নিউজিল্যান্ড
অকল্যান্ডে মাতৃবন্দনা
পুজোর শুরু
২০১১ সালে অকল্যান্ড বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজোর বয়স হল ২০। অবশ্য ১৯৯২-এ মুষ্টিমেয় কয়েক জনের উত্সাহে পুজোর শুরুটা ছিল নিতান্তই কয়েকটি পরিবারের ঘরোয়া উদযাপন। তখন নিউজিল্যান্ডে বাঙালি ছিল এক ‘দুষ্প্রাপ্য প্রজাতি’। আজ সেই পুজো প্রায় শতাধিক বাঙালি এবং বেশ কিছু অবাঙালি পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণে এক সফল ও আনন্দময় অনুষ্ঠান।

পুজোর বৈশিষ্ট্য
শুরু থেকে বহু কাল অবধি পুজো হয়েছে শোলার তৈরি মাতৃমূর্তিতে। ২০০২ সালে কুমোরটুলি থেকে শিল্পী গোরাচাঁদ পাল মহাশয়ের নির্মিত একচালার অপূর্ব প্রতিমা আনানো হয় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। বিদেশে প্রতিমা বিসর্জন বিলাসিতা, অকল্পনীয়। তাই প্রতি বছর পুজোর আগে মূর্তি বার করা হয় সযত্নে তুলে রাখা সিন্দুক থেকে। আবার পুজোর পর এক বছরের জন্য মায়ের মর্মর মূর্তির বাসস্থান হয় ‘প্রফেশনাল প্যাকার’-এর গুদামে।

প্রথম থেকে এই ২০ বছর নিখাদ নিষ্ঠা ভরে পুজো করে আসছেন ভাটপাড়ার ব্রাহ্মণ দেবেশ ভট্টাচার্য— আদতে শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ার, অত্যন্ত প্রবীন ও সম্মানিত অধ্যাপক। কিন্তু পুজোর ওই ক’দিন ওঁর কাছে নিশ্চিন্তে শিক্ষা নিতে পারেন উত্তর কলকাতার অভিজ্ঞ পুরোহিত মহাশয়রাও। দেবেশদাকে জোগাড়ে সাহায্য করার জন্য এক পায়ে খাড়া থাকেন প্রমীলামহলের সকলেই।

পুজোর মণ্ডপ প্রতি বারই কোনও না কোনও স্কুলবাড়িতে সাজানো হয়।

ভোগ বিশেষত্ব
পুজোর ক’দিন অকল্যান্ডের বেশির ভাগ বাঙালি বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। শুক্রবার রাত থেকে রবিবার অবধি খাওয়াদাওয়া সবই হয় পুজোর স্কুলবাড়িতে। এক দল আত্মত্যাগী মানুষ ভোর থেকে রাত অবধি অক্লান্ত খেটে সানন্দে তৈরি করেন প্রতি দিন পুজোয় আসা বেশ কয়েকশো মানুষের জন্য জিভে লেগে থাকা খিচুড়ি, পোলাও, লাবড়া, এচোঁড়, ছানার ডালনা ইত্যাদি সব লোভনীয় পদ।

পুজোর শেষ রাতে আমিষ রান্না হয়। পাত পেড়ে ভোজের আনন্দে মা-বাবাদের চোখমুখ তো চকচক করেই, অবাক লাগে দেখতে বিদেশে জন্মানো এবং বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের— ম্যাকডোনাল্ড-কেএফসির চেয়েও তৃপ্তি ভরে চেটেপুটে খায় সেই ‘বাঙালি খানা’।

পুজোর আকর্ষণ
দেবেশদার পুজো এবং প্রতি তিথির পুজোয় অন্তত বার চারেক পুষ্পাঞ্জলির সময়টুকু ছাড়া বাকি প্রায় সমস্ত সময় ঠাসা থাকে নানা অনুষ্ঠানে। সাধারণত সকালের দিকে ছোটদের নানান প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আর বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজোর আগের তিন-চার মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সৃষ্টির আনন্দে তৈরি করা বিভিন্ন প্রযোজনার মান বিদেশের জন্য গর্বের তো বটেই— কলকাতার নিরিখেও নিঃসন্দেহে যথেষ্ট উচ্চমানের। কুশীলবদের বয়স অনায়াসে তিন থেকে ষাট বা তার বেশি!

এ বারের পুজো
বেশির ভাগ বিদেশি পুজোর আয়োজনের মতো অকল্যান্ডের পুজোও আড়াই দিনের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। কলকাতার পুজোর কাছাকাছির সপ্তাহান্তে শুক্রবার বিকেলে শুরু হয়ে রবিবার সন্ধ্যায় সমাপ্তি। এই নিরুপায় নির্ঘণ্টের কারণে অনেক সময় কলকাতার পুজো শুরুর আগেই এখানে বিজয়া সারতে হয় (যেমন ঘটেছে এ বছর)। তবে দিনের হিসেবে কিছুটা কম হলেও আনন্দ উত্সাহের ভাঁড়ারে কোনও ভাবে দেশের চেয়ে মজার খামতি থাকে না ছেলে-বুড়োদের মনে।

উদ্যোক্তা
অকল্যান্ড বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন

তথ্য: সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
 
হাওয়াবদল
জাপান
বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন
অফ টোকিও
নিউজিল্যান্ড
অকল্যান্ড বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন
ক্যালিফোর্নিয়া
পশ্চিমী
টেক্সাস
হিউস্টন দুর্গাবাড়ি
মাতৃবন্দনায় বিশ্ববাসী


অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.