দক্ষিন কলকাতা
নাগরিক বোধ
জঞ্জালে জলাঞ্জলি
পুরকর্মীরা কাজ করেন না, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এ বার অভিযোগটা উল্টো। পুরকর্মীরা কাজ করেন নিয়মিত, কিন্তু স্রেফ বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবে আবর্জনাময় হয়ে উঠছে লেক গার্ডেন্স, যোধপুর গার্ডেন এলাকা, অভিযোগ বাসিন্দাদেরই।
এই এলাকায় পুরসভার জঞ্জাল সংগ্রাহকেরা নিয়মিত আসেন। তবু লেক গার্ডেন্স জুড়ে যেখানে-সেখানে গজিয়ে উঠেছে অনেকগুলি ‘ভ্যাট’। অভিযোগ, এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা এই সব ভ্যাটে প্লাস্টিকের ঠোঙায় অথবা খোলা অবস্থায়ই ময়লা ফেলেন সারা দিন ধরে। পাখি ও জন্তুরা টানাটানি করে গোটা এলাকায় ময়লা ছড়ায়। রবিবার অবস্থাটা চরমে ওঠে। এ দিন ময়লা-সংগ্রাহক এলেও আসেন বেলায়। তা ছাড়া, সামান্য বৃষ্টি হলেও দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
লেক গার্ডেন্সের নব নালন্দা স্কুল এবং এ কে ঘোষ মেমোরিয়াল স্কুলের দূরত্ব বেশি নয়। এর মধ্যেই রয়েছে দু’টি এ রকম ভ্যাট। ওই ভ্যাট দু’টির একটি আবার এক আবাসনের সামনে। আবাসনের বেরোবার একটি গেটও তার ফলে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ। ওই ভ্যাটের পাশেই রয়েছে পুরসভার খাওয়ার জলের কল। ওই আবাসনে থাকেন চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকার কোনও ময়লাই এই ভ্যাটগুলিতে ফেলা হয় না। বাইরের মানুষ ফেলেন। আমার দোতলার বারান্দায় কাক এসে ওই সব নোংরা ব্যাগ থেকে যাবতীয় নোংরা ছড়ায়। আমাদের আবাসনের একটা গেটও বন্ধ। পাশেই জলের কল। ওই জলও দূষিত হচ্ছে।
তা ছাড়া স্কুলপড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অস্বাস্থ্যকর।” স্থানীয় বাসিন্দা চিন্তামণি সাহা বলেন, “অধিকাংশ পরিচারিকা বা ঝাড়ুদারই নোংরা এনে এই সব জায়গায় ফেলেন। বাড়ির বা ফ্ল্যাটের কর্তা খোঁজও রাখেন না।” বাসিন্দা ব্রজ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরাই তো লেক গার্ডেন্স অঞ্চলটিকে দূষিত করছি। অন্যের বাড়ির দরজার সামনে ভ্যাট তৈরি করতেও দ্বিধাবোধ করছি না। আসলে গোটা লেক গার্ডেন্সের এই গোবিন্দপুর রোড যা যোধপুর এলাকায় ভ্যাট তৈরি করার কোনও জায়গা নেই। ঘিঞ্জি এলাকা। যোধপুর গার্ডেনে দেখবেন এক বাড়ি থেকে এক বাড়ির দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি। লেক গার্ডেন্সে কারও সময় নেই এ নিয়ে চিন্তা করার। ফলে যেখানে-সেখানে ভ্যাট থেকেই যাচ্ছে।”
যোধপুর গার্ডেনের পাশে সংহতি পার্কের পাশেই পরিত্যক্ত জমিতে তৈরি হয়েছে এ রকম ভ্যাট। এলাকার বাসিন্দা আশিস বিশ্বাস বলেন, “আমার বয়স হয়েছে। ওপরের বারান্দায় গিয়ে যে একটু হাওয়া খাব তার উপায় নেই। ওই জমিটা এখন ভ্যাটে পরিণত। ময়লা নেওয়ার জন্য রোজ গাড়ি আসে। তবু কেন যে মানুষ সচেতন নন বুঝতে পারি না।”
এই সব ভ্যাটে নিয়মিত ময়লা ফেলেন ঝাড়ুদার মনোজ দাস। বললেন, “আমি তো রোজ এই সব ভ্যাটে ময়লা ফেলি। কোথায় ফেলব? কেউ তো কোনও দিন বারণ করেনি। এই আবাসনের ময়লা ও পারে ফেলি। ও পারেরটা এ পারে।” পরিচারিকা লক্ষ্মীমণি বলেন, “যে বাড়িতে কাজ করি, সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ময়লা ফেলার জায়গা সামনে পাই সেখানেই ফেলি। নইলে ফেলব কোথায়?” গাড়ির কাচ নামিয়ে মঞ্জুদেবী ময়লা ছুড়ে দিলেন। জিজ্ঞাসা করায় বললেন, “সবাই ফেলছে। আমিও ফেলছি। সবাইকে বারণ করুন। আমিও ফেলব না।”
নিকাশি বিভাগের এক কর্মী বলেন, “আমি রোজ ভোর পাঁচটায় কাজ শুরু করি। অলিগলিতে যদি এ রকম ভ্যাট গজাতে থাকে সেগুলি পরিষ্কার করব, না বাড়ি থেকে সংগ্রহ করব? প্রত্যেককে বলি, দরজার গোড়ায় রেখে দিন, আমি নিয়ে নেব। কেউ রাখেন না। সবাই রাস্তায় ফেলেন।”
কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মালা মহলানবিশ বলেন, “শুধু লেক গার্ডেন্স বা যোধপুর গার্ডেন নয়, গোটা ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড জুড়েই এই অবস্থা। এটা করছেন ‘শিক্ষিত’ মানুষজনই। কেউ সচেতন নন। আমি অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছি না।”
সচেতনতার অভাবই যে সমস্যাটার মূল কারণ সেটা মানছেন সবাই। কিন্তু সচেতনতা ফিরবে কী ভাবে? মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “লেক গার্ডেন্স অঞ্চলে জায়গার অভাবে ভ্যাট করা যাচ্ছে না। আমাদের লোক নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করেন। কিন্তু অনেকেই সেখানে পরিষ্কারের পরই ময়লা ফেলেন। ব্লক সরকারকে বলেছি জরিমানা করতে। ইতিমধ্যে কয়েক জনের জরিমানা করাও হয়েছে। চেষ্টা করছি, কিন্তু সচেতনতা ফিরছে না।”
অতএব এখন বাসিন্দাদের সদিচ্ছার অপেক্ষা।
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.