বাস যাতায়াত করে। কোলাঘাটের দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিঃশাস ফেলেছেন বাস ব্যবসায়ীরা। মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক প্রভাত পানের কথায়, “কোলাঘাটের পুরনো সেতুর জন্য যানজটে বিরক্ত হয়ে মানুষ অন্য পথে হাওড়া, কলকাতায় যাচ্ছেন। নতুন সেতু চালু হলে মানুষ ফের বাসে যাবেন। দুর্ঘটনা এবং যানজটদু’টোই কমবে।”বাইপাস নিয়ে প্রশাসনের ‘উচ্চবাচ্য’ না থাকায় পানাগড়-পরিস্থিতি অবশ্য এখনও অপরিবর্তিত।
First Page Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.