মমতা দেখুন
স্বাস্থ্য দফতর-জেলা পরিষদ চাপানউতোরে রোগী ‘উলুখাগড়া’
হাসপাতালের দায়িত্ব কার সেই প্রশ্নে স্বাস্থ্য দফতর এবং জেলা পরিষদের মধ্যে চাপানউতোরে ভুগছেন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ মানুষ। তাতে অবশ্য কোনও পক্ষেরই কিছু যায় আসে না। কারণ অবস্থার পরিবর্তনে অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকেই তেমন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে দিনের পর দিন এমনই অবস্থা চলছে।
গ্রামীণ হাসপাতাল হলেও ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা আজও এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অধরা। তাই হাসপাতাল শব্দটি শুনলে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। সম্প্রি রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর থেকে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে রাজর্ষি সেনগুপ্ত নামে এক চিকিৎসকের নিয়োগ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন বের হয়। সেখানে বলা হয়, যে সমস্ত চিকিৎসককে নিয়োগ করা হল, তাঁরা যেন নির্দিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন। গত ২৮ এপ্রিল এই নোটিফিকেশন হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই চিকিৎসক গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে কাজে যোগ দেননি।
--নিজস্ব চিত্র।
যদিও ইতিমধ্যে তিনি মছলন্দপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক হিসাবে যোগ দিয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গোবরডাঙার মানুষ। গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে জানতে চালে উনি বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে, তাই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষে ওখানে কোনও চিকিৎসক দেওয়া সম্ভব নয়’। এই নিয়ে ওঁর সঙ্গে আমার বচসাও হয়।” আর কী বলছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুতান্ত শীল? সুকান্তবাবুর কথায়, “ওই হাসপাতাল জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় সেখানে চিকিৎসক নিয়োগ করে তারাই। ফলে আমরা ওখানে কোনও চিকিৎসক পাঠাতে পারি না। তা ছাড়া ওই হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী আসে, তাতে যে ক’জন চিকিৎসক রয়েছেন তা ঠিকই আছে। নতুন যে চিকিৎসকের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁকে মছলন্দপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ করা হয়েছে।”
অন্যদিকে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্বপন ঘোষ বলেন, “এখানে স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় সরকারি নানা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। তা ছাড়া একানে কোনও রোগী কল্যাণ সমিতি নেই। রাজর্ষিবাবু দায়িত্ব নিলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত। রোগী কল্যাণ সমিতিও তৈরি করা যেত।”
আর কী বলছে জেলা পরিষদ? জেলা পরিষদের সভাধিপতি ভরত দাসের বক্তব্য, “ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল। রোগীদের ভাল পরিষেবা দিতে পরিকাঠামো কি কি বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে আমরা স্বাস্থ্য দফতরকে জানাব।”
রোগীদের এবং তাঁদের বাড়ির লোকদের অভিযোগ, সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হয়। যদিও তার অবস্থা খুবই শোচনীয়। কিন্তু উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই তাঁদের এখানে আসতে হয়। অন্য সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেকাতে গেলে চিকিৎসার জন্য রোগীকে দিতে হয় ২ টাকা। এখানে সে ক্ষেত্রে দিতে হয় ৫ টাকা। এবং তাও সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে এলে তবেই। এর বাইরে অন্য সময়ে বহির্বিভাগে দেখাতে গেলে দিতে হয় ১০ টাকা। অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি করতে গেলে লাগে ৩০ টাকা। চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রোগীকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনওরকম খাবার দেওয়া হয় না। ফলে বহু গরিব মানুষই এখানে চিকিৎসার জন্য আসতে পারেন না। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, কোমরে ব্যাথা নিয়ে বহির্বিভাগে এক দুঃস্থ বৃদ্ধা দেখাতে এসেছিলেন। এ জন্য টাকা লাগবে বলায় ফিরে গেলেন তিনি।
তবে টাকা দিলেও যে সঠিক পরিষেবা মিলবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই এখানে। কারণ হাসপাতালের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই অকেজো। এক বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। তার ওফর দীর্ঘদিন ধরে কোনও অ্যানাস্থেটিস্ট নেই। রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও নেই কোও প্যাথোলজিস্ট। একজন মাত্র টেকনিশিয়ানই সব দেখভাল করেন। হাসপাতালে কোনও আলট্রা-সোনোগ্রাফির যন্ত্র নেই। জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে একটি সংস্থা সপ্তাহে দু’দিন এসে এই পরিষেবা দেয়। অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা মাত্র তিরিশ। কিন্তু সেগুলিরও কিছু ফাঁকা থাকে। কারণ ভর্তি হতে গেলে যে টাকা লাগে অনেকেই তা দিতে পারেন না। অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। আগে প্রসূতিদের ‘সিজার’ করার ব্যবস্থা থাকলেও বহুকাল ধরে তা বন্ধ। হাসপাতালে অবশ্য চিকিৎসক আছেন ৬ জন। এঁদের মধ্যে চারজন চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। চিকিৎসকদের নিয়োগ এবং বেতন সবই হয় জেলা পরিষদ থেকে। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। কমিশনের ভিত্তিতে একজন সার্জন আছেন। রোগীদের কাছে ফি নেন ৫০ টাকা। যার মধ্যে হাসপাতালকে দিতে হয় ২০ টাকা।
২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি গ্রামীণ হাসপাতাল হিসাবে এটি চালু হয়। তার আগে এটি ছিল উপ-সহায়ক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গোবরডাঙা এবং সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার দাবিতে স্থানীয় মানুষ এবং পুর উন্নয়ন পর্ষদ নামে একটি সংস্থা দীর্গদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালটি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে না থাকার কারণেই এই সমস্যা বলে স্বাস্থ্য দফতরের বক্ত ব্য হলেও, স্থানীয় মানুষের দাবি, হাসপাতালে কার অধীনে সেটা জেনে তাঁদের কী লাভ? তাঁরা চিকিৎসা পরিষেবা চান। এ জন্য নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের দাবি, অবিলম্বে হাসপাতালটিকে স্বাস্থ্য দফতেরর অদীনে আনা হোক। সুভাষবাবু বলেন, “রোগীরা যাতে এখানে এসে কম পয়সায় ভাল চিকিৎসা পরিষেবা পান সে জন্য আমরা একে স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাব।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.