দক্ষিন কলকাতা
হয়নি স্বাস্থ্যকেন্দ্র
উদ্যোগ স্থগিত
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কেটে গিয়েছে প্রায় এক বছর। কিন্তু আজও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়নি। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বুলেভার্ডের উপরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। জানা গিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশের সৌন্দর্যহানি ঘটবেকিছু প্রাতর্ভ্রমণকারীর এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আর তৈরি করা হয়নি। যদিও প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলে এই বুলেভার্ডের উপরেই একে একে গড়ে ওঠে সুলভ শৌচালয়, সুইমিং ক্লাব, ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড অফিস এবং এই ওয়ার্ডেরই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
গোলপার্ক মোড় থেকে টালিগঞ্জ থানা পর্যন্ত সাদার্ন অ্যাভিনিউ দু’টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। রাস্তার মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত বুলেভার্ড, চওড়ায় প্রায় ৩০ ফুট। এই বুলেভার্ডের উপরেই রয়েছে সুলভ শৌচালয়, যেটি তৈরি হয় ২০০৭ সালে। রয়েছে ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের বুলেভার্ডে সুইমিং পুল, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড অফিস এবং হেল্থ ইউনিট। এ ছাড়াও রয়েছে বড়সড় ভ্যাট।
কিন্তু শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠাতেই প্রাতর্ভ্রমণকারীদের আপত্তি কেন? এই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূলের বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বললেন, “গত পুরবোর্ডের সময় বরো চেয়ারম্যান অনিল মুখোপাধ্যায় ভিত্তিপ্রস্তরটি উদ্বোধন করেন। অন্য জায়গা না পাওয়ায় বুলেভার্ডের এই ফাঁকা জায়গাটিতেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব হয় এবং তার ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন হয়। কিন্তু তার পরই জানা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলে পরিবেশের সৌন্দর্যহানি ঘটবে বলে সরোবরের প্রাতর্ভ্রমণকারীরা অভিযোগ জানিয়েছেন পুরসভায়। তাই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ আর শুরু করা যায়নি।” প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সংগঠন ‘রবীন্দ্র সরোবর লাভার্স ফোরাম’-এর পক্ষ থেকে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণ কলকাতায় একমাত্র সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বুলেভার্ডই সব থেকে বেশি চওড়া ও সবুজ অনেক বেশি। আমরা কোনও মতেই চাইনি, তা ধ্বংস হোক। তাই এক বছর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরেই আমরা তৎকালীন সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানাই।”
বর্তমান কাউন্সিলর চৈতালী চট্টোপাধ্যায় জানান, ৯০ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি বস্তি এলাকা রয়েছে পঞ্চাননতলা, কাঁকুলিয়া, ২ নম্বর লেক ক্যাম্প এবং বালিগঞ্জ স্টেশন রোডের বস্তি। এর মধ্যে পঞ্চাননতলার দুটি ভাগে বিভক্ত অঞ্চলটিতে আলাদা আলাদা ৫টি বস্তি রয়েছে। এক একটি বস্তিতে লোকসংখ্যা ২ হাজারের কাছাকাছি। এ ছাড়াও রয়েছে কাঁকুলিয়া, ২ নম্বর লেক ক্লাব ও বালিগঞ্জ স্টেশন রোড সংলগ্ন বস্তি। সব ক’টিতেই হাজারের কাছাকাছি লোকসংখ্যা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এতগুলি বস্তি এলাকা থাকায় ওয়ার্ডটি ম্যালেরিয়া-প্রবণ। এ কথা মাথায় রেখেই গত পুরবোর্ডের সময় বরো অফিসের অনুমোদনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হয়। দিনক্ষণ দেখে তার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন হয়। কিন্তু পরে পুরসভায় অভিযোগ জমা পড়ায় কাজ আর শুরু হয়নি। তা হলে কি আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হবে না? ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বললেন, “বর্তমান বরো চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা অন্য জায়গা যদি খুঁজে পাই, তখন সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি করা হবে।’’ কিন্তু ওয়ার্ডে খুব শীঘ্রই যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে তা স্বীকার করেছেন কাউন্সিলর। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরকার আছে জানি, কিন্তু ওখানে নয়, তা হবে অন্যত্র।”
স্থানীয় সূত্রে বলা হয়, ওয়ার্ডের এক অংশ বস্তিবাসী এবং দরিদ্র শ্রেণির লোকজনের পক্ষে বড় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তার উপর প্রায়ই ম্যালেরিয়া লেগে থাকে। কিন্তু সাধারণ ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের রক্তপরীক্ষা তো দূর অস্ৎ, ওয়ার্ডে গরিব মানুষের সাধারণ রক্ত পরীক্ষার জন্যও কোনও ব্যবস্থা নেই।
বর্তমান বরো চেয়ারমান দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ, দু’জনেরই বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ থাকাকালীন রবীন্দ্র সরোবরের প্রাতর্ভ্রমণকারী সংগঠন অভিযোগ জানায় ওই এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠলে পরিবেশের সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি বিবেচনার জন্য মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছেন বলে আমরা জানি।
প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “যদি পরিবেশের সৌন্দর্যের কথা বলা হয় তা হলে অবশ্যই সৌন্দর্য বিঘ্নিত হবে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনও কাজ করতে হয় এবং সেই কাজের জন্য সঠিক জায়গার অভাব দেখা যায় সে ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করি।” যদিও বর্তমান মেয়র বলেন, “আগে যে ভুল হয়েছে সেই ভুল আর করা হবে না। আগে এখানে নানা নির্মাণের জন্য প্রচুর গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি আর নতুন করে কোনও গাছপালা নষ্ট হতে দিতে পারি না।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.